‘আজ চ্যাম্পিয়ন, আজই বাড়িতে খাবার নেই’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৪২ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ব্যাডমিন্টনে জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাবেয়া খাতুন। অথচ তার ঘরে অভাব আর অভাব। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনই ছিল না তার ঘরে খাবার। কারণ, কিশোরী রাবেয়া খেলায় চ্যাম্পিয়ন হলেও তার ভ্যানচালক বাবা জীবনযুদ্ধে পরাজিত। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সপ্তাহখানেক ধরে কর্মহীন তিনি। ঘরের খাবার ও হাতে থাকা টাকা শেষ হয়ে গেছে। রাতে বাড়িতে চুলা জ্বলেনি।
এই খবর পৌঁছে যায় ইউএনওর কানে। সঙ্গে সঙ্গে রাবেয়াকে ডেকে নিয়ে পৌরবাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কেনেন তিনি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছুটে যান রাবেয়ার বাড়িতে। কুমারখালী উপজেলায় গতকাল রোববার এ ঘটনা ঘটে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভাগীয় কমিশনার ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও হ্যান্ডবল (শীতকালীন) প্রতিযোগিতা ২০২৩-এর ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন হয় রাবেয়া খাতুন (১৪)। গতকাল রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া মোহিনী মোহন বিদ্যাপীঠ মাঠে ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
দুঃখ করে রাবেয়া খাতুন বলে, 'আজ (রোববার) চ্যাম্পিয়ন হলাম, আর আজই বাড়িতে খাবার নেই। আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৭টি খেলায় পুরস্কার ও সনদ পেয়েছি। রাখার জায়গা নেই। সেগুলো ভাঙা ঘরের বেড়ায় রেখে দিয়েছি। সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে আমিও একদিন হতে পারি সেরাদের সেরা। বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে দেশসেরা খেলোয়াড় হতে চাই। কিন্তু বাবার সেই রকম সামর্থ্য নেই।'
রাবেয়া কুমারখালী পৌরসভার খয়েরচারা গ্রামের মামুন হোসেনের মেয়ে। সে তেবাড়িয়া শেরকান্দি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাবেয়া। আগামী ২৭ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে যাবে এই প্রতিযোগী।
এর আগে দারিদ্র্যকে পেছনে ঠেলে শীতকালীন জাতীয় শিশু পুরস্কার ২০২২-এ আন্তঃস্কুল ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় সারাদেশে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে রাবেয়া।
জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই রাবেয়া ফুটবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, উচ্চ লাফ, ব্যাডমিন্টন ও ক্রিকেটে সমান পারদর্শী। আর্থিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এরই মধ্যে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে রাবেয়া। ৫০তম আন্তঃস্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির উদ্যোগে গোলাপ অঞ্চলের (খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উচ্চ লাফে প্রথম হয়েছে সে। এই যে এত এত পুরস্কার তার ঘরে, তবু অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না।
রাবেয়ার বাবা মামুন হোসেনের ভাষ্য, অন্যের ভ্যান ভাড়ায় চালান তিনি। মা-বাবা, স্ত্রী, তিন সন্তানসহ সাতজনের সংসার তাঁর। সপ্তাহখানেক হলো শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁর উপার্জন বন্ধ। ঘরের খাবার ও টাকা শেষ। এ অবস্থায় চাল-ডাল, তেল, শাকসবজি, মাংস ও মিষ্টি দিয়ে গেছেন ইউএনও। তিনি জানান, তাঁর মেয়ে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন খেলায় পারদর্শী। সবার সহযোগিতা পেলে একদিন বড় খেলোয়াড় হবে রাবেয়া।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডলের দাবি, ভবিষ্যতে সেরাদের সেরা হওয়ার জন্য রাবেয়াকে নিয়ে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।