ব্যাটে-বলে হতশ্রী বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:১৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশকে মাটিতে নামালো ইংল্যান্ড। প্রথমে বলে, এরপর ব্যাটিংয়ে হতশ্রী পারফরম্যান্সের প্রদর্শনীতে ইংলিশদের কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। লড়াই যা একটু করলেন লিটন কুমার দাস আর মুশফিকুর রহিম।
বিশ্বকাপের সপ্তম ম্যাচে ধারামশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ১৩৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৪ রান তোলে ইংল্যান্ড। জবাবে ৪৮.২ ওভারে ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
এই ম্যাচ থেকে যদি প্রাপ্তির খোঁজ করা হয় তা হয়ত লিটন কুমার দাসের ইনিংসটি। ব্যাট হাতে বাজে সময় কাটানো এই ওপেনারের ব্যাট থেকেই এসেছে সর্বোচ্চ ৭৬ রান। লিটন আউট হওয়ার সাথে সাথেই মূলত জয়ের লুকায়িত স্বপ্নটাও শেষ হয়ে যায়। মুশফিকের ফিফটি আর তাওহিদ হৃদয়ের ৩৯ ইংল্যান্ডের জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছে কেবল।
বাংলাদেশের হারের চিত্রনাট্য অনেকটা লেখা হয়ে যায় মূলত প্রথম ইনিংসেই। ১০৭ বলে ১৬টি চার ও ৫ ছক্কায় ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন দাভিদ মালান। আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো করেন ৫৯ বলে ৮ চারে ৫২ রান। ৬৮ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৮২ রান করেন জো রুট।
একসময় চারশোর্ধো সংগ্রহের পথে ছিল ইংল্যান্ড। ডেথ ওভারে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ৩৯.৩ ওভারে ইংলিশদের রান ছিল ২ উইকেটে ২৯৬। শেষ ১০.৩ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৬৮ রান করতে পারে তারা।
শেষদিকে রাশ টেনে ধরেন শরিফুল ও মেহেদি। গতির বৈচিত্র এনে সফলতার দেখা পান তারা। ৮ ওভারে ৭১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইনিংসের সফলতম বোলার মেহেদি। ১০ ওভারে ৭৫ রানে ৩ উইকেট নেন শরিফুল।
আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়ার পর এবার ইংল্যান্ডের কাছে উড়ে গেল বাংলাদেশ। পাহাড়ঘেঁষা সৌন্দর্যের এ ভেন্যু তাই বাংলাদেশের জন্য হয়ে থাকছে মিশ্র অভিজ্ঞতা হিসেবে। অন্যদিকে আহমেদাবাদে প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে উড়ে যাওয়া ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে।
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে উঠে এলো ইংল্যান্ড। তাদের নেট রান রেটও বেড়ে হয়েছে ০.৫৫৩। বিপরীতে বাংলাদেশে নেমে গেছে ছয়ে। নেট রান রেটও হয়ে গেছে ঋনাত্মক (-০.৬৫৩)। দুই ম্যাচে শতভাগ জয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড।
রান তাড়ায় রিচ টপলি শুরুর স্পেলেই সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যায় বাংলাদেশের। ২৬ রানে তৃতীয় ও ৪৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় দল। বলা যায় ম্যাচ থেকে তখনই ছিটকে যায় সাকিব বাহিনী।
প্রথম ওভারে তিন চারে ১২ রান নেন লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় ওভারে টপলির বলে যথেষ্ঠ পা না নিয়ে খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন তানজিদ হাসান। একই ভুল করে পয়েন্টে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
শুরুর দুই ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলের কাণ্ডারি হতে পারেনি সাকিবও। টপলির বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফেরেন অধিনায়ক। সাকিবের সংগ্রহ ৯ বলে ১ রান। আউট হওয়া প্রথম তিন ব্যাটারের মিলিত সংগ্রহ ২!
ধ্বস সামলানোর আভাস দিয়ে দলীয় সংগ্রহ ফিফটি স্পর্শ করার আগেই সাজঘরে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ক্রিস ওকসের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি।
এরপরই মেলে সবচেয়ে বড় জুটির দেখা। দারুণ সব শেট খেলতে থাকেন লিটন। মুশফিকও উইকেটে সময় নিয়েছেন বেশ। দুজনের জুটি থেকে আসে ৭৫ বলে ৭২ রান। ক্রিস ওকসের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে লিটনের বিদায়ে ভাঙে জুটি। ৬৬ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংসটি সাজান এই ওপেনার।
হৃদয়ের সাথে ৪৩ রানের জুটি গড়ে সোজা ডিপ থার্ড ম্যাচে টপলির চতুর্থ শিকার হন মুশফিক। ৬৪ বলে তার ৫১ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি ৪টি। হৃদয় আউট হন অনিয়মিত বোলার লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে কট বিহাইন্ড। ১৬৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর অপেক্ষা বাড়ান মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা।
বল হাতে বিজয়ী দলের প্রত্যেকেই পান উইকেটের দেখা।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বেয়ারস্টো-মালানের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ১১৬ রান। বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন সাকিব। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৭ বলে ১৫১ রানের জুটি গড়েন মালান ও রুট। মালানকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মেহেদি।
এরপর আর বড় কোনো জুটি পায়নি ইংল্যান্ড। ১০ বলে ২০ রান করা জস বাটলারকে বোল্ড করেন শরিফুল।
নিজের পরের ওভারে টানা দুই বলে উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান শরিফুল। রুটকে কট বিহাইন্ড করার পর লিয়াম লিভিংস্টোনকে বোল্ড করে দেন এই পেসার।
স্যাম কারান ও আদিল রশিদকে ফেরান মেহেদি। দুজনের ক্যাচই নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ ওভারে ক্রিস ওকসে ক্যাচে পরিণত করেন তাসকিন।
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৬৪/৯ (বেয়ারস্টো ৫২, ম্যালান ১৪০, রুট ৮২, জস২০, ব্রুক ২০, লিভিংস্টোন ০, কারান ১১, ওকস ১৪, উড ৬*, রশিদ ১১, টপলি ১*; অতিরিক্ত ৭; মুস্তাফিজ ১০-০-৭০-০, তাসকিন ৬-০-৩৮-১, শরিফুল ১০-০-৭৫-৩, মেহেদি ৮-০-৭১-৪, সাকিব ১০-০-৫২-১, মিরাজ ৬-০-৫৫-০)।
বাংলাদেশ: ৪৮.২ ওভারে ২২৭ (লিটন ৭৬, তানজিদ ১, শান্ত ০, সাকিব ১, মিরাজ ৮, মুশফিক ৫১, হৃদয় ৩৯, মেহেদি ১৪, তাসকিন ১৫, শরিফুল ১২, মুস্তাফিজ ৩; ওকস ৮-০-৪৯-২, টপলি ১০-১-৪৩-৪, কারান ৭.২-০-৪৭-১, উড ১০-০-২৯-১, রশিদ ১০-০-৪২-১, লিভিংস্টোন ৩-০-১৩-১)।