avertisements 2

টাকা নয়, রান বাড়াতে চেয়েছি

‘কখনোই কোনো অর্জন উদযাপন করিনি’: শচীন টেন্ডুলকার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৩২ পিএম, ৫ মে,রবিবার,২০২৪

Text

২২ গজের ক্রিকেটের এক বড় নাম শচীন টেন্ডুলকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রয়েছে সর্বোচ্চ ম্যাচে অর্ধশত রান করার রেকর্ড। এবার তিনি নিজের জীবনেরও অর্ধশত রান ছুঁলেন। গতকাল ২৪ এপ্রিল ক্রিকেটের এই মাস্টার ব্লাস্টারের ৫০তম জন্মদিন ছিল। এদিন রাত থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে গোটা বিশ্বের মানুষ জানিয়েছে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এছাড়া  বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার (আইসিসি) তরফ থেকেও টুইট করে শচীন টেন্ডুলকারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। আইসিসির সেই টুইটে শচীনের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবির কোলাজ করে একটি পোস্ট করেছে। ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘শচীন টেন্ডুলকারের আরো একটা হাফ সেঞ্চুরি। বছরের পর বছর ধরে ক্রিকেটের কিংবদন্তি।’


এদিকে নিজের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভারতের একটি গণমাধ্যম স্পোর্ট স্টারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই লিটল মাস্টার। এ সময় তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। জানান, তার ক্যারিয়ারের কোনো অর্জন নিয়েই কখনো উদযাপন করেননি শচীন। এছাড়া ক্রিকেটের মাধ্যমে টাকা উপার্জনের থেকে বেশি তার পরিবারের আগ্রহ থাকত মাঠে শচীন কত রান করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার আগে ব্যাট হাতে সেই স্কুলজীবন থেকেই নজর কেড়েছিলেন ভারতের ‘ব্যাটিং দেবতা’ শচীন। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। সেই সময়কার অনুভূতি জানাতে গিয়ে সাক্ষাৎকারে শচীন বলেন, ‘কাকতালীয়ভাবে, সময়টাই ছিল অমন। ঐ সময়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন আসছিল। সবকিছু ভিন্ন দেখাচ্ছিল। মাঠের ভেতরে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন লক্ষ করেছি, তা ছিল ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। সেই থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে সবকিছু নাটকীয়ভাবে বদলাতে শুরু করল। জাতি হিসেবেও আমরা বদলে যাচ্ছিলাম। চারপাশে এত কিছু চলছিল! এমনকি আমার জন্যও সবকিছু বদলে যাচ্ছিল। স্পনসরশিপ এবং আরো অনেক কিছু ছিল, আমি সম্ভবত প্রথম (ভারতীয়) ক্রিকেটার, চুক্তি স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে যে ক্রীড়াবিদের ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছিলেন একজন এজেন্ট। এর আগ পর্যন্ত এজেন্টের ধারণাই ছিল না ভারতে।’

শচীন আরো বলেন, কয়েকটি জায়গা থেকে তখন এমন বলাবলি হচ্ছিল যে, আমার মনোযোগ এখন অর্থের দিকে বা এমন অনেক কিছু। কিন্তু আদতে ব্যাপারটি ছিল উলটো। টেবিলে বসে চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি করতে চাইছিলাম না আমি, কারণ এটা তো আমার কাজ নয়। এই কাজে শক্তি ও সময় খরচ করতে চাইছিলাম না। স্কোর বোর্ডের ডান দিকে সংখ্যাটি ও দলের জয় থেকেই কেবল রাতে শান্তির ঘুম দিতে পারতাম। রানের সংখ্যার চেয়ে ব্যাংক ব্যালান্স কখনোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমার পরিবারের সদস্যরা সব সময় জানতে চাইত, আমি কত রান করেছি। কতগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, তা নয়। আমি তাই শুধু খেলাতেই মনোযোগ দিতে চেয়েছি।’

নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন করেছেন শচীন। তবে কোনো অর্জনের পরই নিজেকে বিশেষ কিছু ভাবতেন না তিনি। এছাড়া সেগুলো নিয়ে কোনো উদ্যাপনও করতেন না জানিয়ে লিটল মাস্টার বলেন, ‘পুরস্কার-স্বীকৃতি—এসবে প্রতিফলন পড়েছে আমার মাঠের পারফরম্যান্সের। কিন্তু এটি আমাকে বাজে ব্যবহার করার বা যা ইচ্ছা করার অধিকার দিয়ে দেয়নি। কারণ দিন শেষে আমাকে পরিবারে ফিরতে হবে এবং সবার মুখোমুখি হতে হবে। আমার বাবা-মা, আমার দুই ভাই ও বোন আমাকে যেভাবে গড়ে তুলেছেন, সেটির প্রতিফলন পড়েছে এখানে। আমার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়, স্ত্রী অঞ্জলি, তার বাবা-মা, আমার সন্তানেরা ও আমার পিসি-মাসি, সবাই বড় ভূমিকা রেখেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কখনোই আমার কোনো অর্জনকে উদযাপন করিনি। সবাই খুব খুশি হয়েছে, প্রেরণা জুগিয়েছে, যা করতে চেয়েছি, পাশে থকেছে। তবে কখনোই বড় উদযাপন বা পার্টি হয়নি। আমরা স্রেফ বলেছি, ‘ভালো একটি মুহূর্ত, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা’, মিষ্টিমুখ করেছি, এরপর সামনে এগিয়েছি। বাড়িতে সব সময়ই একটি মন্ত্র আমরা অনুসরণ করেছি, ‘গোটা বিশ্ব গত ম্যাচটি নিয়ে কথা বলুক, আমরা ভাবব পরের ম্যাচ নিয়ে।’ স্কুলজীবন থেকেই এটা ছিল মন্ত্র। বেড়ে ওঠার শিক্ষাই আমাকে মাটিতে পা রাখতে সহায়তা করেছে। বাড়ির মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সময় আমার কাছে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যেত। মাঠে কী হয়েছে, সেটির মূল্য আর নেই তখন।’

এক পর্যায়ে আগের থেকে বর্তমানে ক্রিকেট কঠিন হয়ে গেছে উল্লেখ করে শচীন বলেন, ‘আমরা বারবার নিয়ম বদল করছি বলেই সব কিছু কঠিন হয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটে। আমাদের একটা নির্দিষ্ট নিয়ম ধরেই থাকা উচিত। যদি সেই নিয়ম ঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে জটিলতা তৈরি হবে না। একটা কথা মনে রাখা উচিত, ক্রিকেটের তিনটি ভিন্ন সংস্করণ। দুনিয়াতে খুব কম খেলাই আছে, যেটি তিন ভাবে খেলা হয়। আমি সত্যিই বুঝতে পারি না, ক্রিকেটের আইন যারা তৈরি করেন, তারা আসলে কী ভাবেন।’

উল্লেখ্য, ‘১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) মহারাষ্ট্রে বিখ্যাত টেন্ডুলকার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ‘আধুনিক ক্রিকেটের ডন’। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত খেলেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২০০ টেস্ট ও ৪৬৩টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ (ওডিআই) রয়েছে তার ঝুলিতে। ২৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছেন টি-টোয়েন্টিও। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেছেন। এছাড়া ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৩০ হাজারের বেশি রান এবং দুই শতাধিক উইকেট রয়েছে তার ঝুলিতে। টেস্টে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৯২১ রান, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ রান, সর্বোচ্চ ২০০ টেস্ট ও ৪৬৩ ওয়ানডে ম্যাচের রেকর্ড, টেস্টে সর্বোচ্চ ৫১ সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরি, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৩৫৭ রান—শচীনের এই রেকর্ডগুলো অমর হয়ে থাকবে বলে মত ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2