গুগল ম্যাপে ধরা পড়ল বাংলাদেশি সেই জাহাজ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:২৯ এএম, ১৮ নভেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৪৫ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নিষিদ্ধ নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে একটি জাহাজের মাস্তুলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তা নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা। রহস্য খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল বাংলাদেশ কেন্দ্রিক এক শিহরণ জাগানো গল্পের সন্ধান।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ থেকে পোলট্রির খাবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়েছিল জাহাজটি। তখন সেখানকার উপজাতিরা জাহাজে আক্রমণ চালায়! সে সময় জাহাজের কর্মীরা পরিস্থিতি জয় করে প্রাণ নিয়ে বাঁচতে পারলেও জাহাজটি আর আনা সম্ভব হয়নি।
মূলত সেই জাহাজের ছবি সম্প্রতি গুগল ম্যাপের ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করেছেন এক ব্যবহারকারী।
জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ২ আগস্ট মধ্যরাতের ঠিক আগে পানামার নিবন্ধিত মালবাহী জলযান ‘প্রাইমরোজ’ বঙ্গোপসাগরের প্রবাল প্রাচীরে আটকে যায়। মাত্র কয়েক গজ দূরেই শুকনো জমি, পরিষ্কার পানি, দূরে ঘন জঙ্গল দেখে আশার পালে হাওয়া লাগে।
এই জায়গাটিতে জাহাজ ডোবার সম্ভাবনা নেই বলে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে উদ্ধারকারীরা সহজে তাদের দেখতে পান। কিছুদিন পর এক তরুণ নাবিক প্রাইমরোজের ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখেন, এক দল মানুষ তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তাদের ধারণা ছিল, শিপিং কোম্পানি হয়তো উদ্ধারে লোক পাঠিয়েছে। এরপর লোকগুলোকে আরও ভালো করে খেয়াল করতে থাকেন।
তারা আকারে ছোট, সুগঠিত, এলোমেলো চুল। দেখতে কালো। পরনে চিকন একটা বেল্ট ছাড়া কিছুই নেই। সবার হাতে বর্শা এবং তীর। তখনই জাহাজের নাবিকেরা ভয় পেয়ে যান।
এ সময় ওয়ারলেস অপারেটর সাহায্য প্রার্থনা করলে বার্তা যায় হংকংয়ের রিজেন্ট শিপিং কোম্পানির অফিসে। প্রাইমরোজের ক্যাপ্টেন দ্রুততম সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র চান। তিন বলেন, হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যেন অস্ত্র দেয়া হয়।
বার্তাটি ছিল এমন, হিংস্র মানুষেরা আসছে, আনুমানিক ৫০ জন। সবার হাতে অস্ত্র। আমাদের মেরে ফেলবে। জীবন হুমকির মুখে।
উপজাতিরা নাবিকদের হামলা করার সময় আবার সেই ঝড় শুরু হয়, যে ঝড়ে জাহাজটি প্রবালে আটকে পড়েছিল। ঝড় এবার নাবিকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। প্রবল বাতাসে উপজাতিরা তীর-ধনুক দিয়ে সুবিধা করতে পারেনি। জাহাজের দিকে ছোঁড়া সব অস্ত্র বাতাসের তোড়ে অন্য দিকে চলে যায়। এভাবে কেটে যায় ২৪ ঘণ্টা। নাবিকেরা ভেতর থেকে কুড়াল, বিভিন্ন ধরনের পাইপ দিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন।
ধীরে ধীরে হংকংয়ের মাধ্যমে এই খবর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ পর ভারতের নৌবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে বিপদগ্রস্ত নাবিকদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ধীরে ধীরে শান্ত হয় দ্বীপটি। কিন্তু পানির বুকে পড়ে থাকে প্রাইমরোজ।
ভৌগোলিক সীমারেখার মানদণ্ডে এই দ্বীপটি মূলত ভারতের। ভারত সরকার শত চেষ্টা করেও দ্বীপে তাদের নাক গলানোর সুযোগ করতে পারেনি। শেষমেশ ভারত বাধ্য হয়েই আইন করে দিয়েছে, ‘লেট দেম লিভ অ্যালোন’। তাই কেউ এখন আর তাদের নির্জনতা, গোপনীয়তা, রহস্যময়তা, স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা ভঙ্গ করার কোনো অধিকার রাখে না। দ্বীপের বাসিন্দারাও সেই অধিকার কাউকেই দিতে চায় না।
তাত্ত্বিকদের মতে, দ্বীপটির বয়স প্রায় ৬০ হাজার বছর। আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার। তারা কী খায়, কী ভাষায় কথা বলে, সেটি এখনো অজানা।