জুলাইয়ে বিএনপির অল আউট আন্দোলন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ জুন,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মধ্য জুলাই থেকে অল আউট আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দফা ও যৌথ রূপরেখা নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে মতানৈক্য শেষ না হলেও এক দফার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, এই এক দফা দাবিতে ঢাকায় বড় সমাবেশে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
সূত্রমতে, চলমান যুগপৎ আন্দোলন এক দফার আন্দোলনে রূপ দিতে চাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। কিছু কিছু বিষয়ে মতানৈক্য থাকায় বিরোধীদের আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা আটকে আছে। এই বিরোধ মেটাতে ধারাবাহিক বৈঠকও চলছে। এসব বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলন এবং যৌথ ঘোষণার পাশাপাশি একমঞ্চ থেকে আন্দোলন পরিচালনার বিষয়টিও উঠে আসছে। ঈদুল আজহার পর বিরোধী দলগুলো এক দফাভিত্তিক যৌথ ঘোষণা দিতে পারে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জুলাই থেকে একদফার ভিত্তিতে লাগাতার যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই থাকবে। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কোনো কর্মসূচিতে যাওয়া হবে না। তৃণমূল ও কেন্দ্রে ঘুরেফিরে আবারও গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রা, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি পালিত হবে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন হবে ঢাকামুখী। সে ক্ষেত্রে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকায় জমায়েত এর মতো কর্মসূচি আসবে। দলটির সেই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ‘স্বল্প সময়ের’ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে এক দফা আন্দোলনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার স্থায়ী কমিটির আরেকটি বৈঠকের পর এ ঘোষণার সময় ও আন্দোলনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া বৈঠকে একযোগে আন্দোলনের বিষয়ে যৌথ ঘোষণার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘোষণা দেবে।
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ যৌথ রূপরেখাও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এটিও ঘোষণা করা হবে, কিন্তু দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আন্দোলনের অভিন্ন একদফা ঘোষণার আগেই এটি ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি।
সূত্রমতে, আসন্ন আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আগামী ২১ জুন ঢাকায় একটি সেমিনার করবে বিএনপি। সেখানে ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সেমিনারে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন, কোন প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়, কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হবে।
জানা গেছে, চূড়ান্ত হওয়া গণআন্দোলনের অভিন্ন এক দফায় ৭/৮টি দাবি রয়েছে। সেগুলো হলো: সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান ‘অবৈধ’ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি; মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার; ফরমায়েশি সাজা বাতিল; নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। একদফা আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সরকার উৎখাত করতে বিএনপির চলমান আন্দোলন দ্রুত গতিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে।’
সূত্রমতে, মিত্রদের সঙ্গে মতানৈক্যের পরও ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পথে। বিএনপি প্রণীত ৩১ দফা এই ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ মোটা দাগে তিন দফায় আটকে ছিল।
সেগুলো হলো, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি ও এমপিদের ক্ষমতা এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম। পরবর্তীতে এটা নিয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও উভয়পক্ষ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় সংকট কাটেনি। এমন প্রেক্ষাপটে সংকট নিরসনে আরেকটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তা হচ্ছে, শেষপর্যন্ত ঐকমত্য না হলে যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলো যার যার মতো করে ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ ঘোষণা’ করবে আর অভিন্ন দাবিতে এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। জানা গেছে, গণআন্দোলনের অভিন্ন একদফা চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা’ নিয়েও গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির মধ্যে এখন তেমন কোনো সমস্যা বা মতানৈক্য নেই। এ বিষয়টি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, রূপরেখা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে শুধু শব্দগত কিছু হেরফের হবে। আশা করি, দ্রুতই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের এক দফা ঘোষণার আগেই ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা’ ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ওই সময় পর্যন্ত গণমিছিল, গণঅবস্থান, মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে ঈদের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি করছে। সবশেষ গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এদিকে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এই সমাবেশ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। আর ঢাকায় তারুণ্যের ওই সমাবেশ ঘিরে সরকারকে বড় ধাক্কা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
ঈদের পর থেকে বিএনপির পাশাপাশি শরিকরাও কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুগপতের ধারায় দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছে তারা। গণতন্ত্র মঞ্চ গত ৪ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করেছে। ওই রোডমার্চে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে গত ১২ জুন ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছয় দলীয় এই জোট। এছাড়া অসহনীয় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সমাধানের দাবিতে আজ সোমবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ করা হবে। আর ঈদুল আজহার পরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের কর্মসূচি দিতে পারে গণতন্ত্র মঞ্চ।