৬৮ কোটি টাকার মধ্যে ৩৭ কোটিই আত্মসাৎ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৩৭ এএম, ৬ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০১:৩৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ৭ প্রকল্পে বরাদ্দের ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ৩৭ কোটি ৭ লাখই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর পরিমাণ মোট অর্থের প্রায় ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এই দুর্নীতিতে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগসাজশ আছে। এসব প্রকল্প রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হয়।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে সংস্থাটি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কার্যক্রম অধিকতর ফলপ্রসূ করতে ১০ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে ৭টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে প্রতিটির ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র প্রকটভাবে উঠে এসেছে। জনগণের চাহিদা, সুবিধা ও প্রকল্পের যথার্থতা বাস্তবায়নের উপযোগী স্থান বিবেচনায় না নিয়েই এগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে একদিকে আর্থিক অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে প্রশমন কার্যক্রমের বাস্তব কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল দুর্নীতি এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে। গবেষণার আওতাভুক্ত ৭টি প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ ছিল, তার প্রায় ৫৪ শতাংশই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নীতি ও আইন লঙ্ঘিত হওয়া সত্ত্বেও জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এ ছাড়া বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও দেখা যায়নি। আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এতে অপচয় বাড়ছে এবং প্রশমন কার্যক্রমের কার্যকর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে বলা হয়। এতে উলেখ করা হয়: প্রশমন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, জনঅংশগ্রহণ ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে প্রকল্পের চাহিদা এবং গুরুত্ব দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্পে অর্থায়ন, অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতি লঙ্ঘন করলেও অভিযুক্ত সংস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। একইসঙ্গে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ ও কার্যকর সমন্বয় ব্যবস্থা অনুপস্থিত। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের জুন থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয়। প্রতিবেদনে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানা কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরে সমালোচনা করা হয়।
সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে: অবিলম্বে প্যারিস চুক্তিতে প্রতিশ্রুত অনুদানভিত্তিক প্রশমন অর্থায়ন নিশ্চিতকরণে উন্নত রাষ্ট্রসমূহের ওপর বাংলাদেশের নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ঐক্যবদ্ধ কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ। জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সবুজ জলবায়ু তহবিলসহ আন্তর্জাতিক তহবিলসমূহে অভিগম্যতা অর্জনে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যকর পথনকশা প্রণয়ন; কয়লা ও এলএনজির মতো জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তিতে বিনিয়োগ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা; নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের অযৌক্তিক ব্যয় কমিয়ে সুলভে উৎপাদনে সরকারি প্রকল্পের মতো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকারীদেরও একই ধরনের প্রণোদনা (কর অব্যাহতি এবং ক্যাপাসিটি চার্জমুক্ত) প্রদান; বনায়ন ও বন্যপ্রাণী আবাস সংরক্ষণসহ বন ব্যবস্থাপনায় অগ্রাধিকারমূলক প্রশমন অর্থায়ন নিশ্চিত করা; প্রশমন কার্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহের সুশাসন নিশ্চিতে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণের বিবেচনাসাপেক্ষে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া; তথ্য বোর্ডে আবশ্যকীয় উলিখিত বিষয় সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রণয়নসাপেক্ষে সব প্রকল্প এলাকায় তথ্য বোর্ড স্থাপনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা; প্রকল্প তদারকি, নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং প্রকল্পের সব পর্যায়ে জনঅংশগ্রহণসহ তৃতীয় পক্ষের স্বাধীন তদারকি নিশ্চিত করা; অভিযোগ গ্রহণের জন্য অভিযোগ বাক্স স্থাপন, মোবাইল নম্বর প্রদানসহ প্রকল্প এলাকায় গণশুনানির মাধ্যমে অভিযোগ নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল ব্যবহার নীতিমালা, ২০১২ লঙ্ঘনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধানসহ নীতিমালা সংশোধন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার মো. রাজু আহমদ মাসুম। গবেষণা দলে আরও ছিলেন একই বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম জাকির হোসেন খান। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।