avertisements 2

সংখ্যালঘু

তারিকুল ইসলাম খান
প্রকাশ: ০৯:২৫ পিএম, ২৬ মার্চ,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:১৯ এএম, ৮ মার্চ,শুক্রবার,২০২৪

Text

কোন বর্ণ, ধর্ম বা ভাষাগত সম্প্রদায় যেমন কোন এক দেশে সংখ্যাগুরু, ঠিক অন্য দেশে তারাই আবার সংখ্যা লঘু। পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় ঘৃণার চোখে দেখেন এবং দেশের সকল অনাসৃষ্টির মূল বলে বিবেচনা করেন।
আমি দেশের বাইরে যেমন: অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপ/আমেরিকাতে বসবাসরত অনেক দক্ষিন-পূর্ব এশিয়কে বলতে শুনেছি যে ওসকল দেশের মানুষ  নাকি অনেক রেসিস্ট। বিপরীতে আমার বক্তব্য, ওরা যদি এতটাই রেসিস্ট হন তাহলে আমরা/আপনারা কেন ওসব দেশে বসবাস করি? 
আমরা যদি দেখি যে আমার দেশের কাজের যায়গাগুলো ভিনদেশীরা দখল করে নিচ্ছে, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিৎ? আমরা কি সেক্ষেত্রে রেসিস্ট মনোভাবাপন্ন হব, না উদারনৈতিক হব? আমার জানামতে ওসকল দেশে বসবাসকারী এদেশীয়দের হাতে কাজের কোন সুযোগ থাকলে প্রথমেই খোঁজেন এদেশীয় বা উপমহাদেশীয়  কোন একজনকে। যেমনিভাবে বরিশালের মানুষ খুঁজে বরিশালের লোক এবং নোয়াখালীর মানুষ খোঁজেন নোয়াখালির লোক। এগুলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। যদি বেআইনি কিছু না হয়, তাহলে এগুলোকে মানুষের রেসিজম হিসাবে দেখা ঠিক নয়। আমি বাংলাদেশ এবং ভারতে অনেকের মুখে সাম্প্রদায়িক কিছু বিষয় একই রকম কথা শুনেছি, ওপারের কথায় যেমন মুসলিমরা ভিলেন, তেমনি এপারের কথায় ভিলেন হিন্দুরা। উভয় দেশেই অনেকে আন্তরীকভাবেই অসম্প্রদায়িক, তবে তারা আবার নিজ ধর্মের লোকদের কাছে বিপরীত ধর্মের লোকদের প্রশ্রয় দেয়ার জন্য সমালোচিত হন। এদেশে আপনি যদি মুসলিম হয়ে হিন্দুদের অধিকারের কথা বলেন, তাহলে আপনি হিন্দু তোষনকারী এবং মুসলিম স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। ওপারেও ঠিক একই রকম; মুসলিম স্বার্থের কথা বললে আপনি মুসলিম তোষনকারী এবং হিন্দু স্বার্থের পরিপন্থী । অর্থাৎ সংখ্যাগুরুদের কাছে সংখ্যালঘুরা সব অন্যায়কারী এবং সংখ্যাগুরুদের জন্য অনিষ্টকারী।যেমনটা হয়েছিল নাৎসী জার্মানীতে এবং বর্তমানে হচ্ছে গাজা, পশ্চিম তীর ও পৃথিবীর বহু অঞ্চলে। 
ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে এক ধর্মের মানুষেরা ঐকবদ্ধ হয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে যুদ্ধ করেছে বহুবার পৃথিবীর বহুদেশে।একই ধর্মের নানা শাখার মানুষেরাও হর হামেশাই যুদ্ধ করে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে শুধুমাত্র নিজ নিজ ধর্মমতের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েমের জন্য। তবে এরকম যুদ্ধ সর্বকালে সমাধানহীন।ধর্ম বিষয় যার শ্রেষ্ঠত্ব তার কাছে, অন্য কেউ যদি বলে যে আমার ধর্ম সেরা নয় আপনার ধর্মই সেরা , তাহলেতো তার নিজ ধর্ম পালন করারই কথা নয়। তাই নিজ নিজ বৃত্তে নিজে সুখি থাকি, অন্যের সুখ নষ্ট না করি। অযথা কারো পিছনে লাগলে কেউ ছেড়ে কথা বলবে না। যদি কোন এক দেশের সংখ্যালঘুরা বাধ্য হন সংখ্যাগুরুর অত্যাচার মেনে নিতে, তবে তার সগোত্রীয় ভিনদেশী সংখ্যাগুরুরা কথা বলবেন এবং এটাই স্বাভাবিক।এটি অশোভন ও অযাচিত হলেও অভাবিত নয়। আমি যদি নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার না মানি, তাহলে অন্য দেশে বসবাসকারী আমার সগোত্রীয়দের অধিকার অন্যরা  মানবে তা কি করে আশা করি? 
ইদানিং ইউ টিউবে ঢুঁ মারলে হিন্দুরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এবং মুসলিমরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে যে পরিমান বিষ ঢেলে দিচ্ছেন তা দেখে গাঁয়ের কাটা শিউরে উঠে। আমরা সবাই অন্য লোক বা দেশ ধর্মসহিষ্ণু হোক তা একান্তভাবে কামনা করি, কিন্তু নিজে বা নিজ দেশ পরধর্ম সহিষ্ণু হোক তা পছন্দ করি না। 
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্টোনিও
গুতেয়েরেস বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামোর ঐশ্বর্যের অংশ। তবুও আমরা কেবল বৈষম্যই নয়, সংখ্যালঘুদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টাও দেখছি। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: একে অপরকে জানার জন্যই সব জাতি এবং উপজাতি সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং বৈচিত্র্য হচ্ছে ঐশ্বর্য, এটি কোনও হুমকি নয়।তাই আমরা মুসলিমরা আমাদের কোরানিক শিক্ষাকে সম্মান করি এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করি।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2