হাসিনার পতনের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজনের পরিচয়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:০৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আর হাসিনা সরকারের পতনের পর পর দেশব্যাপী সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন রাজনীতিক, তাদের পরিবার, বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জনরোষের মুখে পড়ে। তৃণমূল পর্যায়ে কোনো কোনো রাজনীতিক জনরোষে পড়ে উত্তম মাধ্যমও হয়েছেন। সেই উত্তাল সময়, অর্থাৎ ৫ ও ৬ আগস্ট আত্মরক্ষার্থে একা কিংবা পরিবারসহ গিয়ে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
বিশ্বস্ত সূত্রে আশ্রয় নেওয়া রাজনীতিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীতে তারা নিজ উদ্যোগেই আবার সেনানিবাস এলাকা ত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে আবার কয়েকজনকে দেশত্যাগ করার সময় গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া রাজনীতিক, যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- বগুড়া-৬ আসনের সরকারদলীয় এমপি রাগেবুল আহসান রিপু ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্য, বগুড়া-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে। সিলট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মো. আবু জহির, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. একরামুল হক টিটু, মিঠামইন উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফ কামাল, সাবেক এমপি এমএ লতিফ।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মাহাবুব আলম মিরাণ, সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, একজন সাবেক এমপির পিএস সুজন সাত্তার, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, একই করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম রফিউদ্দিন আহমেদ, বাগেরহার-৪ আসনের এমপি হাবিবুন নাহার, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভির হাসান সৈকত, দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ এমপি ইকবালুর রহিস, স্বামীসহ সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ছোটো মনির এমপি, নাজমা আখতার এমপি এবং দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব।
উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সেনানিবাসের ভেতরে প্রাণ রক্ষার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৬২৬ জনকে আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে বিজ্ঞপ্তিতে তাদের বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
আইএসপিআরের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। এ সময় প্রাণনাশের আশঙ্কায় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিবিধ নাগরিকগণ সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
এ প্রেক্ষিতে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জীবন বিপন্ন ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার-পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়।’
সেদিন আইএসপিআর আরও জানিয়েছিল, ‘পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করে। আশ্রয় প্রদানকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত ৪ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বর্তমানে আশ্রয়প্রাপ্ত ৩ জন তাদের পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে।’