আলিম দার ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে সফল আম্পায়ার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ এপ্রিল,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৩৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সময় কত কিছুই না ভুলিয়ে দেয়। সেদিন মেলবোর্নে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত শুধু স্বপ্ন নয়, বিশ্বাসও যেন ভেঙে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ২০১৫ বিশ্বকাপের সেই মার্চে প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল দেশ, বিশ্বক্রিকেট দেখেছিল এক বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশকে। ক্যাচ তুলেছিলেন রোহিত শর্মা, লেগ আম্পায়ার আলিম দার বল কাঁধের ওপরে উঠেছে বলে ‘নো’ ডেকেছিলেন।
তার পর কি কখনও মনে হয়েছিল, এই আলিম দারকেই ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানাবে বিসিবি। সাকিব, মুশফিক, তামিমরাই গার্ড অব অনার দেবেন পাকিস্তানি এই আম্পায়ারকে। অথচ আইসিসি এলিট প্যানেলে থেকে শেষ টেস্ট পরিচালনা করার পর সেই আলিম দারকে তাঁর যোগ্য সম্মানটাই দিয়েছে বাংলাদেশ। আর এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সৌন্দর্যের অন্যতম একটা দিক। অতিথিদের অসম্মান কখনও করে না বাংলাদেশ।
বছর পঞ্চান্নর আলিম দার এর পরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করবেন। কিন্তু সেটা পাকিস্তানের মাটিতে। বাংলাদেশেও হয়তো আসবেন কখনও, কিন্তু আম্পায়ারিংয়ে আর নন। তাঁর ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ জড়িয়ে থাকবে শুরু আর শেষ দিয়েই। ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট পরিচালনা করেছিলেন বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের মধ্যে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফতুল্লা মিলিয়ে এ দেশে মোট ১৪টি টেস্টে আম্পায়ারিং করেছেন আলিম দার। অনেক অনেক স্মৃতি তাঁর জড়িয়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে। একসময় নিজে লেগ স্পিনার ছিলেন। একবার মাশরাফির কাছে আক্ষেপও করেছিলেন বাংলাদেশ স্কোয়াডে লেগ স্পিনার না দেখে। সেই আলিম দার ২০১৫ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ভীষণভাবে বিতর্কিত হয়ে যান। আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে আলিম দার আম্পায়ারিংয়ে থাকলেই সন্দেহ করতেন অনেকে।
এমনকি নিজ দেশেও অনেক বিতর্কিত ছিলেন তিনি। ২০২০ সালে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড টেস্টেও তাঁর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে তোলপাড় হয়। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও খানিকটা বিরক্ত ছিলেন সব কিছু নিয়ে। তাই তাঁর জায়গায় আহসান রাজাকে আইসিসির এলিট আম্পায়ারিংয়ে নাম দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় স্পোর্টস ওয়েবসাইট স্কোর লাইনের একটি প্রতিবেদনে আলিম দার বলেছিলেন– জীবনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি, আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে এসে। বিশ্ববিদ্যালয় দলে ওয়াসিম আকরাম, আকিব জাভেদ, আমির সোহেলদের সঙ্গে খেলতেন। স্বপ্ন ছিল টেস্ট ক্রিকেটার হবেন, কিন্তু নিজেই একসময় বুঝতে পারেন সেই সম্ভাবনা নেই।
তাই নব্বই দশকের শুরুতে উন্নত জীবনের খোঁজে আমেরিকায় গিয়ে ট্যাক্সি চালাতেন আলিম দার। সে সময় পিসিবি ঘরোয়া লিগের জন্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের খুঁজছিল আম্পায়ারিংয়ে নামানোর জন্য। তখন আলিম দারের এক সাবেক কোচ তাঁকে ফোন করে সেই খবরটি দিয়ে দেশে নিয়ে আসেন। এর পর মাত্র ১৫টি ম্যাচ পরিচালনা করেই আইসিসির গুড বুকে নাম উঠে যায় আলিম দারের। এখন পর্যন্ত টেস্ট, ওয়ানডে আর টি২০ মিলিয়ে ৪৩৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন আলিম দার। ৩৩১ ম্যাচে আম্পায়ারিং করে এই তালিকায় দ্বিতীয়তে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রুডি কোয়ের্তজেন। বিশ্বক্রিকেটের এমন অভিজ্ঞ আম্পায়ারকে তাই গার্ড অব অনার দেওয়া যেতেই পারে।
‘তিনি বড় মনের মানুষ’
আইসিসি এলিট প্যানেল থেকে অবসর নেওয়া আম্পায়ার আলিম দারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের। ‘তিনি একজন বড় মনের মানুষ। এত বড় আম্পায়ার হয়েও ছিলেন নিরহংকার। তাঁর রেকর্ড হয়তো আগামী ১০০ বছরও অক্ষত থাকবে।’
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে টেস্ট আম্পায়ারিং শেষ করেন এ পাকিস্তানি। মাঠে আলিম দারের সঙ্গী ছিলেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। আলিম দারের অবসরে আরেক পাকিস্তানি হাসান রাজাকে ইমার্জিং থেকে এলিট আম্পায়ার করা হয়েছে। তিনিও ছিলেন বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টেস্টে।