বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া মানব পাচারকারী ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা ও তার প্রধান সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার প্রধান সহযোগী মাহমুদ করিমকে (৩৬)।
র্যাব বলছে, এই চক্রটি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ ও বেকার যুবকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভিকটিমদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালায়।
অভিযানকালে মাহবুব ও মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি করা ভুয়া কোর্সের সনদ ৬৫টি, মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টি সহ অন্যান্য উপকরণ জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন অসহায় দরিদ্র লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা করে জমা নেয়।
তিনি আরও বলেন, মাহবুব ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠায়। বিদেশে পৌঁছার পর বিদেশে অবস্থানরত এজেন্ট দিয়ে পুনরায় প্রতারণা করা হয়। তাদের কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। সেখানে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোনো লাইসেন্স নেই। স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
অধিনায়ক আরিফ বলেন, বিদেশে পৌঁছার পর বিদেশে অবস্থানরত এজেন্ট দ্বারা তাদেরকে আবারও প্রতারিত করা হয়। তাদেরকে কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দি করে রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। একটি সময়ে ভিকটিমদের কোনো খাবার দেয়া হয় না। এসময়ে মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ভিকটিমদের অপেক্ষা করতে বলে। সে জানায় কিছুদিন পরে কোম্পানী চালু হবে। তখন তারা বেতন ও কাজের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে বিদেশে অবস্থানরতরা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে নিজেদের চেষ্টায় টিকেট জোগাড় করে দেশে আশার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, এরপর ভিকটিম দেশে ফিরে এলে মাহবুব অভিবাবক এবং ভিকটিমদের উল্টো দোষারোপ করে। সে দাবী করে ভিকটিম আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে কাজের সুযোগ পেতো। এভাবে করোনা মহামারির পূর্ব পর্যন্তু মালয়েশিয়া, দুবাই এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে ভিকটিমদের পাঠিয়ে প্রতারিত করে তাদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।