খুলনার এক অতি সাধারণ মেয়ের অসাধারণ অর্জন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:১০ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ১২:৩৯ এএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারার রূপসা চরের কিশোরী আঁখির (১৭) লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় দারিদ্র্যের কশাঘাতে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার পরিবার। সেই মেয়েটি করোনা মোকাবিলায় মাস্ক তৈরি ও দরিদ্রদের কাছে কম দামে সেটি বিক্রি করার জন্য পেলো জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতি। গত ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে চার বাংলাদেশিকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।
অন্য তিনজন হলেন ব্র্যাকের স্থপতিরিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত। বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই আঁখিকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তা বানাতে গার্মেন্টস মেশিনারিজ প্রদান করলেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জনাব আব্দুস সালাম মূর্শেদী। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে “সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘ”-এর মাধ্যমে আঁখিকে ফ্যাটলক, ওভার লক, প্লেন, স্টিচ ও কাটিং মেশিনসহ ১৫টি মেশিন প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতছিলেন-খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য জনাব আব্দুস সালাম মূর্শেদী। সভাপতিত্ব করেন সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘের চেয়ারম্যান মিসেস সারমিন সালাম। উপস্থিত ছিলেন- মোঃ কামাল উদ্দিন বাদশা, সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রূপসা উপজেলা শাখা, খাঁন নজরুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিঘলিয়া উপজেলা শাখা, মোঃ শহিদুল ইসলাম- চেয়ারম্যান, তেরখাদা উপজেলা পরিষদ, শেখ মারুফুল ইসলাম- চেয়ারম্যান, দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদ, রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়াউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দসহ আরো অনেকেই।
আঁখি বলেন, ‘দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য এত বড় স্বীকৃতি পেয়েছি। তাই সারাজীবন অসহায়দের পাশে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে নিজের দোকানের পরিধি আরও বড় করে পরিবারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি অসহায় মেয়েদের কাজের সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছে আছে।’ বাগমারার রবের মোড় এলাকার মাসুদ মোল্লা ও আনোয়ারা বেগমের দ্বিতীয় মেয়ে আঁখি। পঞ্চম শ্রেণি পাস করা এই কিশোরীর কথায়, ‘করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে বাজারে মাস্কপাওয়া যাচ্ছিল না।
কিছু দোকানে দাম ছিল চড়া। দরিদ্র মানুষেরা সেটি কিনতে পারতো না। কিন্তু করোনা থেকে মুক্ত থাকতে মাস্কই ভরসা। তাই নিজেই মাস্ক বানিয়ে কম দামে বিক্রি করেছি। দরিদ্ররা সেগুলো ব্যবহার করেছেন। অসহায় অনেককে বিনামূল্যে মাস্ক দিয়েছি।’ জানা গেছে, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করার সময় আঁখির বাবা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। মা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু তার একার রোজগারে সংসারচালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
বড় বোনের সঙ্গে আঁখি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি কারখানায় যোগ দেয়। এ কারণে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দুই বছর আগে ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত ‘জীবনের জন্য’ প্রকল্পের কর্মী আবেদা সুলতানা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করতে দেখেন আঁখিকে। তখন আগ্রহ দেখে মেয়েটিকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণশেষে আঁখি ওই প্রকল্প থেকে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু থান কাপড় পায়। এরপর শুরু হয় তার পোশাক তৈরির গল্প। ঘরে বসেই স্থানীয়দের পোশাক বানিয়ে মাসে গড়ে তিন হাজার টাকা রোজগার করতে থাকে ‘সত্যিকারের এই নায়ক’।