ঋণ পেতে হয়রান এসএমই উদ্যোক্তারা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০২ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৪৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ফেনীর নতুন পুলিশ লাইনসে এইচ এম রহমান অটো সেন্টার নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিনের। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যবসায়ী সরকার ঘোষিত কটেজ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০ লাখ টাকার ঋণের জন্য গত মে মাসে চতুর্থ প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ফেনী শাখায় আবেদন করেন। কিন্তু নানা টালবাহানা করে এখন পর্যন্ত তাঁর ঋণ আবেদন মঞ্জুর করেনি ব্যাংকটি। এই নিয়ে গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগও দাখিল করেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় তিনি গত ১৮ আগস্ট ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে আবেদন করেছেন। আবেদনে ব্যবসার সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির বিষয় তুলে ধরেন। তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঝামেলামুক্ত ঋণ প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মহিউদ্দিনের মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীই প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পেতে মাসের পর মাস ব্যাংকে ঘুরলেও ঋণের দেখা পাচ্ছেন না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। এতে প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সিএমএসএমই প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে তদারকি বৃদ্ধি ও বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠকও করা হচ্ছে। এতে আগের চেয়ে ঋণ বিতরণে গতি এসেছে।
করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতে এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল অন্যতম। গত ১৩ এপ্রিল এসংক্রান্ত তহবিল বরাদ্দের জন্য নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিলের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতাদের দিতে হবে ৪ শতাংশ সুদ। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সুদের অর্থ সরকার ভর্তুকি আকারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেবে। প্রথমে প্রণোদনার ২০ হাজার কোটি টাকাই ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কথা ভেবে পরবর্তী সময় তহবিলের ১০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনরর্থায়ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এই তহবিলের ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই তহবিলের ঋণ বিতরণে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এই প্যাকেজের আওতায় মাত্র তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। চার হাজারের মতো সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠান এই ঋণ পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছে যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএসএমই তহবিল থেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে না। তাই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক ধাপে বৈঠকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ বৈঠকে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে শুরুতেই ব্যাংকের ধরন অনুযায়ী সিএমএসএমই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংক মূলধন কাঠামোর দিক থেকে একেবারে ছোট তাদের এক বছরে ৫০ কোটি টাকা, মাঝারি আকারের ব্যাংককে ৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা এবং বড় আকারের ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুরুতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে কোনোক্রমেই গতি আসছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য তদারকি বাড়ানোর অংশ হিসেবে গত ২১ জুন মাসিক ভিত্তির পরিবর্তে পাক্ষিক ভিত্তিতে ঋণ বিতরণের তথ্য জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তাতেও কোনো কাজ না দেওয়ায় গত জুলাই থেকে ঋণ বিতরণের টার্গেটের সীমা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব বৈঠকের পর সিএমএসএমই খা?তের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করতে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। জানা যায়, এর অগ্রগতি নিয়ে অক্টোবরের শুরুতেই বড় আকারের ২০-২৫ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।