avertisements 2

জাকাত সম্পদকে পবিত্র করে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৪১ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম জাকাত। জাকাত অর্থ পবিত্র হওয়া ও বৃদ্ধি পাওয়া। আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মে ধনীর সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ উপযুক্ত ব্যক্তির নিকট প্রদান করাকে জাকাত বলে। জাকাত অবশিষ্ট সম্পদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে, দাতার আত্মাকে কৃপণতার পাপ থেকে পরিশুদ্ধ করে এবং সম্পদে ব্যাপক প্রাচুর্য আনে।

আল্লাহ তায়ালা মানুষের রিজিক ও জীবিকার ক্ষেত্রে সমতা তৈরি করেননি। কাউকে করেছেন সম্পদশালী। কাউকে করেছেন দরিদ্র। আর ধনীর সম্পদে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দরিদ্রের অধিকার। এর মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ হেকমত। আল্লাহ দেখতে চান, ধনীরা তাদের সম্পদের কিয়দংশ দ্বারা দরিদ্রের অধিকার আদায় করে কি না।

জাকাত আর্থিক ইবাদত। এটি ইবাদত হিসেবে নামাজ রোজার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। পবিত্র কোরআনের ৮২ জায়গায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের কথা বলা হয়েছে। যারা দরিদ্রদের অধিকার আদায়ে এই আর্থিক ইবাদত পালন করে তাদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা ইমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, নামাজ আদায় করেছে এবং জাকাত প্রদান করেছে তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের নিকট। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। -সুরা বাকারা : ২৭৭

জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্রমুক্ত করতে চায়। এই লক্ষেই দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় জাকাত ফরজ করা হয়। এর দ্বারা ইসলামের উদ্দেশ্য হলো, সমাজের কোনো স্থানে যেন ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত না হয়ে ওঠে। যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত যথেষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েছে তারা যেন তা জমা করে না রাখে, ব্যয় করা বন্ধ না করে। বরং তা যেন এমনভাবে ব্যয় করে যার ফলে সমাজের আবর্তিত সম্পদ থেকে বঞ্চিতরা জীবিকা অর্জন করতে পারে।

জাকাত আদায় করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তা ছাড়া কোনো ইবাদতই গ্রহণীয় হয় না। অনেক ধনী নির্দিষ্ট দিনে জাকাত প্রদানের ঘোষণা দিয়ে গরিবদের দুয়েকটি শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে বিদায় করে দেয়। আর গরিবরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে জাকাতের ওই কাপড় নিতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও গরিবদের আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য নয়, বরং লোক দেখানো তা বলাবাহুল্য।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, তারা আদিষ্ট হয়েছে আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে, নামাজ আদায় করতে এবং জাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। -সুরা বাইয়িনা : ৫

জাকাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- গরিবদের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন। একটা কাপড় পেলে নিশ্চয়ই কোনো গরিব অভাব-অনটন থেকে মুক্ত হতে পারে না। তাই জাকাতের মূল উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে জাকাত আদায় করতে হবে। দেশের বিত্তশালী লোকেরা যদি তাদের সম্পদের হিসাব করে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করে, তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভাব-অনটন অনেকাংশেই দূর হবে।

বস্তুত আল্লাহর প্রতিটি বিধানের মধ্যেই রয়েছে মানুষের জন্য অপার কল্যাণ। দানশীলতার প্রতি আল্লাহ বেশি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে সেই দান হতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত। জরিমানা কিংবা জবরদস্তি মনে করে জাকাত আদায় করা ঠিক নয়। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনম্র চিত্তে, খুশি মনে তা আদায় করা উচিত।

জাকাতের সঙ্গে রমজানের বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও আমাদের দেশে রমজান মাসে জাকাত প্রদানের প্রচলন রয়েছে। অবশ্য রমজানে সব নেক কাজেরই অধিক সওয়াব দেওয়া হয়। তবে যখনই নেসাব পরিমাণ মালের এক বছর পূর্ণ হবে তখনই জাকাত দেওয়া কর্তব্য। বিলম্ব করা ঠিক নয়। অন্যথায় এমতাবস্থায় ইন্তেকাল করলে গোনাহগার হতে হবে।

জাকাত প্রদান করতে হবে নির্ধারিত খাতে। আল্লাহ তায়ালা জাকাত প্রদানের জন্য আটটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নির্ধারিত খাত ব্যতীত অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করলে জাকাত আদায় হবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। -সুরা তাওবা : ৬০

জাকাত সাধারণ কোনো দান-খয়রাত নয়। তাই কোনো ধরনের যাচাই ছাড়া যাকে ইচ্ছা, যা ইচ্ছা এবং যে পরিমাণ ইচ্ছা দেওয়া যাবে না। সাধারণ দান যে কোনো বৈধ খাতে, যে কোনো ব্যক্তিকে করা যায়। এমনকি ধনী ব্যক্তিকেও দেওয়া যায়। কিন্তু যাকাতের বিষয়টি তেমন নয়। যারা উক্ত আটটি খাত ব্যতীত অন্যত্র জাকাত প্রদান করবে তারা ফরজ দায় থেকে মুক্ত হবে না এবং তারা জাকাত আদায় করেনি বলে গণ্য হবে।

যারা জাকাত আদায় না করবে তাদের ভয়াবহ শাস্তির বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। -সুরা আলে ইমরান : ১৮০

জাকাত অনুগ্রহ নয়। বরং ধনীর ধনে গরিবের অধিকার। ধনীরা এ অধিকার গরিবকে ন্যায্যগণ্ডায় প্রদান করতে বাধ্য। মহান আল্লাহ জাকাতকে সেভাবেই বিধিত করেছেন। এ অধিকার রক্ষার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব ধনীদের দিতে হবে। অধিকার রক্ষায় শঠতা, কপটতা ও ধূর্তামি করলে পেতে হবে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2