নিবন্ধন না পেয়ে হুঁশিয়ারি
সরকার ও ইসির পতন ঘটিয়ে নিবন্ধন নেব : নুর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ জুলাই,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৪৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নুরুল হক নুর আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। ছবি : ইসি
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রতিষ্ঠিত গণ-অধিকার পরিষদ। দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘আমরা এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পতন ঘটিয়েই আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধনও নেব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
আজ রোববার (১৬ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নুর এ হুঁশিয়ারি দেন।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চাওয়া ১২টি দল থেকে মাত্র দুটি দল টিকেছে পরবর্তী ধাপের বাছাইয়ের জন্য। অর্থাৎ, প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে যাওয়া ১২টি দলের মধ্যে ১০টি দলই বাদ পড়েছে। নিবন্ধন পাওয়ার দৌড়ে টিকে যাওয়া দল দুটি হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি)।
নিবন্ধন ফিরে পেতে আদালতে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নে নুরুল হক নুর বলেন, ‘এই সরকারের নিয়ন্ত্রিত ক্যাঙ্গারো কোর্টে মানুষ ন্যায় বিচার পায় না। ওখানে মানুষ অবিচারের শিকার হয়। আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন করে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করব।’
গণ-অধিকারের সাংগঠনিক বিষয়ে অবহিত করতে সকালেই নির্বাচন কমিশনে হাজির হয় নুরসহ দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ। নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা সকাল বেলা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার সচিব সাহেবকে আমাদের সাংগঠনিক বিষয়ের আপডেটের চিঠি নিয়ে সশরীরে হাজির হয়েছি। এর আগে সাধারণত আমরা কোনো চিঠি নিয়ে সশরীরে এখানে আসিনি। আমরা মনে করেছি যে, নিবন্ধনের কার্যক্রমটা যেহেতু চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং মাঠপর্যায়ে তাদের যেই কর্মকর্তারা আছেন, তারা বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা প্রভাবিত। ডিজিএফআই, এনএসআই নিবন্ধন কার্যক্রমে বাধাগ্রস্তের পরিবেশ তৈরি করে। আমরা আমাদের কার্যক্রম লিখিতভাবে ডকুমেন্টসহ তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি।’
দীর্ঘ সময় পরে নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাৎ পেয়েছেন জানিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘সিইসির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তার কথাবার্তায় একটু অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে আমাদের কাছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভালো কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করলেও এই পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য করতে পারছেন না। তার হাত-পা বাঁধা। আমরা ওনার কথাবার্তা ও কার্যক্রমে বুঝতে পেরেছি।’
যে দুইটি দলকে তারা আজকে নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত করল, সে দলের প্রসঙ্গ টেনে নুর বলেন, ‘এই দুটি দলের কার্যক্রম আপনারা মাঠে কতদিন দেখেছেন? তাদের হেড অফিস কোথায় আপনারা কেউ দেখেছেন? আমি তাদের বলেছি, গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেন, তাদের দলের কার্যক্রম সম্পর্কে মূল ধারার গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পান কি না? তাহলে এরা কোথা থেকে নিবন্ধন পেল, কারা এদের বানাল। শেখ হাসিনা সরকার বানিয়েছে, এই ১৪ দল থেকে যেন আগামীতে ২০ দল হতে পারে এবং বিএনপিকে টেক্কা দিতে পারে। তাই এজেন্সির পরামর্শে নির্বাচন কমিশন এই দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে সরকারের আজ্ঞাবহ এবং তারা যে, দলদাস ভূমিকায় অবতীর্ণ সেটি তারা প্রকাশ করেছে। আমরা বারবার বলেছি, এই মেরুদণ্ডহীন দলদাস কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না।’ যে কারণে বিরোধি দলগুলো এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বলে মনে করেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা পরিষ্কার যে, নিবন্ধন ও নির্বাচনে সময়ক্ষেপণ করে মূল ফোকাস থেকে দূরে সরে যেতে চাই না। বর্তমানে এক দফা আন্দোলন চলছে। এক দফা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ‘যারা (নির্বাচন কমিশন) দালালির ভূমিকায় উপস্থাপন করেছে, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আপনাদের অধীনে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে, দালালির পুরষ্কার আপনারা পাবেন। জনগণ আপনাদের রাস্তাঘাটে দেখলে থুথু মারবে।’
দলীয় কোন্দলের ফলে নিবন্ধন পায়নি এমন মনে করছেন না নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা দলের কিছু নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম থাকে এবং আমরা সেটা কমিশনকে সাংগঠনিকভাবে অবহিত করেছি। যেসব দলগুলো মাঠে একটিভ আছে, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় আছে, তাদের নিবন্ধন দেয় নাই। নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনের শর্ত ছিল ২২টি জেলায় কমিটি থাকতে হবে। আমাদের অলরেডি ৫৩টি জেলায় কমিটি আছে। ইসির শর্ত ছিল ১০০ উপজেলা কমিটি কিন্তু আমাদের ২০০ বেশি উপজেলা কমিটি আছে। তাহলে আমাদের দুর্বলতা কোথায়। তারপরও আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হলো না। আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন চলাকালীন গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য ডেকেছিল।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘মিটিং করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাদেরসহ। যদি আমরা নির্বাচনে যাই এবং তাদের সঙ্গে যদি একমত পোষণ করি, তাহলে দলের নিবন্ধনও দেওয়া হবে ও আগামী নির্বাচনে কিছু সিট দিয়ে এমপিও বানানো হবে। কিন্তু, আমরা পরিষ্কার করেছি যে, আজকে যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নির্বাচন ও বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে যারা ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষমতায় রেখে দেশ ও জাতির সর্বনাশ আমরা করতে পারব না। দলীয় সরকারের অধীনে গণ-অধিকার পরিষদ কোনো নির্বাচনে যাবে না।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘দলগুলোর নিবন্ধনে যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক একজন উপসচিব ও অতিরিক্ত জেলা জজ, যিনি আইন-কানুন সম্পর্কে ভালো বোঝেন। তার সঙ্গে কথা বলে দেখেন, তিনি তদন্ত প্রতিবেদন কী দিয়েছেন? তদন্ত প্রতিবেদনের কপিও আমাদের হাতে আছে। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখে দিয়েছেন, গণ-অধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারা নিবন্ধনের যোগ্য, এটা তদন্ত কমিটি লিখেছে। কিন্তু, নির্বাচন কমিশন সরকার ও এজেন্সির পরামর্শে আমরা সরকারবিরোধী, এ জন্য তারা আমাদের নিবন্ধন দেয়নি।’