avertisements 2

সাবেক প্রধান বিচারপতি নন, প্রধান উপদেষ্টা হবেন বিশিষ্ট নাগরিক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:০০ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতির মধ্যেই ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে’র রূপরেখার খসড়া তৈরি করছে বিএনপি। ১৯৯০ সালের মতো ‘জাতীয় ঐকমত্যে’র ভিত্তিতে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘দৃষ্টান্ত’কে সামনে রেখেই খসড়া রূপরেখা প্রণয়ন করছে দলটি। পাশাপাশি দ্বিতীয় পথ হিসেবে ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের মতো আন্দোলনের মুখে জনমতকে সম্মান জানিয়ে সংবিধান সংশোধনের পথ অনুসরণের প্রস্তাবও রাখবে তারা।

তবে নির্দলীয় সরকারের ‘প্রধান উপদেষ্টা’র পদে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বাছাইয়ের কথা থাকছে না বিএনপির রূপরেখায়। বরং ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ একজন বিশিষ্ট নাগরিককেই ‘প্রধান উপদেষ্টা’ হিসেবে চায় বিএনপি।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির ২৭ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখায়ও তা উল্লেখ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলাকে খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো সামনে রেখেই নতুন পদ্ধতি তৈরি করছেন। পরে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ খসড়া রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। চলমান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে আগামী আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বর মাসে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে দলটি।

রূপরেখার খসড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত বিএনপির একজন নেতা সমকালকে জানান, ১৯৯০ সালের আদলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। বর্তমান সংবিধানের মধ্যে থেকেও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব। ইতোমধ্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীবিষয়ক সেমিনারে তার আইনি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সমাধান বের করতে পারে। কীভাবে পারে, তা আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে রূপরেখায় তুলে ধরবেন বলে জানান রূপরেখার ওই প্রণেতা।

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নেতা জানান, কোনো আইনগত বৈধতা ও সাংবিধানিক সংশোধনী ছাড়াই শুধু সর্বদলীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। কারণ, সময়ের স্বল্পতার কারণে তখন সংসদ অধিবেশন আহ্বান সম্ভব ছিল না। কিন্তু এটি করা হয়েছিল এবং গণতন্ত্রের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাবও সর্বজনবিদিত। পরবর্তী সংসদ দ্বারা অনুমোদনের মাধ্যমে সেই পদক্ষেপের সাংবিধানিক বৈধতাও দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল ভিত্তি ছিল  সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনে ‘জাতীয় ঐকমত্য’। কাজেই এর বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপই ১৯৯১ সালে নির্বাচিত পঞ্চম জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছিল। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে শিগগির এক দফার আন্দোলনে যাব। আশা করি, জনগণের গণআন্দোলনের মুখে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের জন্য দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। রূপরেখা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সরকারও ১৯৯৬ সালে জনমতকে সম্মান দেখিয়ে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। দেশ-বিদেশেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এখন আমরা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের রূপরেখার খসড়া তৈরি করছি। সমমনা দলসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।

রূপরেখা তৈরির সঙ্গে জড়িত দলটির অপর একজন নেতা জানান, গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা, নির্বাচনী বিশ্বস্ততা এবং নিরপেক্ষ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ফিরিয়ে আনতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কী করা যেতে পারে– সে সম্পর্কে প্রয়োজনে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ (প্রয়োজনে করণীয় নীতি) প্রয়োগ করতে হবে। ১৯৯০ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করার সময় যথার্থভাবে তেমন নীতি পরিপালিত হয়েছিল। ‘এটি নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়’– এ মতবাদ বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়োগের সর্বোচ্চ উপযুক্ত সময়।

বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই নেতা জানান, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ‘প্রকাশ্যে’ সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। ১৯৯৬ সালে বিএনপি দেশের জনগণের মতকে সম্মান জানিয়ে ‘পর্দার অন্তরালে’ একমত হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এখন আওয়ামী লীগ সরকারও বিএনপির মতো জনমতকে সম্মান জানিয়ে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে। যে নামেই হোক, তারা সংসদে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা আবার প্রবর্তন করতে পারে।

রূপরেখার সঙ্গে জড়িত সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির খসড়া রূপরেখা ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত ৫৮(খ), (গ) ও (ঙ) অনুচ্ছেদের ধারাগুলোর আলোকেই রচিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব অনুচ্ছেদে নির্দলীয় সরকার সম্পর্কে নিচের মৌলিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল: সংসদ বিলুপ্তির পর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ১১ সদস্যবিশিষ্ট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা; তত্ত্বাবধায়ক সরকার যৌথভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে; প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত হবেন; অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে ১০ জন উপদেষ্টা মনোনীত হবেন; প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর অনুরূপ পদমর্যাদার অধিকারী হবেন; নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে এর কার্যাবলি, বিশেষত দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্য সম্পাদনে ব্যাপৃত থাকবে এবং নিতান্ত প্রয়োজন না হলে নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকবে; তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে; নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত ঘোষিত হবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে নতুন প্রস্তাবের কারণ জানিয়েছে দলটি। দলটি মনে করে, সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যক্তিই হবেন। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতির দলটির প্রতি দুর্বলতা থাকাই স্বাভাবিক। তাই এবার নতুন ফর্মুলায় তারা প্রধান বিচারপতির বাইরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন অন্য পেশাজীবীর সম্মানিত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেবে।   

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2