তফসিল ঘোষণার পর আরও কঠোর হতে পারে সরকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ নভেম্বর,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:৩০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ এবং আগামী ৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। নভেম্বরের ১৪ কিংবা ১৫ তারিখে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারে সরকার। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান সংকট কাটাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দিক থেকে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে। সব পক্ষকে বলা হচ্ছে শর্তহীন আলোচনায় বসার কথা। তবে বিএনপির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনের সহিংসতা ও বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে এখন শর্তহীন আলোচনাও করতে চাইছে না সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন চলমান রেখেছে বিএনপি। দলটি তিনদিনের অবরোধের পর আজ রোববার থেকে আবারও দুদিনের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে।
এদিকে যে দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে সেই দাবি আওয়ামী লীগও মানবে না এবং সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন হবে এটা অনেক আগেই স্পষ্ট করেছে দলটি। আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যাতে আর ফিরে না আসতে পারে সে বিষয়েও কঠোর অবস্থান রয়েছে দলটি।
একাধিক সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন না হলে পরদিন ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে ১৪ নভেম্বর সম্ভাবনা বেশি বলে সূত্রগুলো জানায়। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকারের অবস্থান আরও পাল্টে যাবে। যে কোনো মূল্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে যাবে।
জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর ইসি একটি নির্বাচনী আচরণবিধিও প্রকাশ করবে। আরচণবিধি অনুযায়ী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন হবে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সেই পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে।
এ বিষয়ে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি এর আগেও অবরোধ দিয়েছিল। ৯৩ দিন চালিয়েছে। পরে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী ও যথাসময়ই হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি হবে। সব দলকেই সেটা মেনে চলতে হবে। সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ করা। এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব। তখন সরকারের দায়িত্ব হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাভাবিক রাখা ও সে ব্যবস্থা সরকার নেবে।’
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ আন্দোলনরত নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনার কথা এসেছে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার কথা বার বার নাকচ করেছে আওয়ামী লীগ। তবে শর্তহীন আলোচনার বিষয়ে দলটির কিছুটা নমনীয়তা ছিল। শর্ত দিয়ে কোনো আলোচনা হয় না, দলটির নেতারা এমন কথাও বলেছেন মিছিল-সমাবেশে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে শর্তহীন আলোচনায়ও যাবে না আওয়ামী লীগ। যেটি দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি জোরালোভাবে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করেছেন। এ ছাড়া ৩১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্রিফিংয়ে উত্তেজনা প্রশমন এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করতে সব পক্ষ কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপে অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সরকার উৎখাত করতে বিএনপি একদফা দাবিতে আন্দোলনের নামে দেশকে অশান্ত করতে নাশকতা, সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে সহিংসতা ঘটিয়ে দলটি সেটা প্রমাণ করেছে এবং এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দলটি অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে পুরনো আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে কয়েকজনের প্রাণ গেছে। আর এসব ঘটনার পর বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির সঙ্গে শর্তহীন সংলাপেরও সুযোগ নেই। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা এসব সহিংসতা, নাশকতা কঠোর অবস্থানে থেকে রাজপথেই প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।
শুক্রবার জেলহত্যা দিবসে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিএনপিকে কঠোর হুঁশিয়ারির পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, যেখানে যেখানে তারা এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কতজন বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্ত আছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ওগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে। অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে একটাও যেন পার না পায়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ২৮ অক্টোবর যে ঘটনা বিএনপি ঘটিয়েছে এরপর আর কোনো শর্তহীন আলোচনারও সুযোগ নেই, থাকে না। এখন কোনো সংলাপ হবে না, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে যে দলগুলো আসবে, সেগুলো নিয়েই নির্বাচন হবে। শনিবার সিইসির সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বলেছেন, বিএনপি নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, এমন কোনো কথা সংবিধানে নেই।