ভারত বধ করেই দেশে ফিরছে বাংলাদেশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৩১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠা হয়নি, তবে একেবারে খালি হাতেও ফিরতে হচ্ছে না বাংলাদেশের। ভারতের মতো দলকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়েই দেশে ফিরবে টাইগাররা। টানটান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর শেষ ওভারে বিজয়ী হাসি বাংলাদেশের।
ভারতের সাথে শেষ ওভারে বহু ম্যাচ গড়িয়েছে বাংলাদেশের। তবে বরাবরই তীরে এসে ডুবেছে তরি। তবে এবারের গল্পটা ভিন্ন। শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণ সামলে দিয়েছে টাইগাররা। ফলে ২৬৬ রান তাড়া করতে নেমে ৪৯.৫ ওভারে ২৫৯ রানেই থেমেছে ভারত। সাকিবরা ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে ৬ রানে।
হাড্ডহাড্ডি লড়াই চললো শেষ ওভার পর্যন্ত। সহজ ছিল না বাংলাদেশের দেয়া ২৬৬ রানের লক্ষ্য। একাধিকবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ভারত, তবে একটা সময় মনে হচ্ছিলো হয়তো ফসকেই যাবে বরাবরের মতো। তবে সব হিসেব পাল্টে যায় ৪৯তম ওভারে, জোড়া উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখেন মোস্তাফিজুর রহমান।
নিজেদের জানান দিতে এমন একটা জয় বড্ড প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। বিশেষ করে ব্যর্থ এশিয়া মিশন থেকে একটুখানি সান্ত্বনা পেতে। এই জয় যদিও এই আসরে আর ভাগ্যের হেরফের করবে না, তবে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে নিঃসন্দেহে।
শুরুটা হয় তানজিম সাকিবের হাত ধরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের দ্বিতীয় বলেই পেয়েছেন উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফেরান ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের অধিকারী রোহিত শর্মাকে। কোনো রানই করতে দেননি তাকে। পরের ওভারে এসে তিলক শর্মাকে যেভাবে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেছেন তানজিম, তা চোখে লেগে থাকবে অনেক দিন। ৯ বলে ৫ রান করেন তিলক।
১৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে হাল ধরেন গিল। পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়েন দুজনে। জুটি ভাঙে শেখ মেহেদীর শিকার হয়ে রাহুল ফিরলে। ৩৯ বলে ১৯ রান করেন রাহুল। ৯৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর সূর্য কুমারকে নিয়ে ইনিংস টেনে নেল গিল। হাত খুলতে শুরু করেছিলেন সূর্য। তবে ইনিংস বড় করতে দেননি সাকিব, ফিরিয়েছেন ৩৪ বলে ২৬ রানে।
এদিকে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা গিল দেখেছেন অপরপ্রান্তে বাকিদের আসা-যাওয়া। তবে থেমে যাননি তিনি, একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলে যান। তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। শতক ছুঁয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিলেন, তবে শেখ শেষ পর্যন্ত মেহেদী আটকে দিতে সমর্থ হন তাকে। তবে ততক্ষণে ১৩৩ বলে করে ফেলেন ১২১ রান।
৪৩.৪ ওভারে ২০৯ রানে ৭ উইকেট হারায় ভারত। তবে গিলকে সঙ্গ দিতে থাকা অক্ষর প্যাটেল জ্বলে উঠেন এরপর। ৩৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচটা প্রায় ফসকে নিচ্ছিলেন তিনি। তবে ৪৯তম ওভারে মোস্তাফিজ তাকে ফেরালে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৫ ওভারে অলআউট করে দেয় ভারতকে।
বাংলাদেশের হয়ে তিনটি উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুটো করে উইকেট যায় তানজিম সাকিব ও শেখ মেহেদীর ঝুলিতে। একটি করে নেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী মিরাজ।
এর আগে আর প্রেমাদাসায় টসে হেরে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। এইদিন ৫ পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজান সাকিব। তবে এদিন আরো একবার এলোমেলো হয়ে যায় টপ অর্ডার। ২৮ রানে ও ৫৯ রানে হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন সাকিব-হৃদয় জুটি। এরপর নাসুমের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ভর করে আড়াইশো রানের গণ্ডি পেরোয় বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হারিয়ে করে ২৬৫ রান
অবশ্য প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্নবিশ্বাসী শুরু করেন জুনিয়র তামিম। তবে ৩.১ ওভারেই ফিরেন দুই ওপেনার। মাত্র ১৩ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন লিটন দাস, ভালো শুরুর আশা দেখিয়েও তানজিদ তামিম ফেরেন ১২ বলে ১৩ রানে।
দ্রুত ফেরেন এনামুল হক বিজয়ও। প্রায় ৮ মাস পর দলে প্রত্যাবর্তন ঘটলেও ভালো করতে পারেননি তিনি। ফেরেন ১১ বলে ৪ করে৷ চেষ্টা করেও টিকে থাকতে পারেননি মেহেদী মিরাজ, এই অলরাউন্ডার ২৮ বলে ১৩ রানে আউট হন। ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে খানিকটা স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেই পথ দেখান সাকিব। তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে তোলার চেষ্টায় মন দেন তিনি। ধুঁকতে থাকা দলটাকে টেনে তুলন দুজনে। ১১৫ বলে যোগ করেন ১০১ রান।
তবে জুটি আর বড় হয়নি। রান বাড়াতে গিয়ে ৩৩.১ ওভারে ফিরেছেন শতক বিসর্জন দিয়ে। আউট হবার আগে খেলেন ৮৫ বলে ৮০ রানের ইনিংস। আসরের দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারে যা সাকিবের ৫৫তম অর্ধশতক। পরে ফিফটি তুলে নেন হৃদয়ও, তবে ইনিংসটা বড় করতে পারেননি তিনি৷ ফেরেন ৮১ বলে ৫৪ রানে।
পরের গল্পটা শুধুই নাসুম আহমেদের। আটে নামা এই স্পিনার এইদিন জ্বলে উঠেন ব্যাট হাতে। প্রথমে তাওহীদ হৃদয় ও পরে পার্শ্বনায়ক বানিয়ে দেন শেখ মেহেদীকে। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন, তবে তা আর হয়নি। ৪৮তম ওভারে ফেরেন ৪৫ বলে ৪৪ রান করে।
প্রথম সারির স্বীকৃত পাঁচ ব্যাটসম্যানের মোট রান যেখানে ৩১, সেখানে নাসুমের ৪৪ দলের জন্য আশীর্বাদ বটে। তাছাড়া শেখ মেহেদী ২৩ বলে ২৯ ও তানজিম সাকিব অপরাজিত থাকেন ৮ বলে ১৪ রানে। লোয়ার অর্ডারের এমন ধারাবাহিকতায় ২৬৫ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা।