শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার ৯ শহরে ব্যাপক বিক্ষোভের প্রস্তুতি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:১৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
অস্ট্রেলিয়ার নয়টি শহরে শুক্রবার হাজার হাজার অ্যাক্টিভিস্ট লঙমার্চ করবে । দীর্ঘদিন ধরে দাবানলের কারণে জলবায়ু যে একেবারে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, সে ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ওই লঙমার্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কাছে আবেদন জানানো হবে। জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ছাত্র সংগঠন ইউনি স্টুডেন্টস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস ওই লঙমার্চের আয়োজন করছে। মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবোন, পার্থসহ নয়টি শহরে লঙমার্চ করা হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সে দেশের বাসিন্দারা। ছাত্রদের প্রত্যাশা, লঙমার্চে অসংখ্য মানুষ যুক্ত হবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ লঙমার্চে যুক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। গত এক মাসে বিধ্বংসী দাবানলে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সে দেশের মানুষ।
দাবানলের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মরিসন ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছেন। লাখ লাখ প্রাণী আগুনে পুড়ে মারা গেছে। সে দেশে অন্তত ২৭ জন মানুষ মারা গেছেন দাবানলে পুড়ে। অস্ট্রেলিয়া এমনিতেই খরাপ্রবণ দেশ। খরার কারণে সেখানে পানির চাহিদা মেটানোই কঠিন হয়ে পড়ে। তার ওপর দাবানলের কারণে আরো বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে দেশটি। বিপাকে পড়ে গতকাল বুধবার থেকে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি উট গুলি করে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের আনানজু পিতজানৎজাতজারা ইয়ানকুনিৎজাতজারা ল্যান্ডস (এওয়াইপি) এলাকার এক আদিবাসী নেতা এ নির্দেশ দিয়েছেন বরে জানা গেছে। এক আদিবাসী নেতার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আদেশ আসার পর উটগুলো মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বুধবার হেলিকপ্টার থেকে বন্য এ উটগুলোকে গুলি করে মারার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। প্রশিক্ষিত শুটার দিয়ে এ উটগুলো মারতে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে জানা গেছে। এতগুলো উট একসঙ্গে মারার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল খুবই খরাপ্রবণ এলাকা। যে কারণে এ অঞ্চলে পানির খুব সঙ্কট রয়েছে। বন্য এই উটগুলো খুব বেশি করে পানি খায়। পানির খোঁজে তাদের বিচরণের কারণে সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া মিথেন গ্যাস সৃষ্টির জন্যও দায়ী তারা। এওয়াইপির নির্বাহী বোর্ডের সদস্য মারিতা বেকার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমরা যে অঞ্চলে থাকি সেখানে খুব গরম পড়ে। খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে আছি।
এর মধ্যে উটগুলোর উৎপাত আমাদের বিষিয়ে তুলেছে। তারা পানির জন্য ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে, বেড়া ভেঙে দিচ্ছে। ক্ষেত মাড়িয়ে এসে ফসলের ক্ষতি করছে। দেশটির জাতীয় বন্য উট ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের দাবি, এই উটদের সংখ্যা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে প্রতি নয় বছরে সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যও উট দায়ী। প্রতি বছর তাদের মলমূত্র থেকে যে পরিমাণ মিথেন গ্যাস বের হয় তা এক টন কার্বনডাই অক্সাইডের সমপরিমাণ। কার্বনডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণে কাজ করা কার্বন ফার্মিং স্পেশালিস্টস রিজেনকোর প্রধান নির্বাহী টিম মুরে বলেন, এক মিলিয়ন উট প্রতিবছর এক টনের সমপরিমাণ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।
অর্থাৎ, চার লাখ গাড়ি থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, সেই পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড সৃষ্টির জন্য দায়ী উট। অবশ্য দেশটির জ্বালানি ও পরিবেশ বিভাগ বলছে, বন্য উটগুলো যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করছে, তা দেশের হিসেবে আসবে না। কারণ তারা গৃহপালিত না। উট গুলি করে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েও অস্ট্রেলিয়াসহ সারাবিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এবার সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে দাবানল নিয়ন্ত্রণে লঙমার্চ হতে যাচ্ছে।