avertisements 2

টাকার মান কমছেই

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১৬ পিএম, ১০ মার্চ,রবিবার,২০২৪

Text

টাকার মান কমছে। গত এক বছরে টাকা তার মূল্যমান হারিয়েছে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এক বছরে টাকার মূল্যমান এতখানি কমা একটি নতুন রেকর্ড। উচ্চ দরেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ায় আমদানিকারকেরা ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছেন না। চাহিদা ও জোগানের এই ভারসাম্যহীনতার কারণে আবারও বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দর, কমছে টাকার মান। বাংলাদেশে এখন এক ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে সরকারি হিসাবেই ৮১ টাকার বেশি। অথচ এক বছর আগেও ডলারের দাম ছিল ৬৯ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এক ডলারের দাম বেড়েছে ১২ টাকা।

একটা সময় ছিল যখন সরকার ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন করত। এখন আর ঘোষণা দেওয়া হয় না। ফলে নীরবেই ঘটে গেছে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরো সামান্য মূল্যমান হারিয়েছে। আবার জাপানি ইয়েনের বিপরীতে মূল্যমান হারিয়েছে ডলার। কিন্তু সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের টাকা। ভারতীয় রুপির অবস্থাও বাংলাদেশি টাকার মতোই।

ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমলে রপ্তানিকারকেরা খুশি হন। কেননা, আগের তুলনায় বেশি আয় হয়। আর এতে আমদানিকারকেরা সমস্যায় পড়েন। কারণ, বেশি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। আবার প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। ফলে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা তেমন লাভবান হন না। সার্বিকভাবে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নে বাংলাদেশের ক্ষতিই বেশি হয়। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে ৮ শতাংশের বেশি। এর ওপর আবার রয়েছে ভ্যাটসহ সব ধরনের কর। এতে প্রতিটি পণ্যেই বিদেশ থেকে আনতে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে বাজারে।

এ কে আজাদ আরও বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে অতিমাত্রায় ঋণ করছে। বিদেশি বিনিয়োগ ও সাহায্য আসছে না। বিনিয়োগ না হওয়ায় কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। এ অবস্থায় ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে। সরকারকে ঋণ নেওয়া কমাতে হবে। বর্তমানের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে।

এক সপ্তাহে তিন টাকা: গত বৃহস্পতিবার দেশে এক ডলারের দাম ছিল ৮১ দশমিক ১৯৯৯ টাকা। কেবল গত সপ্তাহেই ডলারের দাম বেড়েছে তিন টাকার বেশি। যেমন, গত রোববার অর্থাৎ সপ্তাহের শুরুর দিন ডলার বিক্রি হয়েছে ৭৭ দশমিক ২৫৭৬ টাকায়। এক সপ্তাহে তিন টাকার বেশি দাম কমে যাওয়াও একটি নতুন রেকর্ড।

গত সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমেছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত সপ্তাহে বিশ্বের আর কোনো মুদ্রার মূল্যমান এই হারে কমেনি। কাছাকাছি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ও নিউজিল্যান্ডের ডলার। এই দুই ডলারের মূল্যমান কমেছে যথাক্রমে ২ দশমিক ১১ ও ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

স্বাধীনতার পরপর ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিংয়ের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করা হতো। স্বাধীনতার পরপর দেশে এক পাউন্ড কিনতে ব্যয় করতে হতো ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। আর সে সময় ডলারের দর ছিল ৭ দশমিক ৮৭৬৩ টাকা। সেই ডলার এখন ৮১ টাকা ছাড়িয়েছে আর পাউন্ডের দর ১২৭ দশমিক ৪৩৭৮ টাকা।

ডলার নিয়ে দুর্নীতি: বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্রগুলো বলছে, ডলারের দাম বাড়ায় এবং চাহিদা অনুযায়ী তা পাওয়া যাওয়ায় ডলার নিয়ে নানা ধরনের দুর্নীতিও হচ্ছে। আমদানি ঋণপত্র এলসি খোলার মতো ডলার জোগাতে না পেরে কোনো কোনো আমদানিকারক রপ্তানিকারকের সঙ্গে সমঝোতা করে পণ্যের মূল্য কম দেখাচ্ছেন (আন্ডার ইনভয়েস)। পরে ব্যয়ের বাকি অংশ অনানুষ্ঠানিক পথে (হুন্ডি করে) পাঠিয়ে দিচ্ছেন খোলাবাজার থেকে কিনে। জানা গেছে, খোলাবাজারে ডলারের দাম তুলনামূলক কম।

আসছে আইএমএফের শর্ত: স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার সরকার নির্ধারণ করে দিত। ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ টাকাকে রূপান্তরযোগ্য ঘোষণা করা হয়। আর ২০০৩ সালে বিনিময় হারকে করা হয় ফ্লোটিং বা ভাসমান। এর পর থেকেই মূলত ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। তবে বিনিময় হার ভাসমান হলেও পুরোপুরি তা বাজারভিত্তিক ছিল না। পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। বাংলাদেশ মূলত ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট’ অনুসরণ করে আসছে।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দীর্ঘদিন ধরেই বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে। সরকার সম্প্রসারিত ঋণসুবিধার (ইএসএফ) আওতায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেতে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এই ঋণের বড় শর্ত বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করতে হবে। এই শর্ত মেনে নিলে টাকার মূল্যমান আরও অনেকখানি কমবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে। ফলে টাকা ও ডলারের সংকট সহসা কাটছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2