avertisements 2

এবার আলু নিয়ে কৃষকের কান্না!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৪ এএম, ১২ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

ভাতের পর এখন দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হচ্ছে আলু। গত পাঁচ যুগে এ ফসলের উৎপাদন বেড়েছে অন্তত ৩০ গুণ। আর মাথাপিছু আলু খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১২ গুণ। মাস খানেকের মধ্যে নতুন আলুসহ শীতের শাকসবজি বাজারে উঠবে। নতুন আলু বা সবজি ওঠার পর পুরনো আলুর কদর কমে যাবে। অথচ এখনো ১৪ লাখ টন আলু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এদিকে ঘাম ঝরানো এ ফসল নিয়ে কৃষকের কান্না চলছে।

নতুন আলু ওঠার আগে বিক্রি না হলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হতে পারে কৃষকের। নরসিংদী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া, মুন্সীগঞ্জ, পঞ্চগড়, যশোর ও ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা আলু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন, বর্তমান দরে বিক্রি করে হিমাগার ভাড়া দেওয়ার পর তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকে লোকসানের ভয়ে হিমাগার থেকে আলু নিচ্ছেন না।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে এক কেজি আলুর দাম ১১ টাকা, বস্তা ও পরিবহণ খরচ কেজিতে দেড় টাকা, ঘাটতি এক টাকা, সংরক্ষণ ভাড়া ৪ টাকা, ব্যাংকের সুদ প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা। মোট খরচ হয় কেজিপ্রতি ১৮ টাকা। বর্তমানে হিমাগার পর্যায়ে পাইকারিতে আলু বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ৯ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি বস্তায় কৃষকের লোকসান ৫০০ টাকা। সে অনুযায়ী এক কেজি আলুতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৬ টাকা।

আর ভোক্তারা সেই আলু বাজার থেকে কিনছেন ২২ থেকে ২৫ টাকায়। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে অনেক আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা করছেন হিমাগার মালিকরা। এখনো দেশের প্রায় ৪০০ হিমাগারে ২২ লাখ থেকে ২৫ লাখ টনের বেশি আলু মজুত আছে। এ ছাড়াও আছে ৮ লাখ টন বীজ আলু। আগামী এক মাস খাওয়ার পরও ১৪ লাখ টন আলু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে শীতের সবজিও উঠতে শুরু করেছে। ফলে মানুষ আলু খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন হিমাগার মালিকরা। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, রাজধানীতে শনিবার মানভেদে ২২ থেকে ২৫ টাকায় আলু বিক্রি হয়েছে। সবজিটির খুচরা ও পাইকারি বাজারমূল্য নিম্নমুখী।

আর দরপতনে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কায় হিমাগারে রাখা আলু বিক্রির চেষ্টা চলছে। মৌসুম শুরুর আগে মজুত করা আলু বিক্রি শেষ করতে কৃষক ও হিমাগার মালিকরা সরকারের মন্ত্রীদের কাছেও যাচ্ছেন। তারা সরকারের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও করোনাকালে সাহায্য হিসেবে বিভিন্ন দেশকে আলু প্রদানের দাবি জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুলস্নাহ জানান, চলতি বছর দেশে এক কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়। সরকার আলু উৎপাদনে সার বাবদ এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মো. মোজ্জামেল হক চৌধুরী বলেন, এবার আলু রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টন। আলু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুর খরচ পড়েছে ১৮ টাকা। কিন্তু বর্তমানে হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। ফলে লোকসানের মুখে কৃষক আর ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হিমাগার চালাতে গিয়ে এখন ঋণখেলাপি হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, এক একর জমিতে ৫০ মণ ধান হয়। সেখানে আলু উৎপাদন হয় ৩০০ টন। দেশে আলু উদ্বৃত্ত থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দেশে আলুর বহুমুখী ব্যবহার নেই।

আলুর বহুমুখী ব্যবহারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা বাড়াতে হবে। চাহিদা বৃদ্ধিতে সরকারের ত্রাণকার্যে, কাবিখা, ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডে এবং ওএমএসের মাধ্যমে আলু বিতরণ করা যায়। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কাছে আলু ভর্তার গন্ডি থেকে বেরিয়ে এখন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর চিপস হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বছরে মাথাপিছু প্রায় ২৩ কেজি করে আলু খায়। যা ভারতের চেয়ে আট কেজি বেশি। আলু খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও। এতে বাংলাদেশের মানুষের ভিটামিন ও কার্বোহাইড্রেটের চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করছে।

এর মধ্যে অনেক কোম্পানি আলু থেকে উৎপাদিত চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রপ্তানি করছে। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খাবার তালিকায় ভাতের পরেই আলুর অবস্থান। আলু বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্যশস্য। বাকি ৩টি হলো- যথাক্রমে ভুট্টা, গম ও চাল। ফলে দেশ ও বিদেশে আলুর চাহিদাও বাড়ছে। আলু হয়ে উঠতে পারে রপ্তানির একটি বড় খাত। দেশে রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য এবং আগাম জাতের আলুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। রপ্তানিযোগ্য জাতগুলো মাঠ পর্যায়ে দ্রম্নত সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আলু রপ্তানিতে শুল্ক কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2