চুয়াডাঙ্গায় ‘বঙ্গবাঘ’ উপাধি পেলেন আল্লামা মামুনুল হক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৫৮ পিএম, ৮ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগমে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় দু'দিনব্যাপী জেলা উলামা পরিষদের ১৩তম ইসলামী মহাসম্মেলন ও ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ-সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত ইসলামি মহাসম্মেলন ও আলোচনা সভার মূল আকর্ষণ ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শায়খুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক। এই মাহফিলে শায়খুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হককে চুয়াডাঙ্গা জেলা উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলার বাঘ তথা ‘বঙ্গবাঘ’ উপাধি দেয়া হয়। ‘বঙ্গবাঘ’ উপাধি দিয়ে তা মাইকে ঘোষণা করা হলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা থেকে আগত লাখ লাখ মানুষ নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মাহফিলস্থল প্রকম্পিত করে তোলে।
মাহফিলের প্রধান বক্তা শায়খুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ইসলাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এদেশে ইসলাম বিপন্ন হলে স্বাধীনতাও হুমকির মুখে পড়বে। এ জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একইসাথে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা এবং ইসলামকে ভালোবাসতে হবে। দেশবিরোধী ও ইসলামবিরোধী শক্তি এক ও অভিন্ন। তাই মনে রাখবেন, যারা ইসলামবিরোধী তারাই বাংলাদেশবিরোধী। কাজেই দেশী-বিদেশী সকল আগ্রাসী আধিপত্যবাদী শক্তির হাত থেকে দেশ ও ইসলামকে রক্ষা করার জন্য সকল দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রেমিক জনতাকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আজকের এই মাহফিলে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে মাটি ইসলামের ঘাঁটি। তাই এদেশে আর কিছু থাক না থাক ইসলাম থাকবেই। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার বড় তাৎপর্য ছিল ‘তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশা-আল্লাহ’। যে দেশের নেতা ইনশা-আল্লাহ-এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যে দেশের মানুষ আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের শক্তির ওপর আস্থা ও অবিচল বিশ্বাস রেখে স্বাধীনভা লাভ করে, সে দেশের স্বাধীনতা থেকে ইসলামকে বিছিন্ন করা যাবে না। যারা স্বাধীনতা থেকে ইসলামকে বিছিন্ন করবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, মনে রাখবেন তারাই স্বাধীনতা ও ইসলামের দুশমন।
এসময় তিনি আলেম সমাবেশের উদ্দেশে বলেন, আলেম সমাজ আজ থেকে শপথ নাও, কাউকে খুশি করতে গিয়ে হক বলা থেকে বিরত থাকা যাবে না। প্রয়োজনে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে হলেও হক কথা বলতে হবে। শুধুমাত্র আল্লাহ খুশি করাই হবে আমাদের একমাত্র কাজ।’
এছাড়া আল্লামা মামুনুল হক কোরআন-হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।
মাহফিলে দেশের বিভিন্ন শহর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, নারী-পুরুষসহ অন্তত দুই লাখ জনতার উপস্থিতি চোখে পড়ে। দেরিতে আসায় মাহফিল ময়দানে জায়গা না পেয়ে যেখানে-সেখানে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধান বক্তার বক্তব্য উপভোগ করেন অনেকেই। মাহফিলের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিলেন পুলিশসহ স্থানীয় কয়েক শ' স্বেচ্ছাসেবক। প্রধান বক্তা আল্লামা মামুনুল হকের বক্তব্য রেকর্ড করতে মঞ্চের সামনে ক্যামেরা নিয়ে ভিড় করেন বিভিন্ন ইউটিউবার, আইপি টিভিসহ ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনরা। বাস-ট্রাক, মাইক্রো-মিনিবাস, সিএনজি-অটো, মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের ছোট-বড় যানবাহনযোগে মাহফিলে উপস্থিত হয়ে আলোচনা শোনেন লাখ লাখ মানুষ।
গতকাল বিকেলের পরপরই বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে সড়কে প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হলেও ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সেসব উপেক্ষা করেই পৌঁছান মাহফিলস্থলে। যদিও আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিশালাকার প্যান্ডেলের প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, তারপরও মাঠ ছাপিয়ে দর্শক শ্রোতাদের জায়গা নিতে হয় আশপাশের সড়ক ও খালি জায়গাগুলোতে। সন্ধ্যার আগেই আশেপাশের বেশকয়েকটি জেলা থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাহফিল-প্যান্ডেল। তবে মাহফিলের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় মাগরিবের নামাজের পর।
উল্লেখ্য, প্রথমে বিভিন্ন দিকে কিছুটা কান কথা শোনা যায়, এ মহাসম্মেলন হচ্ছে না। তবে উলামা পরিষদ থেকে বারবার জানানো হয়েছিল দু'দিনের মহাসম্মেলন হচ্ছে। কিন্তু প্রথম দিন ও সকল প্রচার-প্রচারণাসহ ঘোষণা মঞ্চে এ আয়োজনকে ১৩তম ইসলামি মহাসম্মেলন বলা হলেও শনিবার মাহফিলের ব্যানার হঠাৎ করেই পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় লেখা ছিল। এ নিয়ে উলামা পরিষদের এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেছেন, ‘প্রশাসন থেকে এমনটিই নির্দেশনা ছিল।’