ঝাড়ুদার থেকে কলকাতার রূপকথার নায়ক , রিঙ্কুর সংগ্রামী জীবনের গল্প
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ এপ্রিল,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:৫৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
শাহরুখ খানের সঙ্গে রিঙ্কু সিংহ। ছবি : সংগৃহীত
টি–টোয়েন্টিতে এতদিন যা কেউ দেখেনি, সেটিই করে দেখালেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের রিংকু সিং। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে কলকাতাকে ৩ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন। কমেন্ট্রিবক্সে ক্যারিবীয় ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ থাকলে নিশ্চিত বলতেন, রিংকু সিং-রিমেম্বার দ্য নেইম। তবে কলকাতার সমর্থক তো বটেই ক্রিকেট ফ্যানদের হৃদয়েই যে গেঁথে গেল নামটা।
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই ছিল তার। তবে অভাবের সংসারে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখাও যে বিলাসিতা। রিঙ্কু সিংহ তবুও স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন সত্যি করার যাবতীয় চেষ্টাও করেছেন। সোনার তো দূর, একটা লোহার চামচ মুখে নিয়েও তিনি জন্মাননি। তবে নিজেকে সোনার থেকে দামি করে গড়ে তুলেছেন রিঙ্কু সিংহ। এখন কেকেআরের এই ক্রিকেটারের নাম সমর্থকদের মুখে মুখে।
রিঙ্কুর বাবা খানচাঁদ সিংহ গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। লখনৌয়ের দুটি ঘরে চার ভাই-বোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে থাকতেন রিঙ্কু। দু’বেলা ঠিক মতো খাবার জুটত না। রিঙ্কুর বড়ভাই ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখা ছোট ভাইকে এক জায়গায় ঝাড়ুদারের কাজে ঢুকিয়ে দেন। লজ্জায় সেই চাকরি করতে পারেননি রিঙ্কু। রিঙ্কু যদিও দমে যাননি। তিনি ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যান উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে। লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন তাঁর রাজ্যের হয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবির্ভাব ২০১৬ সালে।
রিঙ্কু সিংহকে কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রথম কিনেছিল ২০১৮ সালে। সেই সময় তাঁর নাম ভারতীয় ক্রিকেটে কত জন শুনেছে সেটাই ছিল সন্দেহের। এমন একজন ক্রিকেটারের ওপর টাকা ঢালা কি কেকেআরের উচিত হয়েছে? সেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলল গতকাল রোববার (৯ এপ্রিলের) ম্যাচে। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে পাঁচ ছক্কা মেরে হারা ম্যাচ জেতালেন রিঙ্কু সিংহ।
একটা সময় কেকেআরের প্রথম একাদশে দেখা যেত না রিঙ্কুকে। কিন্তু তিনি বার বার আলোচনায় উঠে আসতেন তাঁর ফিল্ডিংয়ের জন্য। কেকেআরে যোগ দেওয়ার পরের কয়েক বছর একাধিক ম্যাচে ফিল্ডিং করেছেন রিঙ্কু। দুর্দান্ত সব ক্যাচ নিয়েছেন। নজর কেড়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ প্রায় খেলেননি বললেই চলে।
আসলে কোটিপতি লিগে তাঁর সমসাময়িক ক্রিকেটাররা যখন অধিনায়ক হয়ে গিয়েছেন, রিঙ্কু শুধু ফিল্ডিং করেছেন। চেষ্টা করেন রিঙ্কু। লড়াই করার চেষ্টা। নিজের জীবন থেকেই সেই রসদ পেয়েছেন। যে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে উঠে এসেছেন, ক্রিকেট মাঠে সেটারই প্রতিফলন দেখা যায়।
শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান দলকে জেতানোর। তিনি পেরেছেন। শেষ পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মারলে জিততে পারত কলকাতা। এমন অবস্থায় পাঁচটি ছক্কাই মারলেন রিঙ্কু। জেতালেন দলকে। কেকেআর যে এত বছর ধরে তাঁর ওপর বিশ্বাস রেখেছে, সেটার ফল পাচ্ছে। তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখার মর্যাদা দিচ্ছেন রিঙ্কু। পরিশ্রম কখনও বৃথা যায়না রিঙ্কু যেন তারই জলন্ত প্রমাণ।