ডলার নিয়ে ফের কারসাজি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:০৫ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আবারো নগদ ডলারের সংকট দেখা দেয়ায় অস্থিরতা শুরু হয়েছে মুদ্রা বাজারে। বেশির ভাগ ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোয় ডলার মিলছে না। ফলে নগদ ডলারের দাম আবারো বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহ থেকে রাজধানীর খোলাবাজারে ডলারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৭-১১৮ টাকায়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী, এখন নগদে প্রতি ডলারের দাম ১১২ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে থাকার কথা। এদিকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় ৭ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি একই কারণে আরও ১০ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, এসোসিয়েশনের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে ডলার বিক্রি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য ভুল দেয়ায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের সংশ্লিষ্টরা জানান, গত জুলাই ও চলতি আগস্ট মাসে ডলার কেনার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ সময়ে অনেকে বিদেশে ভ্রমণের জন্য গেছেন।
আবার শিক্ষার উদ্দেশ্যে অনেকে বিদেশে গেছেন। তাদের প্রায় সবাই নগদ ডলার সঙ্গে করে নিয়েছেন। ফলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের জুলাই-আগস্টে সংকটের সময়ে খোলাবাজারে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১২১ টাকায় উঠেছিল। এরপর ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়ে ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়াতে কারসাজি সহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩ মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত এবং ১১টির বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার এসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠনকে (এবিবি) ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়। পাশাপাশি নগদ ডলারের দামও নির্ধারণ করে দেয়।
ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অন্তত ৪৯ হাজার ১৫১ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য বিদেশে গেছেন। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১১২ এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৬ হাজার ৬০৯। ফলে গত ১৫ বছরে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন গুণের মতো বেড়েছে। ১লা আগস্ট থেকে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে দাম দিচ্ছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো এখন নগদ ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, বেসরকারি খাতের ব্যাংকে যা ১১১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। মানি চেঞ্জারগুলো ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে ১ টাকা বেশি রাখতে পারে।
তবে বাজারে ডলারের সরবরাহ নেই বলে জানান মানি চেঞ্জার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম জামান। তিনি বলেন, ডলারের সরবরাহ নেই, এ জন্য বিক্রিও করতে পারছি না। কিছুদিন আগে সরবরাহ পেয়েছিলাম, তখন ১১২ টাকা দামে বিক্রি করেছি।
এদিকে ব্যাংকগুলোতেও ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বিক্রিও হচ্ছে কম। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশফেরত নাগরিকরাই সাধারণত ব্যাংকে নগদ ডলার সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। যেসব ব্যাংকের খুচরা গ্রাহক বেশি, তারা কিছু ডলার পাচ্ছে। মতিঝিল এলাকার ব্যাংকে নগদ ডলারের অন্যতম জোগানদাতা ছিল জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস। তবে সেখানে এখন ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
জনতা ব্যাংক সূত্র জানায়, নগদ ডলার সরবরাহ থাকলে বিক্রি করা হয়। এখন কেউ আমাদের কাছে ডলার বিক্রি করছে না, এ জন্য আমরাও দিতে পারছি না। তবে মাঝেমধ্যে কেউ বিক্রি করলে আমরা তা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছি। আমরা ডলার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার সংকট থাকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখায় রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯.৩৩ বিলিয়ন। যা গত বছর একই সময়ে ছিল প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
ওদিকে আমদানির দায় মেটাতে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভে নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। বুধবার আইএমএফ’র হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৩.১৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৩১৬ কোটি ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব মতে, রিজার্ভ রয়েছে ২৯.৩২ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৯৩২ কোটি ডলার।