ভারত-কানাডা সম্পর্কে উত্তেজনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:২২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
খালিস্তানি তৎপরতা এবং একজন শিখ নেতার হত্যাকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ বছরের জুনে কানাডায় আততায়ীর গুলিতে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের মৃত্যু হয়। সোমবার কানাডা এই হত্যায় ভারত জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে। এদিন ভারতীয় একজন কূটনীতিককে কানাডা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ভারত বহিষ্কার করেছে দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার এক কূটনীতিককে। পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে।
কানাডায় বসবাসকারী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর। সবসময় তিনি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। ভারতের অভিযোগ, লক্ষ্য অর্জনে তিনি ভারতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী হামলাও চালিয়েছেন। যদিও হরদীপ সবসময় সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত জুনে কানাডায় ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারে এক গুরুদ্বারের কাছে তিনি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে হরদীপ কানাডায় গিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে। দিল্লির অভিযোগ, হরদীপ ছিলেন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘খালিস্তানি টাইগার ফোর্স’ ও ভারতে নিষিদ্ধ ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর কানাডা শাখার নেতা। ভারতের চোখে তিনি অপরাধী ও ‘ফেরারি’। তাকে দেশে ফেরাতে আগ্রহী ছিল ভারত।
সবচেয়ে বেশি শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ থাকা দেশের মধ্যে ভারতের পরেই কানাডার অবস্থান। সে কারণেই কানাডার রাজনীতিতে শিখ সম্প্রদায়ের প্রভাব যথেষ্ট। ভারত বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, শিখদের মধ্যে খালিস্তানিদের প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার দল কঠোর নন। এবার ভারতের বিরুদ্ধে হরদীপ হত্যার পাল্টা অভিযোগ এনে পরিস্থিতিকে আরও উসকে দিলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।
সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেন, হরদীপ সিংকে খুনের পেছনে ভারতের হাত থাকার নির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে তার সরকারের কাছে। ট্রুডোর দাবি, সেই প্রমাণ যথেষ্ট বিশ্বাস যোগ্যও। কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশের অভ্যন্তরে এক নাগরিককে এভাবে হত্যা আর এতে বিদেশিদের এমন প্রত্যক্ষ যোগসাজশ কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
ট্রুডোর অভিযোগের পরই ভারতীয় বকে কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি। তবে সেই কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে মেলানিয়া জোলি জানিয়েছেন, যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং’-এর (র) প্রধান ছিলেন। মঙ্গলবার সবাই কানাডার এই পদক্ষেপের কথা জানাজানি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে কানাডার সব অভিযোগকে ‘অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে। ভারতে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ক্যামেরুন ম্যাককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রুডোর অভিযোগ কেবল অসত্যই নয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর। কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথাও হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেয়া হয়। পরে ভারতীয় মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, অপ্রমাণিত অভিযোগের মূল লক্ষ্য খালিস্তানি চরমপন্থি ও সন্ত্রাসবাদীদের দিক থেকে চোখ ফেরানো। এই জঙ্গিদের কানাডা আশ্রয় দিয়েছে। তারা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। অথচ কানাডা সরকার নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।
ভারত-কানাডা সম্পর্ক যে মোটেই স্বাভাবিক নয়, তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসরে। কানাডা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগ্রহ দেখালেও ভারত রাজি হয়নি। মোদি ও ট্রুডো সম্মেলনের অবসরে সামান্য কিছু সময়ের জন্য কথা বলেছিলেন। সেখানেও খালিস্তানিদের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর অভিযোগে ট্রুডোকে বিদ্ধ করেছিলেন মোদি। সেই বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেছিলেন, কানাডায় সবার চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে।