avertisements 2

বাংলাদেশের ব্যাপারে তুরস্কের এখন আগ্রহ বাড়ছে কেন?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৩ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী, বুধবার,২০২৪

Text

কয়েকদিন আগে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আঙ্কারায় একটি পার্কের নামকরণ করা হয়েছে।

সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা এবং মাদক পাচার রোধে বাংলাদেশ এবং তুরস্ক একসাথে কাজ করতে রাজি হয়েছে। শনিবার রাতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তুর্কী সরকার এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, এই সমঝোতা চুক্তির অধীনে মূলত বাংলাদেশের পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে তুরস্ক।

সেই সাথে সন্ত্রাস দমন এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশ পরস্পরের সাথে নিরাপত্তা তথ্য বিনিময় করবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সমঝোতা চুক্তি আগেই হবার কথা ছিল, কিন্তু মহামারীর কারণে সেটা আগে হতে পারেনি।

এখন এমওইউ স্বাক্ষরের পর দুই দেশে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি হবে। তখন কী ধরণের ট্রেনিং বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন সেটা ঠিক করবে ওই কমিটি, এরপর টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস কী হবে--সেসব ঠিক করা হবে। তারপরই এ নিয়ে বিস্তারিত কাজ শুরু হবে।

এছাড়া মাদক চোরাচালান ঠেকানোর ক্ষেত্রে কিভাবে প্রশিক্ষণ এবং তথ্য বিনিময় করা হবে সেটিও ঠিক করা হবে তখন।

কর্মকর্তারা বলেছেন, মূলত প্রশিক্ষণটি হবে সামরিক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাহিনী যেমন সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের এই তালিকায় রাখা হয়নি। তবে তালিকায় রয়েছে র‍্যাব, যেটি বাংলাদেশে পুলিশের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত এবং যেটির ছয়জন কর্মকর্তার ওপর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

তবে ঠিক কী ধরণের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কর্মকৌশল ঠিক হয়নি। সেটি নির্ধারণের জন্য দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি কাজ করার পর তা ঠিক হবে---আর তার পরেই শুরু হবে সে প্রক্রিয়া।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সাথে এ ধরণের চুক্তি এবং সমঝোতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

এছাড়া সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত যে কোন তথ্য পরস্পরের সাথে শেয়ার করার পাশাপাশি সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং মাদক চোরাচালান ঠেকানোর ক্ষেত্রেও তথ্য বিনিময় করার কথা দুই দেশের। বাংলাদেশের ব্যাপারে তুরস্কের এখন আগ্রহ বাড়ছে কেন?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবার পেছনে প্রধান কারণ উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এক ধরণের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যার ফলাফল এ ধরণের সহযোগিতা।

তিনি বলেন, ‘কোন একটি দেশের কিংবা একটি ব্লকের ওপর নির্ভর না করে মাল্টিপল (একাধিক) দেশ ও ব্লকের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশের সাথে যেমন সামরিক সহযোগিতার চুক্তি আছে তেমনি তুরস্কের সাথেও সন্ত্রাস দমনের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ।’

এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্বের বিষয়টিও বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিগুলোর আগ্রহের কারণ তৈরি করেছে।

অধ্যাপক ইয়াসমিন বলছেন, এর বাইরে তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কিনছে, সেটাও বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের আগ্রহের আরেকটি কারণ। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ এর প্রেসিডেন্ট, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব) এএনএম মুনীরুজ্জামান বলছেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও আগ্রহের কারণ রয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘তুরস্কের সামরিক বাহিনী বেশ আধুনিক, ফলে দেশটি থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া এবং সমরাস্ত্র কেনা---দু'দিক থেকেই লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ।’

এছাড়া মুসলিম বিশ্বে তুরস্কের অবস্থান শক্ত করাও একটি বড় লক্ষ্য তুরস্কের কাছে। মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সমর্থন এখানে চাইতে পারে তুরস্ক। আর মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির নেতৃত্ব এবং ন্যাটোর অংশীদার হিসেবেও সক্ষমতা বাড়ছে তুরস্কের, ফলে একটি প্রভাব বলয় তৈরি করবার প্রচেষ্টা রয়েছে দেশটির।

এখন বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এর সঙ্গে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হবার কারণে বাংলাদেশের একটা খ্যাতি আছে, সেই সাথে আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ একটি অবস্থান নিতে পেরেছে, যেটি তুরস্কের আগ্রহের অন্যতম কারণ হতে পারে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2