অস্ট্রেলিয়া ডে এ্যাওয়ার্ড ২০২১ পেলেন বাংলাদেশী মাহবুব সিরাজ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:১৯ পিএম, ৪ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অস্ট্রেলিয়া ডে এ্যাওয়ার্ড ২০২১ পেলেন এডিলেইডের জনপ্রিয় কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাহবুব সিরাজ তুহিন।যারা পরিবার প্রিয়জন ফেলে জীবিকার টানে দেশের বাইরে এসেছেন, তারা জানেন অচেনা দেশে অচেনা ভাষায় অচেনা সংস্কৃতিতে ঠাই করে নেওয়া কত কষ্টকর। এভাবে বাইরে এসে মানুষ কত মানবিক বেদনা ও মর্মান্তিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, তার খবর যারা ভুক্তভূগি তারাই বলতে পারবেন। অনেকেই হয়ত সময়ের সাথে সংগ্রাম করে এই অবস্থা থেকে উত্তীর্ণ হন, ভাল একটা অবস্থায় পৌঁছান। কিন্তু পৌঁছেই আবার তাদের স্ট্রাগলের ইতিহাস ভুলে যান অথবা নিজের উন্নতিতেই ব্যস্ত থাকেন।
মাহবুব সিরাজ তুহিন এ দিক দিয়ে বিরল ব্যতিক্রম। তিনি দীর্ঘ এক যুগ ধরে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বাঙ্গালী ছাত্র ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিভাবক হয়ে আছেন। গত এগারো বছর ধরে তিনি বাঙ্গালীদের বিভিন্ন ধরণের সাহায্য ও সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন- হোক সেটা চাকুরী নিয়ে পরামর্শ, চাকুরীর জন্য প্রয়োজনীয় ভলান্টারী কাজের ব্যবস্থা, ক্যারিয়ার নিয়ে ওয়ার্কশপ, অথবা নতুন আসা শিক্ষার্থী ও অভিবাসীদের আবাসনে সাহায্য করা। তিনি এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ জনকে চাকুরি অথবা ভলান্টারী কাজ জুগিয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।
এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বিভিন্ন পুরষ্কারও পেয়েছেন। এই যেমন কমিউনিটিতে অবদান রাখার সিটি অব ওয়েস্ট টরেন্স থেকে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া ডে এ্যাওয়ার্ড ২০২১ পুরষ্কার পেলেন। শুধু যদি এই করোনা মহামারীর সময় কমিউনিটির জন্য তিনি কি করেছেন তার বিবরণ দেওয়া যায়, তা হলেও পরিষ্কার হয়ে যায় যে পুরষ্কারটি ভুল হাতে যায় নি।
কোভিডে অনেকেই যখন চাকুরী হারাচ্ছেন, তখনো তিনি ভাবছেন কি করা যায়! অস্ট্রেলিয়ায় তো রেফারেন্স ছাড়া কাজই পাওয়া যায় না। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে রেফারেন্স দিয়েছেন, চাকুরিদাতাদের সাথে কথা বলেছেন। ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করেছেন। চাকুরিপ্রার্থীকে সম্ভাব্য চাকুরিদাতাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। অন্তত ৬০ জন এই মহামারীকালে তার রেফারেন্সেই চাকুরি বা ভলান্টারী কাজ পেয়েছেন।
এছাড়াও, তিনি 'এডিলেইড কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি সাপোর্ট গ্রুপ' তৈরী করেছেন, যার এখন সদস্য সংখ্যা ৬৫২ জন। এই গ্রুপের মাধ্যমে তিনি কমিউনিটির মানুষজনকে করোনা থেকে নিরাপদে থাকার কৌশলগুলো শেখানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন, কোভিড-১৯ মার্শাল ট্রেইনিং এ লোকজনকে যুক্ত হতে উৎসাহিত করেছেন। কোভিড ঝড়ের সবচে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন টেম্পোরারি রেসিডেন্সে থাকা লোকজন ও ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা। তিনি ব্যক্তিগত দাতাদের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করে টেম্পোরারি রেসিডেন্স স্টেটাসে থাকা লোকজন ও ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের প্রত্যেকের জন্য ৫০ ডলারের গ্রোসারী ভাউচার বণ্টনের ব্যবস্থা করেছেন। রেস্টুরেন্ট মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে কোভিড ভিক্টিমদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। কমিউনিটির রোগপ্রতিরোধ বাড়াতে ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে দান করতে আগ্রহী কৃষকদের কাছ থেকে সবজি আনিয়েছেন এবং গ্রোসারি শপের মাধ্যমে বিনামূল্যে মানুষের মধ্যে বিলি করেছেন। এই গ্রুপের মাধ্যমেই জনাব তুহিন ভলান্টিয়ার ডাক্তারদের তালিকা করেন এবং কমিউনিটির লোকজন যাতে নিজের ভাষায় স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পান তা নিশ্চিত করেছেন।
করোনা মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়ান সরকার বিভিন্ন রকম নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে, যার মধ্যে কিউ আর কোডের ব্যবস্থা করা ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মসূচীও ছিল। যারা ভাষা ও প্রযুক্তিগত বাঁধার কারণে এগুলো করতে পারছিল না এমন অন্তত ৫০ টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটির অনুষ্ঠানের আয়োজকদের এই কাজগুলোতে তিনি সাহায্য করেছেন।
মাহবুব সিরাজ তুহিন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। তিনি সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রয়াল এসোসিয়েশন অব জাস্টিসের সদস্য এবং গত সাত বছর ধরে তিনি জাস্টিস অব পিসের ভূমিকা পালন করছেন।
সেইসাথে তিনি সাউথ অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশী কমিউনিটি এসোসিয়েশনের (SABCA) সাবেক চেয়ারপার্সন ও বর্তমান উপদেষ্টা। সোসাইটি ফর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর জেনারেল।
এই জনহিতৈষী কাজের বাইরে তিনি ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথেও যুক্ত, যার সুফল পুরো কমিউনিটিই পায়। যেমন, তিনি ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন, ক্যারিয়ার পার্টনার অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশিরা চাকুরি পেয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি এভারগো এর ডিরেক্টর, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হিসাবে কর্মরত আছেন।
জনাব তুহিন যে বাংলাদেশীদের স্বার্থেই কাজ করছেন- এমন নয়। তিনি ফুডব্যাংক এসএ (Foodbank SA) ও বুশফায়ার ভিক্টিমদের জন্য ফান্ড রেইজার হিসাবে কাজ করেছেন।
মাহবুব সিরাজ তুহিন ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশনের (WBO) এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও এই সংগঠনটির অস্ট্রেলিয়ান চ্যাপ্টারের কোঅরডিনেটর। এই সংগঠনটির হেড অফিস প্যারিসে এবং এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের সহায়তা প্রদান করে থাকে।
পুরষ্কার ও স্বীকৃতি তার জীবনে নতুন নয়। তিনি ২০২০ এ বিজনেস আমেরিকা ম্যাগাজিনে বিশ্বের একশ জন প্রভাবশালী এনআরবি বিজনেসমেনের তালিকায় ছিলেন। তার পড়াশোনাও ঈর্ষণীয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ব্যাচেলর ডিগ্রী নিয়েছেন। এরপর স্ট্যামফোরড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ও সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়া থেকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে লিডারশিপ কোর্সও কমপ্লিট করেছেন।
মাহবুব সিরাজ তুহিনের এই পুরষ্কার প্রাপ্তিতে তাকে অভিনন্দন জানাই। চারদিকে যখন ব্যক্তিতান্ত্রিকতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার চর্চা, তখন তিনি যখন পারছেন অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়ে তার মত পরার্থপর ও সহৃদয় মানুষের সমাজে খুব দরকার।
(Photo Courtesy: City of West Torrens & John Kruger)