avertisements 2

একে একে বন্ধ হচ্ছে কারখানা, বিপর্যস্ত শিল্প

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩০ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫ | আপডেট: ১০:৫০ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারী, বুধবার,২০২৫

Text

গ্যাস সংকটের মরণ থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে দেশের গোটা শিল্প খাত। ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু কারখানা বন্ধের প্রক্রিয়ায় চলে গেছে। ফলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।


মালিকরা হয়ে পড়েছেন ঋণগ্রস্ত। গ্যাসের অভাবে কারখানাগুলোতে শ্রমিকের পাওনা বেতন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিল্প মালিকরা। উপায় না থাকায় অনেকেই করছেন শ্রমিক ছাঁটাই। আবার গ্যাস না পেয়ে কারখানাগুলোর কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে নতুন করে উদ্যোক্তারা শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। পুরনো ব্যবসায়ীরাও নিজেদের উৎপাদন কমিয়ে আনছেন।
শিল্প মালিকদের অনেকেই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের শিল্প খাত ধ্বংসের উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আছে। শিল্প খাত যে কোনো সময় গুঁড়িয়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় কারখানা মালিকরা এক ধরনের অস্থিতিশীল অবস্থা পার করছেন। গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা আরও বলেন, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্রেতাদের অর্ডারের পণ্য দিতে পারছি না। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অর্ডার সময়মতো দিতে না পারায় ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। এতে ক্রেতারাও আমাদের ওপর এখন বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
আমাদের ওপর বিদেশি ক্রেতারা ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। 
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট সমাধানের পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে গত বছরের শেষ দিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন জানান, গ্যাস সংকটের কারণে সিরামিক কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। পোশাক খাতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। আর স্টিল কারখানায় উৎপাদন কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাসের অভাবে মালিকদের বিভিন্নভাবে কারখানার উৎপাদন ধরে রাখতে হচ্ছে। যেসব কারখানায় গ্যাস সংকটে ফেব্রিকস উৎপাদন করা যাচ্ছে না, তার মালিকরা অন্য জায়গায় পাঠিয়ে ফেব্রিকস উৎপাদন করছেন। গ্যাসের কারণে কেউ কেউ আবার চীন থেকে ফেব্রিকস নিয়ে আসছেন। এতে নিটওয়্যার শিল্প এখন আমদানিনির্ভর রপ্তানি শিল্পে পরিণত হচ্ছে। এতে এর ভ্যালু এডিশন কমে যাচ্ছে। যে ডলার দেশে থাকার কথা তা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এতে ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে যে পরিমাণ পণ্য মালিকদের রপ্তানি করার কথা ছিল তা না হওয়ায়, মাস শেষে শ্রমিকের বেতনও ঠিকমতো দেওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে ব্যাংকের যে ঋণ তাও তারা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না। 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে তার একটি গ্যাসসংকট। এটি যদি শিগগিরই সমাধান করা না যায় তাহলে রপ্তানিমুখী পোশাক খাত সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিরামিক খাতের মালিকরা জানান, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পেলে তাদের কারখানার যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সিরামিক শিল্পের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাস সংকটের কারণে এ শিল্পটি এখন ধ্বংসের সম্মুখীন এবং সিরামিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। 

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি ও মুন্নু সিরামিকস ইন্ড্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম গতকাল বলেন, আমাদের খাতে একটি টেবিলওয়্যার এরই মধ্যে গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের শিল্প খাত ধ্বংসের উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আছে। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিস অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাসের। আমাদের যে সদস্যদের পুরনো গ্যাস সংযোগ আছে তাদের গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের ঠিকই টাকা দিতে হচ্ছে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2