করোনার হট স্পট খুলনা, পরিস্থিতি ভয়াবহ
করোনার হট স্পট খুলনা, পরিস্থিতি ভয়াবহ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৪ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের হট স্পট খুলনা। সেখানে মৃত মানুষের মতো বাড়ছে খালি অক্সিজেন সিলিন্ডারের স্তূপ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না খুলনার হাসপাতালগুলো, না পারছেন মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়রা। খুলনায় করোনার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ
করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করা হচ্ছে। এতে খুলনার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে।
কিন্তু খুলনার হাসপাতালগুলো সামলে উঠতে পারছে না। একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খালি সিলিন্ডারের স্তূপে হেলান দিয়ে কাঁদছিলেন মোহাম্মদ সিদ্দিক। ফোনে তিনি আত্মীয়দের বলছিলেন, তার ৫০ বছর বয়সী ভাই মারা গেছেন। ৪২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সিদ্দিক তার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এএফপিকে বলেছেন, হাসপাতালে কোনো বেড বা অক্সিজেন পাননি। সিদ্দিক বলেন, হাসপাতালের করিডোরে অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করতে করতে তার ভাই মারা গেছেন। হাসপাতালের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ভাইয়ের সময় শেষ হয়ে আসার আগে পর্যন্ত তারা তাকে অক্সিজেন দেয়নি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে সীমান্তে যুক্ত। এখানে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য ওপাড়ের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত করা হয় ভারতে। সরকারি হিসেব মতে, বৃহস্পতিবার খুলনা শহরে করোনায় মারা গেছেন ৪৬ জন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের সময় এই শহরে মৃতের সংখ্যা কখনোই দুই অঙ্ক স্পর্শ করেনি। খুলনা শহরের জনসংখ্যা ৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। তাদের অনেকে বলছেন, মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, রিপোর্ট অনুযায়ী কবরস্থানগুলো মৃত ব্যক্তিদের দাফন সম্পন্ন করে সারতে পারছে না। এমন অবস্থা হয়েছে পাশের জেলা সাতক্ষীরায়।
খুলনা শহরে যে ৪টি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তার একটি রাষ্ট্র পরিচালিত খুলনা জেনারেল হাসপাতাল। সেখানে আছে ৪০০ বেড। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি। খুলনা অঞ্চলের প্রধান চিকিৎসক নিয়াজ মুহাম্মদ বলেছেন, হাসপাতালে মারাত্মক চাপ পড়েছে রোগী ভর্তিতে। সেটাই সামাল দিতে হচ্ছে। তবে অক্সিজেন সংকটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
কিন্তু আরেক রোগীর শোকার্ত আত্মীয়ও অভিযোগ করেছেন, তার ভাইও অক্সিজেন সংকটের কারণে মারা গেছেন। আফরোজা নামের এই আত্মীয় হাসপাতালের ওয়ার্ডে অব্যাহত কেঁদে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, যদি আমার ভাইকে সামান্য অক্সিজেন দেয়া হতো, তাহলে সে বেঁচে থাকতো।
এএফপি আরো লিখেছে, লকডাউন কার্যকর করতে বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশজুড়ে সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও সেনারা। ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন কয়েক শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে গত মাস থেকে খুলনায় চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই শহরের কারখানাগুলো এখনো খোলা। অনেক মানুষ বলেছেন, তাদেরকে কাজে যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেছেন, বাস না থাকায় তাকে একটি কারখানায় পার্টটাইম কাজে ৭ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। তার ভাষায়, বেশিরভাগ দোকানপাট এবং পরিবহন বন্ধ। খুলনার পরিস্থিতি গুরুতর। তাই আমাদেরকে এটা মানতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। পরিস্থিতি খুবই করুণ।
খুলনার একটি কবরস্থানে কাজ করেন মোহাম্মদ বাবু। তিনি বলেছেন, তার ৩২ বছরের দায়িত্বে কখনো কবর খুঁড়তে এতো ব্যস্ত থাকতে হয়নি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বছর লাশ দাফন অনেক বেড়েছে। ওদিকে করোনা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জনগণের মাস্ক পরায় অনীহা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখাকে দায়ী করেন। খুলনার মূল করোনাভাইরাস হাসপাতালের মুখপাত্র সুহাস হালদার বলেন, জনগণ আইসোলেট থাকার বিষয় পরোয়া করে না। এতে সংক্রমণ বেশি ঘটছে।