মিয়ানমারের নতুন নায়ক নিহত ‘অ্যাঞ্জেল’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০৩ এএম, ৬ মার্চ,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
কালো টি-শার্টে সাদা কালি দিয়ে বড় বড় করে লেখা ছিল ‘এভরিথিং উইল বি ওকে’। মিয়ানমারের মান্দাল শহরে বুলেট থেকে বাঁচতে ওই টি-শার্ট পরা মানুষটিকে রাস্তায় শুয়ে পড়ার ছবি বৃহস্পতিবারই দেখেছে বিশ্ব।
শুক্রবার সকালে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার টি-শার্ট পরা অবস্থায় মাথায় গুলি লেগে নিহত হওয়া ওই কিশোরী মা কিয়াল সিন। তবে তিনি ‘অ্যাঞ্জেল’ নামেই জনপ্রিয় ছিলেন সবার কাছে। তার নিহত হওয়ার পর নেট দুনিয়ায় শুরু হয় তোলপাড়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন ঝড় বইছে বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমেও।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের ওপরে সেনা ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মৃত্যু হয়েছে মা কিয়ালসহ অন্তত ৩৮ জনের।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর বৃহস্পতিবারই ছিল মিয়ানমারে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। তায়কোয়ান্ডু চ্যাম্পিয়ন, উনিশ বছরের অ্যাঞ্জেল টি-শার্টে নিজের রক্তের গ্রুপ লিখে রাখতেন। সাথে একটা যোগাযোগের নম্বরও। লিখে রেখেছিলেন, বিক্ষোভ করতে গিয়ে কিছু হলে তার দেহ যেন দান করে দেয়া হয়।
গত নভেম্বরে প্রথমবার ভোট দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল। নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্টও দিয়েছিলেন তিনি। সেই গণতন্ত্র বাঁচাতে বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামেন দেশটির সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের পরিচিত মুখ অ্যাঞ্জেল। ওইদিন তিনি মাকে আলিঙ্গন করে বাড়ি থেকে বের হন। আর কফিনের ভেতরে শোয়া অ্যাঞ্জেলের নিথর দেহের ছবি শুক্রবার ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অ্যাঞ্জেলের সাথে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মান্দালের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন মিয়াত থু নামে এক যুবক। তিনি দাবি করেছেন, কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি করেছিল পুলিশ।
মিয়াত বলেন, ‘প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পুলিশ। তখন পানির পাইপ ফাটিয়ে অ্যাঞ্জেল সবার চোখেমুখে পানি দিতে সাহায্য করে। আমাকে বলল, রাস্তায় শুয়ে পড়তে, না হলে গুলি লাগতে পারে। মিছিল ছত্রভঙ্গ হওয়াতে ওকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভাবতে পারছি না ওই প্রাণবন্ত মেয়েটা আর বেঁচে নেই।’
শুধু অ্যাঞ্জেল নন, অল্পবয়সী বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গত কয়েক দিনে বুকে অথবা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও সেনা বাহিনী। অথচ গত সপ্তাহেও সেনাদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে বলা হয়েছিল, বিক্ষোভ সামলাতে ‘আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করবে না’ তারা। ‘মারতে হলে শরীরের নিম্নাংশে মারা হবে।’
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে পুলিশি নির্যাতন নিয়ে সরব জাতিসঙ্ঘ থেকে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্ব। দেশটিতে শান্তি ফেরাতে চীনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মিয়ানমারে ইতোমধ্যে ৫৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। সাধারণ মানুষকে এভাবে হত্যা করা অবিলম্বে বন্ধ না করলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে এর ফল পেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সেনাদের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। পুরো ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।’
একইভাবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেছেন, ‘মিয়ানমারের জনগণের পাশে আছি আমরা।’ তবে এসবে বিবৃতিকে পাত্তা দিচ্ছে না মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা। শুক্রবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এ ধরনের হুঁশিয়ারিতে তারা ‘পিছু হটতে রাজি নয়’।