নখদন্তহীন দুদক হঠাৎ নড়েচড়ে বসেছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:০৩ পিএম, ১০ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আবারও নড়েচড়ে বসেছে। সম্প্রতি এক দিনেই সাবেক ৪১ মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিদিন এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নাম; যাদের গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী বলা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন যারা ক্ষমতায় আসে, দুদক তাদের ইশারায় নড়েচড়ে। বিরোধী মতের মানুষের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ ঢালাওভাবে আমলে নেয়। বিপরীতে ক্ষমতাসীনদের জন্য সুরক্ষাবলয় তৈরি করে। ক্ষমতার পালাবদলে সব সময় বাছবিচার ছাড়াই প্রত্যাহার করে মামলা। বড় পদ, মুখ কিংবা প্রভাব দেখে ব্যবস্থা না নিতে দুর্নীতিবিরোধীরা পরামর্শ দিলেও তাতে কান দেয় না কমিশন। কর্মকাণ্ড দিয়েই নিজেকে ক্ষমতাসীনদের ‘তল্পিবাহক’ প্রমাণ করে তারা। এ অবস্থায় জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে সংস্থাটির আমূল সংস্কার দরকার বলে মনে করছেন তারা।
সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশন শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছেন দলটির মতাদর্শের ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলারা। তাদের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ সংখ্যা প্রায় ১৫০। আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালালেও, বিএনপি এখন সম্মুখসারিতে। তাদের ঘরানার অনেককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া শুরু করেছে দুদক।
আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতা খর্ব করার ঘটনায় তৎকালীন চেয়ারম্যান দুদককে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্র’ বলেছিলেন। বর্তমান কর্মকাণ্ডে কমিশনের নখদন্তের প্রখরতা পাওয়া যাচ্ছে ক্ষমতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। অতীতে বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, হাসান মশহুদ চৌধুরী, মো. বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে গেছেন। তাদের সময়ে ক্ষমতাসীন কাউকে আইনের মুখোমুখি করা হলেও, তা ছিল লোখ দেখানো।
দুদকে অস্থিরতা
অন্তর্বর্তী সরকার এসে আওয়ামী লীগ আমলের জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছে। তবে ব্যতিক্রম দুদক। এখানে বহাল তবিয়তে আছেন আগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের মাধ্যমেই চলছে দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও বিচারিক কার্যক্রম। তবে এ নিয়ে কমিশনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ঢালাওভাবে শত শত মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কাজ করার সক্ষমতা দুদকের নেই। ফলে অস্থিরতা নিরসনে দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য নির্ধারণ জরুরি। এর মধ্যে আলোচিত, ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে– এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করে কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে। এসব করা গেলে মানুষের মধ্যে দুদক নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দুদক আবারও প্রমাণ করছে– যারা ক্ষমতা বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকেন, পরিচয় ও অবস্থানের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বিপরীতে ক্ষমতা হারালে বা অপসারণ হলে, তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এমনই শত শত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা। তবে এসব পদক্ষেপ কতদূর যাবে, তাই দেখার বিষয়।’
দুদক কমিশনার জহুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। দু’বার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর পিএসের মাধ্যমে দেখা করার অনুমতি চাইলেও সাড়া দেননি জহুরুল হক।
দুদকের জালে আ’লীগ-বিএনপি
আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো, ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে দুদক। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা; আবার কারও কারও নামে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে কমিশন। খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজনের মামলায় সাজাও ঘোষণা করা হয়।
একইভাবে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীসহ প্রভাবশালী নেতারা দুদকের জালে পড়েছিলেন।