দি ওয়ারস অব রোজেস এবং রাজা ৮ম হেনরি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০২:৪২ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
১৩৭৭ সনে রাজা ৩য় এডোয়ার্ডের মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের শাসন ক্ষমতার দখল নিয়ে রাজ পরিবেরর সদস্যদের মধ্যে কলহের সূত্রপাত হয়; তারই পরিনতিতে অনেকগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাজ পরিবারের কন্যাদের পক্ষ “হাউজ অব ইয়র্ক” এবং “পুত্রদের পক্ষ” হাউজ অব ল্যাংকাস্টার নামে পরিচিত। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার হাউজ অব ইয়র্ককে “সাদা গোলাপ” এবং হাউজ অব ল্যাংকাস্টারকে “লাল গোলাপ” নামে নামকরন করেন এবং এই যুদ্ধগুলোকে অভিহিত করেন “The Wars of Roses” নামে।
১৪৫৫-১৪৮৭ সন অর্থাৎ ৩২ বছর ৩ সপ্তাহ ৪ দিনে যুদ্ধ সংঘটিত হয় অন্তত ২০টি।এসকল যুদ্ধে কম বেশী ৮০ হাজার যোদ্ধা অংশ নেন এবং ২০ হাজার যোদ্ধা নিহত হন। বিবদমান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পাল্টাপাল্টি জয় পরাজয়ের পরে ১৪৮৫ সনে “হাউজ অব ল্যাংকাস্টার” অর্থাৎ পুত্র পক্ষের কাছে “হাউজ অব ইয়র্ক” বা কন্যা পক্ষ পরাজিত হন। পরাজিত পক্ষের প্রধান ৩য় রিচার্ড নিহত হন।
এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের পুরুষকুল প্রায় নিশ্চিন্হ হয়ে যায়। পরাজিত পক্ষের “এলিজাবেথ ইয়র্কের” সাথে বিজয়ী পক্ষের নেতা “হেনরি টিউডর বা “রাজা ৭ম হেনরির” মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি ঐক্য তৈরী হয়। এতে উভয় পক্ষ বুঝতে পারেন যে ভবিষ্যত ইংল্যান্ড শাসিত হবে “হাউজ অব ল্যাংকাস্টারের রাজা এবং “হাউজ অব ইয়র্কের” রানী এবং তাদের সন্তানদের দ্বারা।
এভাবেই ১৪৮৫ সনে গোড়া পত্তন হ্য় টিউডর রাজত্বের। ৭ম হেনরি এবং তার পরবর্তি ইংল্যান্ড অল্প স্বল্প ঝামেলা ছাড়া মেটামুটি শান্ত ছিল। হেনরী ও এলিজাবেথ দম্পতির ছিল সাত সন্তান যাদের মধ্যে নিম্নোক্ত ৩জন: “আর্থার টিউডর র”, “অষ্টম হেনরি”এবং “মেরী টিউডর র” জীবিত ছিলেন। রাজার ইচ্ছা ছিল প্রথম পুত্র আর্থারকে বানাবেন রাজা আর দ্বতীয় পুত্র হেনরিকে করবেন ধর্মগুরু। রাজকুমার অষ্টম হেনরি ১৪৯১ সনে লন্ডনের গ্রীনউইচ প্যালেসে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন সকল বিষয়ে উৎসাহী, মেধাবী এবং উচ্চ শিক্ষিত । তাকে গড়ে তোলার জন্য রাজা গৃহ শিক্ষকের ব্যাবস্থা করেন।
রাজ কুমার হেনরি গান ও শিল্প চর্চ্চায় পারদর্শী পারদর্শী।গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি অনেক গান রচনাও করেন। তিনি জুয়া খেলতে পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ এথলেট এবং নানান খেলাধুলার সফল আয়োজক। তার প্রিয় খেলা ছিল ঘোড়ার পিঠে চড়ে তরবারী খেলা(Jousting)। বড় রাজকুমার আর্থারের ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় ইংল্যান্ডের মিত্র দেশ স্পেনের অন্তর্গত আরাগনের ক্যাথলিক রাজা ২য় ফার্দিনান্দ এবং রানী ১ম ইসাবেলা দম্পতির সর্বকনিষ্ঠ কন্যা ক্যাথারিনের সংগে।
রাজকুমারী ক্যাথারিনের জন্ম হয় ১৬ই ডিসেম্বর, ১৪৮৫ সনে যে বছর তার হবু শ্বশুর ৭ম হেনরি ইংল্যান্ডের রাজা হন। মাত্র তিন বছর বয়সে ক্যাথারিনের বাগদান হয় রাজকুমার আর্থারের সংগে। ১৫০১ সালে ক্যাথারিনের ১৬ তম জন্ম দিনের মাত্র কিছুদিন আগে তিনি স্পেনের পিত্রালয় ছেড়ে ইংল্যন্ডে শ্বশুরালয় গমন করেন এবং সেবছরই ১৫ বছর বয়সী রাজকুমার আর্থার, প্রিন্স অব ওয়েলস- এর সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের ৪ মাসের মধ্যেই অসুস্থ স্বামী আর্থার পরলোক গমন করেন।
রাজকুমারী ক্যাথারিন ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতি। স্বামী আর্থারের মৃত্যুর সময় ছোট ভাই “৮ম হেনরির” বয়স ছিল ১০ বছর। হেনরির সাথে ক্যাথারিনের প্রনয় হয় এবং তারা গোপনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও রাজা চাচ্ছিলেন ফ্রান্সের রাজকুমারীর সাথে রাজকুমার হেনরির বিয়ে হোক, যাতে করে ফ্রান্সের সাথে মৈত্রী সম্পর্ক তৈরী হয়।পরে অবশ্য ৮ম হেনরীর বোন মেরী টিউডড সাথে ফ্রান্স রাজার বিয়ে হয়।
ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীর সাথে বিয়েতে “রোমান ক্যাথলিক চার্চ” ও তার অধিনস্ত “চার্চ অব ইংল্যান্ড” ঘোরতর বিরোধী ছিলেন, কেননা ধর্মমতে ইহা পাপাচার এবং এহেন বিবাহিত দম্পতির সন্তান লাভ হয়না।”ক্যাথারিন” ও “অষ্টম হেনরীর” দাবীমতে অসুস্থ স্বামী আর্থারের সাথে ক্যাথারিনের কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি অতএব তাদের মধ্যেকার বিয়ে আইনত বিয়ে নয়; রাজা চাইতেন এই যুক্তিতে চার্চ যেন ক্যাথারিন এবং আর্থারের বিয়ের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করেন এবং ক্যাথারিন ও ৮ম হেনরির মধ্যে বিয়েতে সম্মতি প্রদান করেন। কিন্তু “ক্যাথলিক রোমান চার্চ” তা করতে রাজী হয়নি। ১৫০৯ সনে “রাজা ৭ম হেনরি” মৃত্যু বরন করেন এবং পুত্র “৮ম হেনরি” রাজা হিসাবে অভিষিক্ত হন।
রাজা হিসাবে অভিষিক্ত হবার ৬ সপ্তাহের মধ্যে তিনি ক্যাথারিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। ১৫১৩ সালে “রাজা ৮ম হেনরি” যখন ফ্রান্সে ছিলেন তখন ৬ মাসের জন্য ইংল্যান্ডের শাসনকর্তা ছিলেন রানী ক্যাথারিন। তিনি ফ্লোডেন যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে জয়লাভ করেন। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডবাসীর হ্রদয়ের রানী। ১৫০৭ সালে ক্যাথারিন ইংল্যান্ডে স্পেনের রাস্ট্রদূত নিয়োজিত হন এবং তিনিই ইউরোপের ইতিহাসে প্রথম নারী রাস্ট্রদূত ।
ক্যাথারিনের গর্ভে অনেক সন্তানের জন্ম হলেও ১৫১৬ সনে জন্ম নেয়া কন্যা মেরী জীবিত ছিলেন। রাজার ২৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে ক্যাথারিনকে তিনি গভীরভাবে ভালবাসতেন এবং সকল বিচারে তাকে আদর্শ নারী হিসেবে গন্য করতেন। ক্যথারিনের গর্ভে কোন পুত্র সন্তান না থাকাতে রাজা ক্রমাগতভাবে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার মনে হয় ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করার অপরাধেই হয়ত তিনি অভিশপ্ত এবং এজন্যই পুত্র সন্তান থেকে বঞ্চিত হন।
