পঞ্চাশ হাজার বছরের প্রাচীন দেশ অস্ট্রেলিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ আগস্ট,রবিবার,২০১৯ | আপডেট: ০৪:৪৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম মানুষ বসতি স্থাপন করে। ১৭৮৮ সালে ইউরোপীয়রা যখন প্রথম এখানে বসতি স্থাপন করে, সে সময় এখানে প্রায় ৩ লক্ষ আদিবাসী লোক বাস করত, যারা প্রায় ২৫০টি আলাদা জাতিতে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা ছিল। ১৭৮৮ সালে এখানে ক্যাপ্টেন কুকের নেতৃত্বে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয়। তবে মূল ইতিহাস বলে অন্য কথা। এতোদিন ব্রিটিশরা সদম্ভে দাবি করে এসেছে, তারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছে।
কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়ালস (ইউএনএসডব্লিউ) দাবি করেছে, ব্রিটিশদের এ দাবি মোটেও সত্য নয়। তারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার নয়, হামলা করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, জাতির উপনিবেশের সময়কার ইতিহাস নতুন করে লিখতে শুরু করেছে তারা। এরই ধারায় এখন বলা হচ্ছে, ক্যাপ্টেন জেমস কুক আসলে অস্ট্রেলিয়ায় হামলা চালিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীদের এখন এভাবেই ইতিহাস পাঠ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএসডব্লিউ। নতুন করে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শব্দের প্রয়োগেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন, ‘আবিষ্কারের’ জায়গায় ‘হামলা’র ব্যবহার ও ‘আদিবাসী’ শব্দটা এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে।
তবে কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে, বা যাবে না, সে ব্যাপারে ইউএনএসডব্লিউ বিধিনিষেধ সৃষ্টি করছে না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, নতুন করে ইতিহাস লেখার কাজটি চলছে শুধুমাত্র কোন শব্দ বেশি উপযোগী, কোন শব্দ কম উপযোগী, তা নির্ধারণে।
এ গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ‘ইংরেজ ক্যাপ্টেন জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেছেন’ এর জায়গায় যদি ‘তিনি এ মহাদেশের পূর্ব উপকূলের মানচিত্র তৈরি করেছেন’ বলা হয়, তাহলে বেশি যুক্তিযুক্ত হয়। আর ‘আদিবাসী’ বিশেষণের জায়গায় শিক্ষার্থীদের ‘অস্ট্রেলীয় নৃ-গোষ্ঠী’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এচাড়া নতুন এ গাইডলাইনে ‘আদিম’, ‘সাধারণ’, ‘স্থানীয়’ এবং ‘প্রাগৈতিহাসিক’ শব্দগুলোকে কম উপযোগী শব্দের তালিকায় রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘যাযাবর’ শব্দের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বসতিস্থাপক ছিল এখানকার আদিবাসী জাতিগুলি। এরা প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ বছর আগে দেশটিতে অভিগমন করে। ১৭শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কাছে দ্বীপটি অজানা ছিল।
১৭৮৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট জ্যাকসনে প্রথম স্থায়ী উপনিবেশ সৃষ্টি করা হয়; এটি ছিল ব্রিটিশ কয়েদিদের উপনিবেশ। এটিই পরবর্তীকালে বড় হয়ে সিডনী শহরে পরিণত হয়। ১৯শ শতক জুড়ে অস্ট্রেলিয়া এক গুচ্ছ ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে কাজ করত। ১৯০১ সালে এগুলি একত্র হয়ে স্বাধীন অস্ট্রেলিয়া গঠন করে।
এটি একটি দ্বীপ-মহাদেশ। এটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। কাছের তাসমানিয়া দ্বীপ নিয়ে এটি কমনওয়েল্থ অফ অস্ট্রেলিয়া গঠন করেছে। দেশটির উত্তরে তিমুর সাগর, আরাফুরা সাগর, ও টরেস প্রণালী; পূর্বে প্রবাল সাগর এবং তাসমান সাগর; দক্ষিণে ব্যাস প্রণালী ও ভারত মহাসাগর; পশ্চিমে ভারত মহাসাগর।
দেশটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪০০০ কিমি এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩৭০০ কিমি দীর্ঘ। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাদেশ, কিন্তু ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা। সিডনী বৃহত্তম শহর। দুইটি শহরই দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর। এটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব সীমান্ত ধরে প্রায় ২০১০ কিমি জুড়ে বিস্তৃত।
এটি আসলে প্রায় ২৫০০ প্রাচীর ও অনেকগুলি ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি। কুইন্সল্যান্ডের তীরের কাছে অবস্থিত ফেয়ারফ্যাক্স দ্বীপ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের অংশ। অস্ট্রেলিয়া ৬টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত - নিউ সাউথ ওয়েল্স, কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, ভিক্টোরিয়া, ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া।
এছাড়াও আছে দুইটি টেরিটরি — অস্ট্রেলীয় রাজধানী টেরিটরি এবং উত্তর টেরিটরি। বহিঃস্থ নির্ভরশীল অঞ্চলের মধ্যে আছে অ্যাশমোর ও কার্টিয়ার দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলীয় অ্যান্টার্কটিকা, ক্রিসমাস দ্বীপ, কোকোস দ্বীপপুঞ্জ, কোরাল সি দ্বীপপুঞ্জ, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ, এবং নরফোক দ্বীপ।