avertisements 2

এক দফা আন্দোলনের মূল টার্গেট ঢাকা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ জুলাই, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবিতে শিগগিরই এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই এই ঘোষণা আসছে। জানা গেছে, বিএনপির এক দফা আন্দোলনের মূল টার্গেট হচ্ছে ঢাকা। ঢাকায় ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতেই নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মসূচিতে বিপুল সমাগম ঘটিয়ে সরকারকে ‘না’ বলে দেয়ার টার্গেট নেয়া হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় বড় সমাবেশ করে সরকার পতনের অভিন্ন একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে এর দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। একই দিনে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।

অতীত আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ঢাকায় জোরালো আন্দোলন ছাড়া সরকার পতন সম্ভব নয়। তাই এতদিন ধরে তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার কর্মসূচির ক্ষেত্রে ঢাকাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। অর্থাৎ এবার কর্মসূচি হবে ঢাকামুখী অথবা কর্মসূচির মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে ঢাকা। ফলে ঢাকাকে ঘিরেই সিরিজ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হতে পারে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতারভাবে এই আন্দোলন চলবে।

জানা গেছে, দলটির প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী- দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে যে ধরনের কর্মসূচি চলছিল-একদফা আন্দোলনের প্রথম ধাপে আবারো সে ধরনের কর্মসূচিই পালন করা হবে। বাধ্য না হলে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। অর্থাৎ কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক। তবে তা আরো জোরালোভাবে, আরো শোডাউনের মাধ্যমে পালিত হবে। কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করাই হবে বিএনপির লক্ষ্য। আর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকামুখী রোডমার্চ, চলো চলো ঢাকা চলো, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির সাথে ঢাকায় টানা অবস্থানের ঘোষণা আসতে পারে।

এ দিকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের যৌথ ঘোষণার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করা হবে। বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা যার যার প্ল্যাটফর্ম থেকে একই দিনে এই দু’টি ঘোষণা একত্রে দিতে পারে। একদফার আন্দোলন সামনে রেখে গতকাল সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে মধ্য জুলাইয়ে একদফার ঘোষণা এবং চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পুনরায় যুগপৎ আন্দোলন শুরুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। একই সাথে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুগপতের শরিকদের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে শিগগিরই কর্মসূচিসহ সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
একদফার আন্দোলনে কী ধরনের কর্মসূচি থাকবে-জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ১০ দফার ভিত্তিতে আমরা এতদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছি। আগামীতে একদফার কর্মসূচিও হবে শান্তিপূর্ণ। গত কয়েক মাস ধরে আমরা যে ধরনের কর্মসূচি করে এসেছি আবারো সেটাই করব।

গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত গণমিছিল, গণঅবস্থান, মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে ঈদুল ফিতরের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি করছে। আর বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ১৪ জুন চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। এ ছাড়া বিএনপির অপর ৪ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের যৌথ উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ছয় বড় জেলায় এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ দিকে বিএনপির পাশাপাশি যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুগপতের ধারায় দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছে তারা। গত ৪ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ছাড়া আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে ছয়দলীয় এই জোটের।

জানা গেছে, পুনরায় যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলেও বিএনপি ও শরিকদের দলীয় কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। বিএনপির দলীয় কর্মসূচিও ঢাকাকে প্রাধান্য দিয়ে পালন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় বিএনপি মনে করছে-সরকারের পতন ঘটাতে হলে রাজধানী ঢাকায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাই আগামীতে ঢাকাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাকে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ঢাকা মহানগর বিএনপি এখন প্রস্তুত। সরকারি নানা বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করে মহানগর বিএনপি তার প্রমাণও দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন হলেও তখন রাজধানীতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। সে কারণে একদফার আন্দোলনে এবার ঢাকাকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2