ইতিমধ্যে রাজা “এলিজাবেথ বেসি ব্লাউন্ট” নামের জনৈকা নারীর সাথে বিবাহ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, যার গর্ভে ১৫১৯ সনে হেনরি ফিটজর নামক এক সন্তানের জন্ম হয়। ১৫২০ সালের দিকে রাজা “এনি বলিয়েন” নাম্নী আর এক নারীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। রাজা চাইলেন “রানী ক্যাথারিনকে” তালাক দিয়ে “এনি বলিয়েনকে বিয়ে করবেন, কিন্তু রোমান পোপ ২য় ক্লেমেন্ট তাতে সম্মতি দিতে অস্বীকার করলেন।
ফলে রাজা ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হ্য়ে উঠল।রাজা ধর্মীয় বিষয়ে নিজেকে প্রধান ঘোষনা করলেন । “রাজা ৮ম হেনরি” ১৫৩৪ সনে “রোমান ক্যাথলিক চার্চের” সাথে চার্চ অব ইংল্যান্ডের সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে ছিন্ন করেন।রাজা তার দীর্ঘদিনের আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ক্যাথলিক কার্ডিনাল থমাস উসলিকে বরখাস্ত ও গ্রেফতার করেন।রাজা ধর্ম পালনের রীতি নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনেন। অবশেষে, ১৫৩৩ সনে পোপকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য জিজ্ঞাসা না করেই “চার্চ অব ইংল্যান্ডের” (যার প্রধান রাজা নিজেই) সম্মতিতে “রানী ক্যাথারিনে”র সাথে রাজা ৮ম হেনরির বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।একই বছর জানুয়ারী মাসে “এনি বলিয়েন”এর সাথে রাজার বিয়ে হয়।
রানী ক্যাথারিন রাজা হেনরীকে “চার্চ অব ইংল্যান্ডের” প্রধান হিসাবে মেনে নিতে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি নিজেকে ইংল্যন্ডের বৈধ রানী হিসাবে দাবী করতে থাকেন। রানীর অবস্থান ইংল্যান্ডের জনগনের প্রচুর সমর্থন ও সহমর্মিতা পেলেও তা শেষ পর্যন্ত রাজার চাওয়ার কাছে পরাভূত হয়। ক্যাথারিন বাকী জীবন রানির পরিবর্তে প্রিন্সেসের মর্যাদায় কিন্বলটন ক্যাসলে বসবাস করেন এবং ১৫৩৬ সনে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন।তার মৃত্যুতে ইংল্যান্ডবাসী শোকাভিভুত হয়ে পড়েন।
ক্যাথারিন ছিলেন গরীবের বন্ধু, পন্ডিতদের প্রশংসার পাত্রী এবং রেঁনেসা যুগের মানবতাবাদী আদর্শের ধারক। ২য় রানী “এনি বলিয়েন” পুত্র সন্তান জন্ম দিতে পারেননি বরং তিনি ১৫৩৩ সনে জন্ম দিলেন আর এক কন্যা সন্তান, এলিজাবেথকে যিনি “১ম এলিজাবেথ” নামে ইংল্যান্ডের রানী হয়েছিলেন। এনি বলিয়েনের দু’বার গর্ভপাত হয় তাই রাজা মনে করেন হয়ত রানী আর সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। “লেডি রিচমন্ড” নামক রাজার জনৈক ভগ্নি ও “এনি বলিয়েন” মিলে রাজ প্রাসাদ থেকে রাজার জনৈক রক্ষিতাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে রাজা ক্ষিপ্ত হন। তিনি লেডি রিচমন্ডকে প্রাসাদ থেকে সরিয়ে দেন।
