অনেক উদারতা দেখিয়েছি, আর কথা বলার মতো কিছু নেই
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ মে,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫৬ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কাদের সঙ্গে আলোচনা করব? এক তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তারপর আবার আমার বাবা-মা ও ভাই-বোনদের খুনি, যুদ্ধাপরাধী। তারপরও দেশের স্বার্থে, দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে অনেক উদারতা দেখিয়েছি। তবে এখন আর তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো কিছু নেই।’ যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ২১ হাজার নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার করার পর সেসব মানুষের পরিবারগুলো যে কষ্ট পাচ্ছে। যারা পুড়েও বেঁচে আছে, তাদের সকলের চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করেছি। পোড়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে আর ওদের (বিএনপির) সঙ্গে বসতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয়, ওদের সঙ্গে বসলে আমি পোড়া মানুষগুলোর গন্ধ পাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে বারবার আলোচনা করেছি। কিন্তু আসলে বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যেটি সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক শাসক। যে ১৯৭৫ সালে আমার বাবা, মা, ভাই, বোনকে হত্যা করেছে। একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। একজন সেনাপ্রধান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে চেয়ারে বসল। বসে হ্যাঁ-না ভোটের নামে নাটক, সেখানে না নয়, সব হ্যাঁ ভোটই হয়ে গেল। পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করল। এর পরে গিয়ে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করল, ক্ষমতায় বসে থেকে। এ কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় বসে থেকে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা হয়েছে নেটাই হচ্ছে বিএনপি।’
ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সৃষ্টির পর ১৯৮৯ সালে যে নির্বাচনটা করল, সেটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভোট কারচুপির যে দৃষ্টান্ত বলতে গেলে তারাই সৃষ্টি করল। হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট এবং জাতীয় সংসদের ভোট। এই যে আমাদের যে ভোট কারচুপির যে কালচারটা শুরু করল, সেটা কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য। আমাদের দেশের গণতন্ত্রের করুণ ইতিহাস। কারণ, আমি বলব সামরিক শাসকেরাই কিন্তু ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণের সমস্ত ক্ষমতাটা সেনানিবাসেই বন্দি ছিল।’
র্যাবের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকার কী কী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে? ভয়েস অব আমেরিকার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে আমেরিকার পরামর্শেই কিন্তু এই র্যাবের সৃষ্টি হয়েছে। র্যাবের প্রশিক্ষণ থেকে সবকিছুই আমেরিকার করা। যখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসল, আমরা সবকিছু ঠিকমতোই চালাচ্ছি। তখন আমেরিকা কী কারণে র্যাবের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। র্যাবের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তার বিচার হয়। র্যাবের কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লে সঙ্গেসঙ্গে আমরা তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসি। যেটা অন্য কোনো দেশে নেই, এমনকি আমেরিকাতেও নেই। এই আইনের শাসনটা আমাদের দেশে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একজন প্রতিমন্ত্রীর মেয়ের জামাই র্যাবের সদস্য থাকা অবস্থায় একটি অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। তাকেও সঙ্গেসঙ্গেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সে শাস্তিও পেয়েছে। বিষয়টিকে আমরা এভাবেই দেখছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু, হঠাৎ করে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে জঙ্গিরা আবার উৎসাহিত হয়ে গেল বলে মনে হয়। এটাই হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আইনের শাসন বলবৎ রয়েছে। আমরা সবকিছু আইনের দৃষ্টিতে দেখি। আবার বিনা অপরাধে কেউ যাতে শাস্তি না পায়, এটাও আমরা দেখি।’