বাজারের আগুন নেভাবে কে?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ আগস্ট,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:১৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর পল্লবীতে প্রায় এক যুগ ধরে বসবাস করছেন শাহজাহান মিয়া। তিন রুমের ফ্ল্যাট ছেড়ে একই ভবনের নিচতলার দুই রুমের ফ্ল্যাটে উঠেছেন গত মাসে। সাব-লেটের ওই বাসায় সাড়ে চার হাজার টাকা কমে থাকতে পারছেন এখন।
শাহজাহান মিয়ার ভাষ্য, বাজারে গেলে চোখে পানি চলে আসে। এমন বিপদে পড়তে হবে কখনই ভাবিনি। ছয় সদস্যের সংসার। মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে। ছেলে কলেজে। টাকার অভাবে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসাও কমিয়ে দিয়েছি। বাজার করে খাওয়াবো নাকি মাকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াবো? একটি করলে আরেকটা হয় না। মাছ-মাংস তো প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। মাঝে মধ্যে ডিম খেতাম। তাও আর সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে কম ভাড়ার ফ্ল্যাটে উঠেছি।
শাহজাহানের এই আক্ষেপ সম্ভবত নগরীর অধিকাংশ মানুষের। সাধারণ মানুষ দিশেহারা প্রায়। আয় বাড়ছে না। ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের লাগামহীন মূল্যে অসহায় হয়ে পড়ছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার। কেউ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, কেউ আবার চলছে ঋণ করে। জীবন চালাতে চরম এক অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে মানুষ।
সরকার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বেশ কাজ করছে। কৃষক সুবিধাও পাচ্ছে নানাভাবে। প্রশ্ন হচ্ছে কৃষকের ফলানো ফসলে ভাগ বসাচ্ছেন অন্যজন। এই অন্যজনকে দমাতে না পারলে বাজারের অস্থিরতা কমবে না।
দক্ষিণ বাড্ডার বাসিন্দা রহিমা। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে এসেছিলেন আট বছর আগে। দুই ছেলে-মেয়ে। অসুস্থ স্বামী প্রায় বেকার। একদিন কাজে গেলে পরেরদিন আর কাজ করতে পারেন না। মানুষের বাসায় কাজ করে দিন পার করলেও এখন ঠেকে গেছেন। সব জিনিসের দাম বাড়ায় ঢাকায় আর থাকতে চাইছে না রহিমার পরিবার।
রহিমার কথা, গ্রামে গিয়ে আইল থেকে কচুশাক তুলে তা দিয়েও ভাত খাওয়া যাইবো। শহরে এক আঁটি কচুশাক কিনতেও এখন বিশ টাকা লাগে। চাল, ডাল, তেল কোন জিনিসটা হাতে ধরা যায়! সব কিছুতেই আগুন! নেভানোর কেউ নাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ মনে করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বিপদে পড়েন সাধারণ মানুষ। মূল্যস্ফীতির প্রথম খড়্গ পড়ে গরিব মানুষের ওপর। সরকারের অব্যবস্থাপনা আর সিন্ডিকেটের কারণে আজকের এই দশা।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য যে চেষ্টা থাকার কথা, সেখানে ঘাটতি আছে। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সজাগ হলে ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা করতে পারতেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনও বাজার পরিস্থিতির জন্য বিশেষ সিন্ডিকেটকে অনেকটা দায়ী করলেন। তিনি বলেন, করোনা আর যুদ্ধ পরিস্থিতি গোটা বিশ্বে সংকট তৈরি করেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য যে চেষ্টা থাকার কথা, সেখানে ঘাটতি আছে। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সজাগ হলে ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা করতে পারতেন না।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সরকার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বেশ কাজ করছে। কৃষক সুবিধাও পাচ্ছে নানাভাবে। প্রশ্ন হচ্ছে কৃষকের ফলানো ফসলে ভাগ বসাচ্ছেন অন্যজন। এই অন্যজনকে দমাতে না পারলে বাজারের অস্থিরতা কমবে না।
একই বিষয়ে মতামত গ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ করা হয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেখভালের ব্যাপার নয়। এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তা, সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা, সরকারের দায়- এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।