সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:২১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হামলার শিকার হয়েছে রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের বাসভবন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গুলিতে দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এ হামলায় কেউ হতাহত হননি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা খার্তুম থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে মাদানী শহরে রয়েছেন।
কর্মকর্তারা জানান, আরএসএফ ও সেনাদের সংঘর্ষের মধ্যে ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ দূতাবাসের জানালা ও দেয়াল ভেদ করে গুলি ঢুকে পড়ে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে অন্য দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতিমধ্যে এই বার্তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রচার শুরু করেছে। সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হবে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এই তথ্য জানান।
ফেসবুক পোস্টে শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরে নির্ভর করবে, কীভাবে কোন পদ্ধতিতে তারা যাত্রা করবেন। সবাইকে দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে নিবন্ধন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি দূতাবাসে যোগাযোগ না করার জন্য। কারণ, সকলেই ব্যস্ত এবং রুটগুলো নিরাপত্তার খাতিরে না জানানোই ভালো। আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, সুদানে ক্ষমতার লড়াইয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলেও দেশটিতে বাংলাদেশি মিশন চালু রাখা হবে। সেখানে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশির অবস্থানের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুদানে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে গত শনিবার মিসর, পাকিস্তান ও কানাডার দেড় শতাধিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়। সমুদ্রপথে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে গেছে। কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়ার পর খার্তুমে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সংঘাতের কারণ
সুদানে কীভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দেশটিতে বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে আছেন আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেদতি দাগালো।
বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা, কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য তাদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়। এ ঘটনা সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে পূর্ণমাত্রার লড়াইয়ে রূপ নেয়।
৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি
সোমবার সুদানে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ। ওই দিন রাত ১০টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বরাতে জানায় বিবিসি।
ব্লিঙ্কেন জানান, আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা আলোচনার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই পক্ষ।
সর্বশেষ ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি এই যুদ্ধের মধ্যে ঘোষণা করা তৃতীয় চুক্তি, তবে কার্যত এতে সমাধান আসেনি। ঈদুল ফিতরের জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও সহিংসতা থামেনি সুদানে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সুদানে সংঘর্ষে চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ (যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু) সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশে।