নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ‘মারকুটে’ নেত্রীরা কে কোথায়?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:২৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
পদ-পদবির সঙ্গে সঙ্গে এক সময় ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগের নেতারা। পিছিয়ে ছিলেন না সংগঠনটির নেত্রীরাও। শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, হলে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য, ব্ল্যাকমেইলসহ কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না তাঁরা। এমনকি জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় বৈষ্যম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও তাঁরা ঘটিয়েছেন, হুমকি দিয়েছিলেন ‘৭ মিনিটে ঢাকা খালি’ করার। এ সবই করেছেন তারা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দাপুটে, মারমুখী এসব নেত্রীদের। বেশিরভাগই চলে গেছেন আত্মগোপনে, কয়েকজন পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে, কেউ বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন দল ও সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ক্ষমতাধর কাউকে। একাধিক সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েকজনের বর্তমান অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে।
৭ মিনিটে ঢাকা ক্লিয়ারের ‘ঘোষক’ আতিকা আত্মগোপনে
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখার সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের হয়রানিতে অতিষ্ঠ ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলে যেতে বাধ্য করা, অন্যথায় মারধরের শিকার হওয়ার ভয়ে আতিকা ছিলেন শিক্ষার্থীদের এক আতঙ্কের নাম। বগুড়ার মেয়ে আতিকা ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের খুব ঘনিষ্ঠজন। এর সুবাদে ক্যাম্পাসে তাঁর ছিল সীমাহীন ক্ষমতা। কমিটি বাণিজ্য, সচিবালয়ে তদবিরসহ নানা অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। সাদ্দাম-ইনান যে কয়টি কমিটি ঘোষণা করেছেন, সেখানে লেনদেন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে আতিকার বিরুদ্ধে।
আতিকার ঔদ্ধত্য ছিল ১৫ জুলাই রাতেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘৭ মিনিটে ঢাকা ক্লিয়ার’-এর হুমকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির অপচেষ্টা করেন তিনি। এরপর আর শেষ রক্ষা হয়নি। ১৭ জুলাই রাতে ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি ও হালকা উত্তম-মধ্যম দিয়ে আতিকাসহ ছাত্রলীগের সাত নেত্রীকে রোকেয়া হল থেকে বের করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর পরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তাঁকে আর দেখা যায়নি জনসম্মুখে।
ইডেনে গরম পানি নিক্ষেপকারী নেত্রীদের খোঁজ মিলছে না
ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ইডেন কলেজের বকুলতলায় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা সিদ্দিকা মীম, সুষ্মিতা বাড়ৈ, রুনা আক্তার সুপ্তি, আর্নিকা তাবাসসুম স্বর্ণা, লিমা ফেরদৌস, আশরাফ লুবনা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন নাহার জ্যোতি ও ফারজানা ইয়াসমীন (লুবনা নীলা)। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়ে ৩ আগস্ট গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। শেখ হাসিনার পালানোর পর তাঁরাও গা-ঢাকা দেন।
ইডেনের হলে ৩৮ কক্ষের ‘দখলদার’ রিভা ভারতে
ইডেন মহিলা কলেজের ছয়টি হলের ৩৮টি কক্ষের অঘোষিত মালিক ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি রিভা। এসব কক্ষের প্রতিটিতে আটজন করে শিক্ষার্থী থাকতেন। অভিযোগ আছে, তিনি প্রতি মাসে প্রতিটি সিট থেকে দুই হাজার টাকা করে ‘ভাড়া’ নিতেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সে হিসাবে প্রতি মাসেই তার ছয় লাখ টাকা সিট-বাণিজ্য থেকে অবৈধ আয় হতো।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, রিভা সব সময় থাকতেন মারমুখী অবস্থানে। পান থেকে চুন খসলেই সাধারণ শিক্ষার্থী বটেই, রক্ষা পেতেন না নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে রিভাকে হল ছেড়ে পালাতে দেখেছেন শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিভার ঘনিষ্ঠ আরেক নেত্রী এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, বর্তমানে রিভা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
গ্রিল চুরি করে তদন্তের মুখে পড়া প্রভাতী বিয়ের পিঁড়িতে
ঘরকন্নায় মন দিয়েছেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স (হোম ইকোনমিক্স) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী। গত সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। বর্তমানে সংসারে মনোযোগী হতে চান তিনি বলে এই প্রতিবেদকে সম্প্রতি জানিয়েছেন তিনি। তবে ‘বিপদে আছি’ উল্লেখ করে তদন্ত নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গ্রিল চুরির ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনিও জড়িত ছিলেন, কলেজে তদন্তও চলছে তার বিরুদ্ধে। কলেজের দরজা-জানালা ও দেয়ালের ওপরের জন্য সংরক্ষিত গ্রিল চুরি করে বেচে দেওয়ার অভিযোগে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
সনি-প্রভাতী ক্যাম্পাসে এতেটাই দাপুটে ছিলেন যে, চাঁদা না পেয়ে ক্যাম্পাসে এক সময় শেখ হাসিনা হলের উন্নয়ন কাজও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে তাদের দুজনের সঙ্গে আপসরফা করে কাজ শুরু করেন ঠিকাদাররা। হলে সিট বাণিজ্য, কেন্টিন থেকে নিয়মিত মাসোহারা এবং হলে ব্রডব্র্যান্ড লাইন সরবরাহে আইএসপি কোম্পানিও তাঁদের মাসিক চাঁদা দিত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফেরারি আসামি হয়ে যুক্তরাজ্যে শান্তা
নিজ সংগঠনের কর্মীদের মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জেসমিন শান্তা। মারধরে আহত রোকেয়া হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বী এ ঘটনায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শান্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে সামনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে শান্তার মারধরের শিকার হন তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাসমান দোকান বসিয়ে মাসোহারা তুলতেন তিনি। ২০২১ সালে ১২ অক্টোবর প্রক্টরিয়াল টিম এসব ভাসমান দোকান তুলতে গেলে বাধা দেন তিনি। তখন পিছু হটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শান্তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায়, তিনি এখন যুক্তরাজ্য থেকে নিজের ছবি পোস্ট করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে সরব রয়েছেন।
ছাত্রলীগের কমিটি বাণিজ্যের ‘ক্যাশিয়ার’ নিশি ফেসবুকে সরব
ছাত্রলীগের ক্ষমতাধর নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন বেনজির হোসেন নিশি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিশির ক্ষমতা ছিল অসীম। অভিযোগ আছে, লেখক ভট্টাচার্য্যের কমিটি বাণিজ্যসহ চাঁদাবাজি থেকে প্রাপ্ত অর্থের চার ক্যাশিয়ারের একজন ছিলেন তিনি।
সাবেক সংসদ সদস্য ও শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাইফুজ্জামান শিখরের জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সংগঠনের তৃণমূলেও তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন। নিজ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. এহসানুল হক ইয়াসিরকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পিটিয়ে আহত করেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
এখানেই শেষ নয়। নিশির হামলার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন রোকেয়া হলের নেত্রী ফাল্গুনী দাস তন্বী। তন্বীর মামলায় এখনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলছে নিশির বিরুদ্ধে।
আত্মগোপনে থাকা নিশি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে সক্রিয়, অজ্ঞাত স্থান থেকে দিয়ে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী নানা পোস্ট। সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে ব্যঙ্গ করে এক পোস্টে তিনি লিখেন ‘হায় আল্লাহ, আমি যদি কোনোদিন প্রেমিক হওয়ার সুযোগ পেতাম, আমি জানি না কখনও হতে পারব কি না! যদি হতাম, জীবন দিয়ে প্রেম করতাম, খালি মেয়েদের হৃদয় জয় করার জন্য।—জনৈক ছাত্রীবান্ধব শিক্ষক, ট্রিপল বিয়ে।’
ব্ল্যাকমেইলার-খ্যাত সুপ্তি ভ্রমণে কাটাচ্ছেন সময়
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুনা আক্তার সুপ্তি একই কলেজের সাংগঠনিক সম্পাদক আর্নিকা তাবাসসুম স্বর্ণাকে নিয়ে এক ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। অভিযোগ আছে, তারা ব্যাংকার, আওয়ামী লীগের মাঝারি শ্রেণির নেতা, প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য করে পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।
মাস ছয়েক আগে একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে ব্ল্যাকমেইল করে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ আছে সুপ্তি-স্বর্ণার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ফোনে এনটিভি অনলাইনের কাছে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে তিনি তাঁর সহযোগী স্বর্ণাকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, আমি শুনেছি স্বর্ণা এটা করেছে, টাকাও নিয়েছে।’
সুপ্তি এখন ঘোরাঘুরিতে সময় কাটাচ্ছেন, ছবি পোস্ট করছেন ফেসবুকে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, নওগাঁয় নিজের বাড়িতেই আছেন তিনি।
সরকারবিরোধী পোস্টে সরব পলাতক স্বর্ণা
সুপ্তির মতো একই অভিযোগ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আর্নিকা তাবাসসুম স্বর্ণার বিরুদ্ধে। তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ থাকলেও সক্রিয় আছেন ফেসবুকে। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী নানা পোস্ট দিচ্ছেন স্বর্ণা। সম্প্রতি এক পোস্টে তিনি লেখেন ‘পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন-দেশ দিয়ে গেছি কিন্তু এই দেশে যেই বীজ ছেড়ে দিয়ে গেছি, তারা ৫০ বছর পরে হলেও পাকিস্তানের হয়ে আওয়াজ দেবে! রক্ত কথা বলে, রক্ত কথা বলছে!’
হলে ফাও খাওয়া ফরিদা পারভীন আত্মগোপনে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েত মৈত্রী হল’ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদা পারভীন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পান। সর্বশেষ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হতে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তিনি। তবে সেই আশা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশে ঢাকা সিটি কলেজে প্রভাষক হয়েছিলেন তিনি। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি সেই চাকরি হারান, চলে যান আত্মগোপনে।
কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক এই দাপুটে নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। হলের ক্যান্টিন থেকে ফাও খাওয়া, হলের পার্লার থেকে চাঁদাবাজি ও রূপচর্চা করে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তাঁকে চাঁদা না দিয়ে হলের কোনো উন্নয়নকাজ হতো না, আইএসপি পারত না হলে ইন্টারনেট সেবা দিতে। প্রতি মাসে হলের ডাইনিং থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা নিতেন বলেও অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।
নিয়োগ বাণিজ্যের হোতাদের খবর নেই স্বজনদের কাছেও!
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা, কোহিনুর আক্তার রাখি ও খাদিজা আক্তার উর্মি, উপমুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক রনক জাহান রাইন ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের শক্তিতে। তাঁদের নাম ভাঙিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে নিতেন সুবিধাও। করতেন টেন্ডারবাজি ও নিয়োগবাণিজ্য। ৫ আগস্টের পর তাঁরা সবাই আত্মগোপনে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা রিপা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ জুয়েলকে তুরি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ভাইরাল হন। তিনি এখন কোথায়—বলতে পারেন না তাঁর স্বজন ও পরিচিতজনরাও।
শেলীর শাসনে চলত বদরুন্নেছা কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সেলিনা আক্তার শেলী ছিলেন কলেজের অঘোসিত শাসক। তাঁর কথায় যেন চলত ক্যাম্পাসের সব কিছু। কেউ কথা না শুনলেই নেমে আসত নির্যাতন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করা, কেউ যেতে না চাইলে নির্যাতন করা ছিল তাঁর নিয়মিত কাজ। ক্যান্টিনে খাবারের প্যাকেজের নির্ধারিত মূল্য ৮০০ টাকা থাকলেও শেলীর কথায় নেওয়া হতো এক হাজার টাকা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ২০০ টাকা আত্মসাৎ করতেন তিনি। হলের সিট বাণিজ্যেও নেতৃত্ব দিতেন তিনি। নতুন শিক্ষার্থীদের হলে উঠাতে সিটপ্রতি নিতেন ৭ থেকে ১৩ হাজার টাকা। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, তা কেউ জানে না।
পেটুয়া সাইমুনের খবর জানেন না কেউই
বদরুন্নেসায় সেলিনা আক্তার শেলীর আরেক সহযোগী সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাহাড়সম। হলে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থীদের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চাঁদা না দেওয়া ও কেক কাটার সময় উপস্থিত না হওয়ায় কয়েক শিক্ষার্থীর কক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর ও পরে সেই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমের নজরে পড়েন সাইমুন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন তিনিসহ ছাত্রলীগের নেত্রীরা। বদরুন্নেছায় ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এতটাই ক্ষোভ ছিল যে তাদের না পেয়ে তাদের দুই সহযোগীকে ক্যাম্পাসে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
ধরা পড়ে কারাগারে আরিয়ানা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে নির্যাতন করেছেন। শুধু তাই নয়, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠাতেন। গত ১৭ অক্টোবর ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান সংবাদিকদের বলেছেন, আরিয়ানা পরীক্ষা দিতে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তাঁর সঙ্গে একই হলে বসে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনায় যেন ‘মব জাস্টিস’ না হয়, সেজন্য পুলিশের হাতে তাঁকে সোপর্দ করা হয়।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আরিয়ানার বিরুদ্ধে থানায় মামলা আছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।