avertisements 2

অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল: ধ্বংসস্তূপে উঁকি দিচ্ছে নতুন প্রাণ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ জানুয়ারী,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:১৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

অস্ট্রেলিয়ায় গত সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া দাবানলে দেশটির প্রাকৃতিক প্রতিবেশের বিশাল এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চারদিকে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। হাজারো গাছ পুড়ে ছাইয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতিতে তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস। আর ওই ধ্বংসস্তুপে মাথা তুলছে সবুজ প্রাণ।

প্রকৃতির রোষের শিকার অস্ট্রেলিয়ার পোড়া বনে নবজীবনের সঞ্চার হচ্ছে। দেখা মিলেছে সুন্দরের দৃশ্য। পুড়ে যাওয়া জমিতেই সবুজের আভা, মরা গাছের ডালে উঁকি মারছে গোলাপী ফুল। দুই মাসের দীর্ঘ দাবানলের পর সেখানে আবার নতুন সাজে সেজে উঠছে প্রকৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় গত সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া দাবানলে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০ কোটি প্রাণি প্রাণ হারিয়েছে।

অসংখ্য গাছ পুড়েছে, হাজার হাজার বনভূমি উজাড় হয়েছে, ভস্মীভূত হয়েছে কয়েক হাজার বাড়িঘর। দেশটির নিউ সাউথ ওয়ালসের মধ্য উপকূলীয় কুলনুরা এলাকায় ১৫৬ লাখ হেক্টর আয়তনের গাছপালা পুড়ে বৃহত আকারের খেলা মাঠের মতো ফাঁকা হয়েছে। তবে সেখানে সম্প্রতি পুড়ে যাওয়া এলাকায়- নতুন করে গাছ জন্মেছে, নবজীবনের সঞ্চার হয়েছে।

নতুন করে জন্ম নেওয়া গাছ, ফুলের চিত্রধারণ করেছেন মুরাই লোয়া নামের স্থানীয় এক ফটোসাংবাদিক। সম্প্রতি মুরাই সেখানে গিয়েছিলেন দাবানলের ভয়াবহতা দেখতে। কুলনুরার পুড়ে যাওয়া গাছের ছাইয়ের ওপর দিয়ে তিনি যখন হাঁটছিলেন; তখন তিনি দেখেন, পোড়া ছাইয়ের ওপর সবুজ গাছ জন্মেছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়ার যে প্রদেশে দাবানলের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে, সেখানেই এমন আশাব্যঞ্জক ছবি মন ভালো করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়বাসীর। এতোদিনকার দমবন্ধ পরিবেশে যেন একটু স্বস্তির হাওয়া। বিধ্বস্ত এলাকা থেকে এই ছবিগুলো তোলার পর মুরাই নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। লিখেছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া এলাকাগুলো দেখতে আজ বেরিয়েছিলাম ক্যামেরা নিয়ে।

দেখার চেষ্টা করছিলাম যে এত বড় একটা বিপর্যয় অস্ট্রেলিয়ার গাছপালাগুলো কীভাবে সামলায় দেখলাম, নতুন করে পাতা গজিয়ে উঠছে, ফুল ফুটছে। এখানে কোনও বৃষ্টিও হয়নি। তা সত্ত্বেও এই দৃশ্য দেখে মন আনন্দে ভরে গেল। মুরাই তার এই সব ছবি বিক্রি করেছেন। এই অর্থ তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তার এই মহৎ উদ্যোগে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বন্ধুরা। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে এভাবেই একে অন্যের হাতে হাত রাখছেন। পাশাপাশি বিপন্ন বন্যপ্রাণীকে বাঁচাতেও চলছে তাদের লড়াই।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণত গ্রীষ্মকালে তাপদাহের কারণে জঙ্গলে দাবানল হয়। স্থানীয়রা একে বলে থাকে বুশফায়ার। এই দাবানল কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, টেলিভিশনের পর্দায় মাঝেমধ্যেই উঠে আসে তার করুণ চিত্র। আগুনের এই রোষের মুখে অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। কখনও সংলগ্ন এলাকা থেকে মানুষজনকে উদ্ধার করা অথবা দাবানলের পথে গাছ কেটে আগুন থামানোর চেষ্টাতেই অবলম্বন খোঁজেন স্থানীয়রা। সরকারিভাবে বিমান থেকে বিশেষ তরল মিশ্রণ ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টাও করা হয়। তবে সে প্রচেষ্টা সব সময় সফল হয় না।

তবে বুশফায়ার বা দাবানলপ্রবণ এলাকায় জনবসতি তুলনামূলক কম থাকে। ফলে লোকজনের প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কিছুটা কম হয়। তবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া বিভিন্ন দাবানলে প্রচুর গাছ ও জীবজন্তুর প্রাণহানি ঘটেছে। বাস্ত্তবিদদের আশঙ্কা, কোটি কোটি পশু-পাখি ও প্রাণীর জীবনহানি হয়েছে। ৭ জানুয়ারি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ এই দাবানলে এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত ২৫ জন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এই মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। যা কিছু অঞ্চলের দাবানল নেভাতে সহায়তা করছে। ওই ঘূর্ণিঝড় দেশের অন্য অঞ্চলের জন্য আশির্বাদ হিসেবেও দেখা দিয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2