হঠাৎ কেন ইউনূসের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান ভূঁইয়া?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৩৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সই করবেন না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া। সোমবার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। এর পরই আলোচনায় আসেন এ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। শুধু তাই নয়, এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছেন তিনি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের মন্তব্য নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বক্তব্য দিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আর অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো পক্ষকে খুশি করার জন্য তিনি এমনটি করেছেন।
সরকারের পক্ষের লোকজন এখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের তীব্র সমালোচনায় মুখর। অন্যদিকে সরকারবিরোধীরা এমরানকে বাহবা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকারের আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরও বাস্তবতা উপলব্ধি করে সঠিক বক্তব্য দিয়েছেন ডিএজি এমরান।
এদিকে ড. ইউনূস ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্যের পর সবার মনে প্রশ্ন-হঠাৎ কেন ইউনূসের পক্ষে অবস্থান? তার আসল পরিচয়ইবা কি? তিনি কেন এমন বক্তব্য দিলেন?
হঠাৎ কেন ইউনূসের পক্ষে অবস্থান?
অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়ার ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায়, তার ফেসবুকের কভারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে।
ফেসবুক ব্যবহার শুরুর পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ-সরকারের উন্নয়নের কথাই তুলে ধরেছেন। কিন্তু হঠাৎ নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। তার অবস্থান পরিবর্তনে হতবাক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সহকর্মীরা।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের তার কয়েকজন সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমরান বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তদবির করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন। কিন্তু পর পর দুই নিয়োগে তিনি বিচারপতি হতে পারেননি। এতে তার মনে ক্ষোভ জন্মেছে। আবার কেউ বলছেন, এমরানের আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকান ভিসা নিশ্চিত করতেই তিনি ড. ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগে গণমাধ্যমকর্মীদের এমরান বলেন, ইসরাইলের অ্যাটর্নি জেনারেল সে দেশে যে আইন সংস্কার হচ্ছে; বিচার সম্পর্কিত, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, এটা আমার নিজস্ব চিন্তা। ড. ইউনূসের পক্ষে যে বিবৃতি দিয়েছেন ১৬০ জন নোবেল বিজয়ী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, আমি ওনাদের বিবৃতির সঙ্গে একমত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি— অধ্যাপক ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হয়রানি বলে মনে করেন এমরান ভূঁইয়া।
কে এই এমরান?
এমরানের পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লায়। বাবা সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। তার মা সুরাইয়া সুলতানা। বাবার চাকরির সুবাদে তারা পরবর্তীতে চট্টগ্রামে স্থায়ী হন।
তার বাবা সুলতান আহম্মদ ভূঁইয়া ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ড. ইউনূস ওই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এমরান ১৯৯২-৯৩ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থী, যারা বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত, তারা জানিয়েছেন— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এমরান ছাত্রলীগ করতেন। আইন পড়া শেষ করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।