রানী ও ৩ জন পুরুষের বিরুদ্ধে পরকিয়া ও রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ আনেন। বিচারে রানীর শিরোচ্ছেদের আদেশ হয়। ১৯৩৬ সনের ১৯শে মে “রানী এনি বলিয়েনের” শিরোচ্ছেদ কার্যকর হয় এবং শিরোচ্ছেদের ২ দিন পূর্বে রাজা তাকে তালাক প্রদান করেন। রানী এনি বলিয়েনের জীবদ্দশায় “জেইন সেইমুর” নামক এক পরিচারিকার সাথে রাজা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৫৩৬-৩৭ সনের দিকে Pilgrimage of Grace খ্যাত এক বিদ্রোহ হয়, যাতে প্রায় ৩০,০০০ বিদ্রোহী ধর্মগুরু অংশ নেন। বিদ্রোহীরা রাজার কাছে শপথ নিতে অস্বিকার করেন।
রাজা এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেন। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া জন ফিশার, রবার্ট আসকি, লর্ড চ্যান্সেলর স্যার থমাস মুর সহ ২০০ বিদ্রোহীর শিরোচ্ছেদ করা হয়। রানী এনি বলিয়েনের শিরেচ্ছেদের ১১ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৩০শে মে, ১৫৩৬ তারিখে রাজা “জেইন সেইমুরের” সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। একই বছর অক্টোবর মাসে রাজার “বহু প্রতিক্ষিত পুত্র সন্তান এডোয়ার্ড” জন্ম গ্রহন করেন। এডোয়ার্ডের জন্মের ৯ দিন পরে রানী প্রসব জটিলতার কারনে মৃত্যু বরন করেন। “জেইন সেইমুরকে” রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করলেও তাকে কোনদিন রাজমুকুট পরানো হয়নি।যেহেতু রানী জেইন সেইমুর পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন অতএব তাকেই রাজা প্রকৃত রানী হিসাবে গন্য করতেন।তার মৃত্যুতে শোক পালনের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আরো বর্ধিত সময় ধরে শোক পালন করা হয়।
রানীর মৃত্যুর তিন বছর পরে রাজা আবার বিয়ের জন্য প্রস্তুত হন।এবারে আর চেনা জানার মধ্যে নয়। পাত্রী খোঁজা শুরু হয় রাজ পরিবারের বাইরে।অনেক খুঁজে “এনি ক্লেভেজ” নাম্নি এক পাত্রী পাওয়া গেল। এনি ছিলেন ডিউক অব ক্লেভেজের ভগ্নি। পাত্রীর চেহারা কেমন তা বোঝার জন্য রাজার জার্মান বংশোদ্ভূত চিত্র শিল্পী “হ্যানস্ হলবিন দি ইয়ংগার”কে পাঠানো হল। শিল্পী হ্যানস্ পাত্রী “এনি ক্লেভেজের” ছবি এঁকে রাজাকে দিলেন। রাজার পছন্দ হল এবং ১৫৪০ সনের জানুয়ারীতে এই পাত্রীর সাথে রাজা চতুর্থবারের মত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।বাস্তবের এনি ক্লেভেজকে দেখে রাজা হতাশ হন এবং ৬ মাসের মধ্যে তাকে ডিভোর্স করেন। ডিভোর্সের পরে তাকে “রাজার বোন” উপাধি দিয়ে হেবার ক্যাসেলে থাকার ব্যাবস্থা করেন।
এনি ক্লেভেজকে তালাক দেয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে ১৫৪০ সনের ২৮শে জুলাই, ৪৯ বছর বয়সে রাজা পূন: বিয়ে করেন ১৯ বছর বয়সী “ক্যাথেরিন হাওয়ার্ড”কে। ক্যাথারিন হাওয়ার্ড ছিলেন রাজার দ্বিতীয় স্ত্রী এনি বলিয়েনের ফার্স্ট কাজিন। এই জুটি ছিল একটি সুখী দম্পতি। রানী রাজাকে দেন অসিম সুখ ও তৃপ্তি; রাজা রানীকে দেন অঢেল উপঢৌকন। এই দম্পতির সুখ বেশী দিন স্থয়ী হয়নি।রাজার শরীরে হানা দেয় নানান অসুখ বিসুখ। রাজা অস্বাভাবিক রকম মুটিয়ে যেতে থাকেন। পায়ে গাউট ও ক্ষত ধরা পড়ে। রানী সুখের জন্য নতুন ও কম বয়সী কাউকে খুঁজতে থাকেন এবং পেয়েও যান; কিন্তু ধরা পরেন রাজার তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। অবশেষে ১৫৪২ সনের ১৩ই ফেব্রুয়ারী টাওয়ার গ্রীনে রানী ক্যাথারিন হাওয়ার্ডের শিরোচ্ছদ কার্যকর হয় ।
সবশেষে রাজা ১৫৪৩ সনে ক্যাথারিন পারকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করেন। রাজার প্রথম স্ত্রী ক্যাথারিন অব আরাগানের সেবিকা মাউড গ্রীনের কন্যা ছিলেন ক্যাথারিন পার। মাতা মাউড গ্রীন তার প্রিয় মনিবের নাম অনুসারে কন্যার নাম রাখেন। ক্যাথারিন পার ছিলেন স্বাধীন মনোভাবাপন্ন ও সুশিক্ষিত। ইতিপূর্বে তিনি দুবার বিধবা হয়েছিলেন। ক্যাথারিন অত্যন্ত রাজকীয় গোপন নথির সন্ধান করতে থাকেন যা ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ন । তিনি তার নিষিদ্ধ কাজের জন্য বন্দী হন। রাজা তাকে তার ঔধ্যত্বপূর্ন কাজের জন্য সাবধান করে দেন।
তবে রাজাকে তিনি বুঝাতে সক্ষম হন যে রাজার দৃষ্টি নিজের দিকে আকর্ষণের জন্য এহেন কাজ করেছেন। রাজা তার বক্তব্য মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন, ফলে রানী ক্যাথারিন পার অবধারিত পরিনতি মৃত্যুদন্ড থেকে অব্যাহতি পান। অবশেষে রাজা দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পরে ২৮ জানুয়ারী, ১৫৪৭ সনে ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর পরে তার শরীরে অনেক নীল রংয়ের ফোস্কা দেখা যায় যেগুলো থেকে পুঁজ নির্গত হতে থাকে।মহাপরাক্রমশালী রাজা অষ্টম হেনরির মৃতদেহ উইন্ডসরে সেইন্ট জর্জেজ চ্যাপেলে রাজার একমাত্র পুত্র এডোয়ার্ডের মাতা তথা তৃতীয় স্ত্রী জেইন সেইমুরের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়।
রাজা ৮ম হেনরির মৃত্যুর পরে তার একমাত্র পুত্র ষষ্ঠ এডোয়ার্ড মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৫৪৭ সনে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে সমাসিন হন এবং ৬ বছর রাজত্ব করার পরে ১৫৫৩ সনে ১৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। ষষ্ঠ এডোয়ার্ডের মৃত্যুর পরে তার সৎ বোন অর্থাৎ রাজার প্রথমা স্ত্রী ক্যাথারিন অব আরাগনের একমাত্র কন্যা মেরী টিউডর ইংল্যান্ডের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তার রাজত্বকাল ছিল ১৫৫৩ থেকে ১৫৫৮ সন পর্যন্ত বা ৫ বছর। “রানী মেরী টিউডরের” মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডের রানী হন তার সৎ বোন তথা রানী এনি বলিয়েনের কন্যা এলিজাবেথ টিউডর র বা “প্রথম এলিজাবেথ”।তিনি ১৫৫৮ থেকে ১৬০৩ সন পর্যন্ত মোট ৪৫ বছর ইংল্যান্ডের রানী ছিলেন। সমাপ্ত সংকলন-তারিকুল ইসলাম খান। সূত্র: উইকিপিডিয়া, ব্রিটানিকা ও ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য সূত্র।