টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে ঘুরছেন আ.লীগ নেতার ছেলে!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:১৫ এএম, ২৫ অক্টোবর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ১২:০৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফ উল আলম শরিফের ছেলে জম্মুন মিশরী অপুর কাছে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আগামী ২৯ অক্টোবরে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে অপু টাকা নিয়ে কাউন্সিলরদের ভোট কেনার জন্য প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে অপু প্রকাশ্যে টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এত টাকা কোথা থেকে, কীভাবে এলো সে বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন করে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন-সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মরহুম গাজী ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাদী আলমাজী জিন্নাহ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আবু বকর সিদ্দিক।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয়, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফ উল আলম শরিফ ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম হাসান সুমন।
প্রার্থীরা রাত-দিন কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সর্বশেষ ২০১৩ সালে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আব্দুল হাদী আলমাজী জিন্নাহকে সভাপতি ও শরিফ উল আলম শরিফকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়।
দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিল। জাতীয় দিবস, বিশেষ দিবস ও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোও পালন করা হয়েছে দায়সাড়াভাবে।
এছাড়া দীর্ঘদিন মূল দলের সম্মেলন না হওয়ায় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে এসব কারণে দলে বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা না দিলেও এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
চলতি মাসের অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সম্মেলনের হওয়ার ঘোষণার পর থেকে উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
তবে কাউন্সিলরদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে কৌশলে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলরের তালিকায় এদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরিফ উল আলম শরিফের ছেলে জম্মুন মিশরী অপুর টাকাভর্তি ব্যাগের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবি দেখে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও রায়গঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফের বিরুদ্ধে উপজেলায় জমি দখল, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য, এমপির বরাদ্দকৃত টিআর কাবিখা হরিলুট, বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও কয়েক কোটি টাকার জমি ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে অপুর বাবা শরিফুল ইসলাম শরিফ সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। সম্মেলনকে সামনে রেখে তিনি প্রকাশ্যে এভাবে টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন না। এটা প্রশাসনের দেখা উচিত।
রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল্লাহ বলেন, ‘রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফের ছেলে টাকার ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সম্মেলনকে সামনে রেখে কোনো প্রার্থীর ছেলে প্রকাশ্যে টাকার ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফ উল আলম শরিফ বলেন, ‘কাউন্সিল সামনে আসলে প্রার্থীদের নামে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেই থাকে। আমার ছেলে অপুর যে ছবিটা নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে আসলে সেই ছবিটা গত বছরের।
ওর বন্ধু রায়হান ধান কেনার সময় ১০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে হাটে যাবার সময় ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়। এই ছবি নিয়ে এখন যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে তা ঠিক না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাউন্সিলদের তালিকা তৈরি করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এখানে আমার বা আমাদের কোনো হাত নেই। সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’