অনুমতি না নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায় সাকিব আল হাসান, বিএসইসির ব্যাখ্যা তলব
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
অনুমতি না নিয়েই স্বর্ণ ব্যবসায় নামায় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের দুই প্রতিষ্ঠান ‘রিলায়েবল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি’ এবং ‘বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি’-এর কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বৈধভাবে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আমদানি ও বিক্রির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলার বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করার কথা ২০২১ সালে জানান সাকিব আল হাসান। আর গত ২২ এপ্রিল বনানীতে নিজের স্বর্ণ ব্যবসার শোরুম উদ্বোধন করেন এ ক্রিকেটার।
স্বর্ণ ব্যবসায় নামলেও সাকিবের প্রতিষ্ঠান কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে অনুমোদন নেয়নি। এ কারণে সম্প্রতি ‘রিলায়েবল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি’ এবং ‘বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে বিএসইসি। সাত কার্যদিবস বা ২৫ মে’র মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্ট সংক্রান্ত বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ২ (সিসিসি) অনুযায়ী, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে নগদ বা অফসেট কমিশনের সঙ্গে যথাযথভাবে নিবন্ধিত।
‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ৮ (৪) অনুযায়ী, সদস্যভুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো সিকিউরিটিজের জন্য ব্রোকার বা ডিলার হিসেবে কাজ করবে না’ উল্লেখ করে চিঠিতে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া বা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য না হয়েও কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির অবস্থান জানতে চেয়েছে কমিশন।
এই চিঠিতে কি কি কমোডিটি পণ্য হিসেবে বিবেচিত তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, বনজ, খনিজ বা এনার্জি দ্রব্যাদি এবং এ জাতীয় পণ্য থেকে তৈরি বা প্রক্রিয়াজাত দ্রব্যাদি। এছাড়া কমিশন কর্তৃক সরকারি গেজেটের মাধ্যমে অবহিত করা যে কোনো পণ্য/দ্রব্যাদি হতে পারে।
অন্যদিকে, ২০২১ সালে এক বিজ্ঞাপন দিয়ে সাকিব জানান, তিনি বৈধভাবে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আমদানি ও বিক্রির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলার বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
ওই বিজ্ঞাপনে সাকিব বলেন, ‘ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অথবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আপনারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে দেশে বৈধভাবে, সঠিকভাবে ওজনের খাঁটি স্বর্ণ আমদানি করতে পারেন অথবা আমদানি করা স্বর্ণ কিনতে পারেন।’
স্বর্ণের ব্যবসাকে হালাল উল্লেখ করে সাকিব বলেন, ‘স্বর্ণ আমদানি হালাল। স্বর্ণে বিনিয়োগও হালাল। দেশের ব্যাংকিং বিনিয়োগে সুদের হার ক্রমশ নিম্নগামী, তাই হালাল ও নিরাপদ বিকল্প হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে নিশ্চিন্তে থাকুন।’
এরপর চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাজধানীর বনানীতে নিজের স্বর্ণ ব্যবসার শোরুম উদ্বোধন করেন সাকিব আল হাসান। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সবাই যাতে চাইলে স্বর্ণ কিনতে পারে, সেই উদ্যোগ নিয়েছে সাকিবের কোম্পানি।
সে জন্য এক গ্রাম থেকে শুরু করে ১০০ গ্রামের স্বর্ণ কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘শেষ ১০০ বছরে অন্য কিছুর দাম কমলেও স্বর্ণের দাম কমেনি। তাই টাকার নিরাপত্তার জন্য স্বর্ণ কিনতে পারে। আবার গিফট দেওয়ার জন্য নিতে পারে।
আমাদের কোম্পানিতে সব মানুষের সাধ্যের মধ্যে স্বর্ণ কিনতে পাওয়া যাবে।’ ক্রিকেটের বাহিরে শেয়ার ব্যবসা, হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবসা, ই-কমার্স, চিংড়ির ঘেরসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে সাকিবের। এ বিষয়ে ২২ এপ্রিলের অনুষ্ঠানে সাকিবকে প্রশ্ন করেন- ক্রিকেটের বাইরে এত ব্যবসা সামলাতে অসুবিধা হয় কি-না?
উত্তরে এ ক্রিকেটার বলেন, ‘আমার হয়তো অনেকগুলো ব্যবসা আছে। কিন্তু আমার প্রথম প্রায়োরিটি ক্রিকেট। ক্রিকেটের বাইরে আমি যে ফ্রি সময় পাই, তখন এসব করি। আর আমার নিজের অফিস বা এসব করা লাগে না। আমি যোগ্য মানুষ দিয়ে সব পরিচালনা করি। বুদ্ধিমানরা তাই করে। আমি বিশ্বাস করি, আমি কিছুটা হলেও বুদ্ধিমান।’
Sharing is caring!