avertisements 2

ছোট ছোট ভুলের বড় খেসারত

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫০ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

১৭১ রান—কিছুদিন আগেই শেষ হওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আর বিশ্বকাপ শুরুর ম্যাচগুলোর ওপর ভরসা রেখে মনে হতেই পারে জয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ইনিংসের অর্ধেকটা পার হতেই মাহমুদ উল্লাহ বুঝে ফেলেন ম্যাচ মুঠো গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। ৭ বল বাকি থাকতে ম্যাচ বেরিয়েও যায় বাংলাদেশ অধিনায়কের চোখের সামনে।

শারজার এ মাঠেই কোয়ালিফায়ারের শেষ ম্যাচে লঙ্কান স্পিনারদের ঘূর্ণিতে মাত্র ৪৪ রানে মূর্চ্ছা গিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও বলের সঙ্গে ম্যাচের ভাগ্যও ঘোরাবেন স্পিনাররা। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। দুই দলের একাদশে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে, শারজার উইকেট ঠিকঠাক অনুমান করতে পেরেছিল শ্রীলঙ্কা। একজন পেসার কমিয়ে স্পিনভারী একাদশ দিয়ে গতকাল নেমেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে অফস্পিনার মহেশ থিকসানা চোট পাওয়ায় তাঁর পরিবর্তে বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার বিনুরা ফার্নান্ডোকে খেলিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৬ ওভার পেসারদের দিয়ে বোলিং করিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে যে রকম মার দিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা, তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় শারজার এই উইকেট এবং একদিকের ছোট বাউন্ডারি স্পিনারদের অনুকূলে নয়। এর মানে টসের আগে একাদশ নির্বাচনেই বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে শ্রীলঙ্কা।

এর পরও বাংলাদেশের বোলিং শক্তি বিবেচনায় রানটা তো কম হয়নি। প্রথম ওভারেই প্রতিপক্ষের বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরাকে তুলে নিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদ। ৪ রানে ১ উইকেট, দারুণ শুরু বলতেই হবে। পরের ওভারে মেহেদী হাসান দেন ৬ রান। তাই পেরেরার বিদায়ে ক্রিজে আসা চারিথ আশালঙ্কার দুই ছক্কায় নাসুমের করা তৃতীয় ওভারে ১৬ রান উঠলেও আতঙ্ক ছড়ায়নি। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান ১৫ রান গুনতেই বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কেমন যেন হতোদ্যম দেখাতে শুরু করে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আল হাসান জোড়া শিকার করতেই আবার গাঝাড়া দিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর আরো কিছু ছোট ভুলে ম্যাচ থেকে দ্রুতই ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।

দুই স্পেলে করা দুই ওভারে ৬ রানে ২ উইকেট নেওয়া সাকিবকে তৃতীয়বার যখন আক্রমণে ডাকেন মাহমুদ, ততক্ষণে ম্যাচ শ্রীলঙ্কার ডাগ আউটের সামনে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আশালঙ্কা ও ভানুকা রাজাপক্ষের জুটি ভাঙার জন্য আরেকটু আগে কি বোলিংয়ে আনা যেত না সাকিবকে? এটা বোধগম্য যে দলের সেরা বোলারকে ডেথ ওভারের জন্য তুলে রাখতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক। কিংবা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সামনে বাঁহাতি স্পিনারকে ভাগ্য পরীক্ষায় ঠেলে না দেওয়ার যে ‘সংস্কৃতি’ চালু আছে বাংলাদেশে, সেটিই অনুসরণ করেছেন মাহমুদ। ঘটনা যা-ই হোক, মরিয়া চেষ্টার অংশ হিসেবে সাকিবের আরেকটি ওভার করিয়ে নিতে পারতেন অধিনায়ক। সাকিবের বোলিং কোটাও পূর্ণ হয়নি এমন ম্যাচে!

সেটি করেননি তিনি। উল্টো নিজেই আসেন বোলিংয়ে। পিঠের চোটের কারণে বিশ্বকাপে গতকালই প্রথম বোলিং করেছেন মাহমুদ। প্রথম ওভারে ৫ রান দিয়ে ব্রেক থ্রুর খোঁজ নেওয়া অধিনায়ক আবার ১৪তম ওভারে আক্রমণে এসে ১৬ রান গুনেছেন। এর এক ওভার আগে আফিফ হোসেনকে দিয়ে ফাটকা খেলতে চেয়েছেন মাহমুদ। ১৫ রান দিয়ে মেলেনি কিছুই।

মিলত ঠিকই, মাহমুদের অধিনায়কত্বেরও ভূয়সী প্রশংসা হতো। কিন্তু আফিফের চতুর্থ বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন রাজাপক্ষে, যা রাখতে পারেননি লিটন দাস। ১৪ রানে ‘জীবন’ পাওয়া এই লঙ্কান আউট হন ৫৩ রান করে। ম্যাচসেরা আশালঙ্কাও সুযোগ দিয়েছিলেন। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ডিপ মিডউইকেটে দেওয়া তাঁর ক্যাচটিও ফেলেন লিটন। ম্যাচের পর এই জোড়া ক্যাচ নিয়েও আক্ষেপ ঝরেছে মাহমুদের কণ্ঠে। এই দুটি ক্যাচ রাখতে পারলে ম্যাচের গতিপথ বদলেও যেতে পারত। অন্তত ১০ ওভার পরই ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার হতাশায় কাঁধ ঝুলে পড়ত না বাংলাদেশের।

এই আরেকটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ দলে, সামান্য চাপেই কেমন খেই হারিয়ে ফেলে। শরীরী ভাষায় সেই ঝাঁজ নেই, টি-টোয়েন্টির দ্রুতগামী ক্রিকেটে যা জরুরি। টিম ম্যানেজমেন্টের কি এই ঘাটতি চোখে পড়ছে না?

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2