ধরে রাখলেন শ্বশুর, পায়ের রগ কাটলেন স্বামী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৩৭ পিএম, ৫ অক্টোবর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৩২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ তুলে হ্যাপী আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে হ্যাপী আক্তারের দাবি যৌতুক না পেয়ে স্বামী ও শ্বশুর মিলে তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন।
ঘটনা জানতে পেরে বানারীপাড়া থানা পুলিশের একটি দল অভিযুক্ত স্বামী ও শ্বশুরকে আটক করতে রোববার (০৪ অক্টোবর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। তবে আত্মগোপন করায় তাদের আটক করতে পারেনি পুলিশ।
অভিযুক্তরা হলেন, হ্যাপী আক্তারের স্বামী বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের হাওড়া বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. রাসেল বালী ও শ্বশুর মো. হাসান বালী।
হ্যাপী আক্তার একই এলাকার মো. রাজ্জাক হাওলাদারের মেয়ে। ১০ বছর আগে রাসেল বালীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ৮ বছরের এক মেয়ে ও ৩ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।
হ্যাপী আক্তার বলেন, বিয়ের সময় তার বাবার বাড়ির পক্ষ থেকে যৌতুক হিসেবে কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র দেয়া হয়। বিয়ের ৬ মাসের মাথায় স্বামী রাসেল বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দিতে তাকে চাপ দিতে থাকেন এবং তার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে ৪৭ হাজার টাকা এনে দেন তিনি। কিন্তু আরও টাকা এনে দিতে বলেন স্বামী রাসেল।
হ্যাপী আক্তার বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলাম। রাসেলকে বার বার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করি। তবে আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা না পাঠালে আমাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে না বলে রাসেল জানিয়ে দেন। চার দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর শুক্রবার (২ অক্টোবর) সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এক চিকিৎসককে দেখান। চিকিৎসক এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে তাকে রিপোর্ট দেখাতে বলেন। তবে রাসেল শুধু আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
ওই দিনই আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরদিন শনিবার সকালে রাসেলকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করি। এবারও টাকা না এনে দিলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে না বলে রাসেল জানান। এরপর মেয়ে রিমিকে বাড়িতে রেখে ছেলে রাতুলকে নিয়ে রিকাশায় করে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিই।’
হ্যাপী আক্তার বলেন, ‘কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি পেছনে স্বামী রাসেল ও শ্বশুর হাসান বালী আসছেন। এ সময় রাসেলের হাতে গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি ছিল। ভয় পেয়ে রিকশা চালককে দ্রুত চালাতে বলি। সরকারি বানারীপাড়া মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন (পাইলট) সংলগ্ন সড়কে তারা আমাকে ধরে ফেলেন। রিকশা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আমাকে মারধর শুরু করেন।
রাসেলের কিল-ঘুষিতে আমি সড়কের ওপর পড়ে যাই। এ সময় শ্বশুর হাসান বালী আমার হাত ধরে রাখেন এবং স্বামী রাসেল তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আমার বাম পায়ের রগ কেটে দেন। আমি ও ছেলে রাতুলের চিৎকার শুনে পথচারীরা এগিয়ে এলে রাসেল ও শ্বশুর হাসান বালী পালিয়ে যান।
পরে পথচারীরা আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
হ্যাপী আক্তার বলেন, তারা বিয়ের পর থেকে অনেক নির্যাতন করেছে। ছোট ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সহ্য করে গেছি। আর নয়, বানারীপাড়া থানার ওসির সঙ্গে মুঠোফোনে আমার কথা হয়েছে। তাকে সব ঘটনা বলেছি। তিনি মামলা করতে বলেছেন। আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
স্ত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে রাসেল বালী মুঠোফোনে জানান, ‘আমি ধান চালের ব্যবসা করি। ব্যবসার কারণে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। দূরে গেলে সেদিন রাতে আর ফেরা হয় না। সেই সুযোগে স্ত্রী হ্যাপী অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে গড়ে। তার একাধিক পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে রয়েছে। শনিবার সে তার এক পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর উদ্দেশ্যেই ব্যাগে কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। পিছু নিলে দেখে ফেলে। পারে হ্যাপীকে বাধা দিতে গেলে আমাকে গালাগালি ও মারধর শুরু করে। বাবা তাকে থামাতে হাত ধরেছিলেন। এ সময় হ্যাপী আমাকে লাথি মারে। রাগে আমি ছুরি দিয়ে বাম পায়ে আঘাত করি।’
স্বামীর অভিযোগ প্রসঙ্গে হ্যাপী আক্তার বলেন, আমাকে জড়িয়ে পরকীয়ার যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আমাকে রাসেল ছুরি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি যেন মামলা না করি রাসেল সেজন্য এসব রটাচ্ছে।
বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এসএম কবির হাসান বলেন, শনিবার সকালে হ্যাপী আক্তার নামে এক নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। তার বাম পায়ের রগ কাটা ছিল। সামান্য কিছু অংশ লেগে ছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে বরিশাল মেডিকেলে রেফার করা হয়।
বানারীপাড়া থানা পুলিশের ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর রাসেল বালী ও তার বাবা হাসান বালী এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি হ্যাপী আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।