হাসিনাকে ফেরাতে কঠোর ঢাকা : উপদেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫ | আপডেট: ০৪:৩২ পিএম, ২২ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। এর আগে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এজন্য তাঁকে বন্দিবিনিময় সুবিধা চায় ঢাকা। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশিং সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গতকাল সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে নভেম্বরে রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পুলিশের মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোন উপায়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী হবে।’
গতকাল আইন মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠি দিয়েছি। ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি লঙ্ঘন হবে। প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তা নেব।’ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কর্মকা তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে বহু “গায়েবি” মামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব মামলা চিহ্নিতের কাজ শুরু হয়। তবে এ উদ্যোগ (গায়েবি মামলা প্রত্যাহার) নিতে দেরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২৫ জেলায় আড়াই হাজারের বেশি মামলা গায়েবি হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এর বাইরেও অনেক থাকতে পারে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আশা করছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের কাজ সম্পন্ন করতে পারব।’
গায়েবি মামলা শনাক্তে কয়েকটি মানদ নির্ধারণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যেমন মামলাগুলো পুলিশ দায়ের করেছে কি না; বিস্ফোরক আইনে করা কি না; অস্ত্র আইনে করা কি না; কিংবা পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কি না। গায়েবি মামলা প্রত্যাহারে এসব প্রবণতা আমরা নজরে রেখেছি। এসব মামলায় অনেক অজ্ঞাত আসামি থাকে। আমরা দেখেছি, মামলাগুলো হতো বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বড় বড় আন্দোলনের আগে-পরে।’ তিনি বলেন, ‘তিনটি ভুয়া নির্বাচনের আগে-পরেও হয়েছে। এসব ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আমরা আড়াই হাজারের বেশি মামলা শনাক্ত করেছি। এগুলো প্রত্যাহার হবে আশা করছি।’
স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে করা ৩২২টি স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলার বিচার চলছে। এগুলো প্রত্যাহার করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রাখার অবকাশ আছে। ৩২২টি মামলার মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১১৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা আশা করছেন দুই সপ্তাহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত যতগুলো মামলা আছে সব প্রত্যাহার করা হবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিয়ের কাবিননামায় দীর্ঘদিন আমরা কিছু শব্দ নিয়ে অনেক আপত্তি শুনেছি, বিয়ের কাবিননামায় “কুমারী” শব্দ প্রত্যাহার করে শুধু “অবিবাহিত” শব্দ থাকবে। এ ছাড়া বিয়ের ক্ষেত্রে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে উচ্চ আদালতে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বিচারক নিয়োগ হবে দক্ষতার এবং দলনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে। বিচারপতি নিয়োগের জন্য “সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ”-এর গেজেট জারি করা হয়েছে। এ গেজেট অনুযায়ী আপিল বিভাগ, আটর্নি জেনারেলসহ ছয় সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। দক্ষ ও যোগ্য লোকদের নিয়োগ বাছাই করার পর সাক্ষাৎকার নেবে কমিশন। নীতিমালার আলোকে যে-কেউ আবেদন করতে পারবেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গত সরকারের আমলে যে এত অনাচার হতো, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো, মানুষকে যে দমন-নিপীড়ন করা হতো এর বড় প্ল্যাটফরম ছিল উচ্চ আদালত। সেখানে মানুষ প্রতিকার পেত না। এর কারণ ছিল রাজনৈতিক সরকারগুলো দলীয় বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্যদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিত।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ ও যোগ্য লোকেরা নিয়োগ না পেলে ১৭ কোটি মানুষের মানবাধিকারের বিষয়টি অমীমাংসিত ও ঝুঁকির মুখে থেকে যায়।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি ভালো আইন করার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে কাজ চলার পাশাপাশি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের বিষয়েও আইন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।’