avertisements 2

‘গুমের শিকার পরিবারগুলো এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ অক্টোবর,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৯:১৯ পিএম, ২৬ অক্টোবর,রবিবার,২০২৫

Text

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম, মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি, ব্যারিস্টার আরমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিটা গুম, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বচ্ছ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে, ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনার সময়ে শুধু বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভিন্নমতের মানুষদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল অডিটোরিয়ামে ‘আয়না ঘরের সাক্ষী, গুম জীবনের আট বছর’ নামক এক গ্ৰন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিরা।

অনুষ্ঠানে তারা বলেন, যাদের সন্তানরা গুম বা নিখোঁজ হয়েছে, তাদের পরিবারগুলো এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। অনেকেই পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারছেন না, চাকরি পাচ্ছেন না, বাসার ভাড়া দিতে পারছেন না। বিপ্লবের পরও তাদের জীবন স্বাভাবিক হয়নি। সরকারের উচিত এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো।

গ্ৰন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জুলাইয়ের ৩৬ দিন বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। শত শহীদের রক্তের উপর দিয়ে অনেক আহত যোদ্ধা এখনও আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে একটা নতুন অবস্থায় এটা দাঁড়িয়েছে, যখন গুমের শিকার হওয়ার কথা বলতে পারছেন। আমরা জানতাম না, তারা কোথায় ছিল। ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশকে গুম করে ফেলেছিল। বাংলাদেশকে বন্দি করে ফেলেছিল। বাংলাদেশকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পেরেছে।

আদিলুর রহমান খান বলেন, সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের জন্য চেষ্টা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশে জনগণ এবং যারা নির্যাতিত মানুষ বিচার পাবেন অন্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, জার্মানিতে যেভাবে নাৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতালিতে যেভাবে মুসোলিনিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এক‌ইভাবে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, হাসিনা ও তার দোসরদের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করবে বাংলাদেশপন্থি যারা আছে তারাই। এর বাইরে যারা ফ্যাসিবাদী কায়েম করেছে, গুম খুন করেছে তাদের রাজনীতি করার কোনও অধিকার নেই। এক‌ই সাথে গুম, খুন, গণহত্যা, শিশুহত্যার সঙ্গে জড়িত সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের যারা ছিল সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সব কিলার জেনারেলদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এরাই গত ষোল বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেছে।

সাদিক কায়েম বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে বিভিন্ন ফ্রেমিং করে গুম করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমার গুমের শিকার আরমান ভাইসহ অনেককে ফিরে পেয়েছি। কিন্তু অনেকেরই খবর এখনও পাইনি।


গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন ও মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, প্রতিটা গুমের, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বচ্ছ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে, ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনার সময়ে শুধু বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভিন্নমতের মানুষদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনকালীন যারা গুম হয়েছেন তারা গোপন সেলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এতে ছিল ইলেকট্রিক শক, মেটাল রড দিয়ে ঝুলিয়ে নির্যাতন, লেথাল ইনজেকশন এবং লাশ গোপনভাবে ফেলার ঘটনা। 

তিনি আরও বলেন, আজ আমরা দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি, আজ আমরা বিচার চাইতে পারছি। আগের দমনযন্ত্রের কিছু অংশ এখনো সক্রিয় আছে এবং সত্য উদঘাটনে বাধা দিচ্ছে। ফলে অনেক পরিবার এখনও জানে না তাদের প্রিয়জন জীবিত নাকি মৃত।

সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, অবশ্যই আওয়ামী সরকারের অধীনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো গুম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দমনমূলক রাষ্ট্রের মূলে রয়েছে নির্বিচার আটক। গুম ঘটে এবং তা ভয়াবহ, কিন্তু সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বিচার আটকের ঘটনাগুলো হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল।

গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকে একটি দীর্ঘ বিচার উল্লেখ করে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, সেই বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগে সংঘটিত বিচারের চেয়ে অনেক বেশি ন্যায্য হবে বলে আশা করা যায়। কারণ, যে প্রমাণগুলো এখন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য।


জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, নিঃসন্দেহে গুম কমিশন ভালো কাজ করছে। গুম কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের কাছে জমা হওয়া গুমসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর সমাধান হয়নি। সে জন্য প্রশ্ন উঠছে, গুম কমিশনে জমা হওয়া ১ হাজার ৯০০টি মামলার সমাধান কীভাবে হবে? এই মামলাগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে-গণমাধ্যমেরও উচিত সেই প্রশ্ন তোলা। এ ছাড়া যারা কাউকে তুলে নিয়েছিলেন বা আটক করেছিলেন, শুধু তাদের নয়, যারা পরিকল্পনা করেছিলেন, নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাদেরও যেকোনো আইনে অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) বলেন, যাদের সন্তানরা গুম বা নিখোঁজ হয়েছে, তাদের পরিবারগুলো এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। অনেকেই পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারছেন না, চাকরি পাচ্ছেন না, বাসার ভাড়া দিতে পারছেন না। বিপ্লবের পরও তাদের জীবন স্বাভাবিক হয়নি। সরকারের উচিত এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো।

তিনি বলেন, হাজারো পরিবার আছেন, তাদের কষ্টের কথা কেউ শুনে না। সাংবাদিকরা তাদের কথা পৌঁছে দিন। সরকার কিছু না করলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

ব্যারিস্টার আরমান বলেন, আমি চাই এমন বাংলাদেশ যেখানে থাকবে না আঞ্চলিক বৈষম্য, ধর্ম বা বর্ণের বিভাজন। শুধু মানুষ, শুধু নাগরিক। সবাই হাত মিলিয়ে একসাথে বসবাস করবে। সব ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশকে বসবাসযোগ্য হিসেবে তৈরি করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2