তিনটি হাইস্কুলের দাপুটে হেডমাস্টার পড়ে আছেন যাত্রী ছাউনিতে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২১ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মানসিক ভারসাম্যহীন আব্দুর রশিদ। তিনটি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় তিনি ছিলেন মানবিক মানুষ গড়ার কারিগর। তবে আগের জীবনের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে থাকা রশিদ হেডমাস্টারের বর্তমান দিনগুলো কাটছে বগুড়া নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাটের যাত্রী ছাউনিতে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেন আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, পাকিস্তান আমলে উপজেলার ভাটগ্রামে জন্ম তার। নন্দীগ্রাম পাইলট হাইস্কুলের গণ্ডি পেরুনোর পর সত্তর দশকে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে ইন্টারমিডিয়েট আর বিএ পাসকোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর রাজশাহী সরকারি ডিগ্রি কলজ থেকে বিএড করেন। পার্শ্ববর্তী জেলা নাটোরের সিংড়ায় সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবনের শুরু। পরবর্তীতে নিজ এলাকায় বিজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ও কুন্দারহাট ইনছান আলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রশিদ।
কেবল কর্মজীবনে নয়, আব্দুর রশিদের রাজনৈতিক জীবনও উল্লেখযোগ্য। ছিলেন জাতীয় পার্টির থানা সভাপতি। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনেও। তবে ভাগ্যের নির্মমতায় দুর্ঘটনার শিকার হোন। কোমরে আঘাত পাওয়ায় চলাচল করতে পারেন না। মেয়ের বিয়ের পর একমাত্র ছেলে আর স্ত্রীর মৃত্যুর পর মানবেতর জীবন কাটছে একসময়ের প্রভাবশালী এই শিক্ষকের।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, নির্বাচন করতে গিয়ে নিজের সম্পত্তির বেশিরভাগই বিক্রি করেছেন তিনি। আর বসতভিটাসহ বাকী জমি দুই বছর আগে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিক্রি করে দেন। করোনা সংকটের মুহূর্তে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। যদিও এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন অভিমানী হেডমাস্টার। বলেন, আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না। চাইলে সাহায্য করতে পারেন, না করলেও সমস্যা নাই। এক কথা ঘুরিয়ে বার বার বলবেন না।
খুব সহজেই আঁচ করা যায় জীবন বিপন্ন হতে বসলেও আত্মমর্যাদার জায়গাটি অনড়। নিজের পরিবারকে অসম্মান করতে চান না। স্থানীয়রাও চোখের সামনে দেখেছেন আব্দুর রশিদের করুণ পরিণতি। গৃহহীন মানুষটিকে কেউ ঠাঁই দিতে না পারলেও আত্মীয়দের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে খাবার পৌঁছে দেন বলে জানান তারা।
বিষয়টি আমলে নিয়ে সাবেক এই প্রধান শিক্ষকের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিফা নুসরাত। তিনি জানান, মুজিববর্ষের আবাসন প্রকল্পে তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। মানবিক মানুষ গড়ার কারিগর আব্দুর রশিদের হতভাগ্য জীবনের অবসান ঘটুক দ্রুতই। এটাই প্রত্যাশা সবার।