পাচারের টাকায় ট্রান্সকমের সিমিন ও ছেলের বিলাসী ফ্ল্যাট দুবাইয়ের দ্বীপে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৫:০৪ এএম, ১০ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৫
সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলে যারাইফ আয়াত হোসাইন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিজাত শহর দুবাইয়ে ট্রান্সকম গ্রুপের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলে ট্রান্সকম গ্রুপের হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন যারাইফ আয়াত হোসাইনের নামে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি রয়েছে। এছাড়া দেশ থেকে অর্থ পাচার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজাত শহরগুলোতে তাঁরা কিনেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাইয়ের অত্যন্ত পরিচিত ও আভিজাত কৃত্রিম দ্বীপ ‘পাম জুমেইরা’। পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে বিবেচিত ‘পাম জুমেইরা’র সর্বাধুনিক, সমুদ্রতীরবর্তী এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল সড়ক ক্রিসেন্ট রোডের বালকিস রেসিডেন্সে রয়েছে ট্রান্সকমের সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলের অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট। স্থানীয় সূত্র জানায়, তাঁদের এই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য কমপক্ষে ৫০ লাখ ৭০ হাজার দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলের বিদেশে এই বিলাসী সম্পদ কেনার বিষয়ে কোনো তথ্য জানে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু এ তালিকায় নাম নেই ট্রান্সকম গ্রুপ তথা প্রতিষ্ঠানটির সিইও সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলে যারাইফ আয়াত হোসাইনের নাম। সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলের বিদেশে থাকা সম্পদ অবৈধ কিংবা পাচারের টাকায় কেনা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিদেশে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে পারে। এরমধ্যে এয়ারলাইন্স ও তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়াই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লেনদেন করতে পারে। তবে এই দুটি খাতে ট্রান্সকম গ্রুপের কোনো ব্যবসা বা বিনিয়োগ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ী গ্রুপকে বিদেশে অর্থ নিতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। একইসঙ্গে কেউ বিদেশে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি ব্যয় করলে তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয়।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বিদেশে ট্রান্সকম গ্রুপের ব্যবসায়িক কোনো বিনিয়োগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ট্রান্সকম গ্রুপের বা ওই গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলের বিদেশে যে সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিদেশে এই গ্রুপটির বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, এক পঞ্জিকা বর্ষে একজন ব্যক্তি এক বা একাধিকবারে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ভ্রমণ ব্যয় হিসেবে বিদেশে নিতে পারেন। এ ছাড়া চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
ট্রান্সকম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিডিয়া ওয়ার্ল্ডের অধীনে পরিচালিত হয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। ট্রান্সকম গ্রুপের আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টার লিমিটেডের অধীনে পরিচালিত হয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা। সিমিন রহমান ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও। তাঁর বাবা ট্রান্সকমের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর এই গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান সিমিনের দখলে রয়েছে বলে জানা গেছে।