avertisements 2

‘এটা বাংলাদেশের জন্য কিশোয়ারের প্রেমপত্র’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ জুলাই, বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৬ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

ছোটবেলা থেকেই কিশোয়ারের রান্নার প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল। রান্না করতে খুব পছন্দ করত। নিজের রান্না ছোটবেলা থেকে নিজেই করত। যেমন- ভাত, ডাল, কেক, ডিম ও চা। আমি চাইনি কিশোয়ার অংশগ্রহণ করুক। তার কারণ অনেক কষ্ট। কষ্টের কথা চিন্তা করেই আমি চাইনি; কিন্তু কিশোয়ার নিজের ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছে। কিশোয়ার, স্বামী ও ছেলে এ তিনজন মিলে ডিসিশন নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। পরে আমি জানতে পেরেছি প্রতিযোগিতায় কিশোয়ার অংশগ্রহণ করবে। আগে তো নিষেধ করেছিলাম ঠিক; কিন্তু এখন এটি সত্যিই এনজয় করছি। সাত-আট মাস কষ্ট হবে দেখে আমি নিষেধ করেছিলাম; কিন্তু এখন আমি কিশোয়ারকে নিয়ে গর্ববোধ করছি। I feel proud

of her.

ছোটবেলা থেকেই প্রতিভাবান

- নাশিদ চৌধুরী, কিশোয়ারের বোন

রান্নার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। আমরা পরিবারের সবাই মোটামুটি বাসায় রান্না করে থাকি। কিন্তু কিশোয়ারের ক্রিয়েটিভিটি এত বেশি ছিল যে কি করে কাজ আরও সুন্দর করা যায়, কীভাবে কাজটি আরও গুছিয়ে শেষ করা যায়-এসব দিকে খেয়াল রাখত। ওর অনেক প্রতিভা। নাচে যেমন পারদর্শী তেমনি আর্টেও ভালো। ওর আর্টগুলোও খুব সুন্দর। ডিজাইনও করতে পারে অনেক সুন্দর করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল কিশোয়ার অবশ্যই আসতে পারবে। প্রথম দিকে একটু আত্মবিশ্বাস কম ছিল। কিন্তু যত দিন গেছে তত বেশি আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। একমাত্র নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের জন্য কিশোয়ার এতদূর আসতে পেরেছে।

কখনো ওর রান্না নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। সবসময় সুন্দর করে রান্না করত। আমরা বাসায় যেসব রান্না করি আর যেসব খাবার খেয়ে থাকি সেসব দেশীয় খাবারই প্রোগ্রামে তুলে ধরেছে। মা-বাবার কাছ থেকে অনেক রান্না শিখেছে। এ ছাড়াও কিশোয়ার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকত। তাই তাদের কাছ থেকেও অনেক মজার মজার রান্না শিখেছে। আমাদের বাসায় আমার নানি থাকতেন। নানির থেকেও রান্না শিখেছে। এই রান্নার কালচারটা তুলে ধরেছে। এ ছাড়া রান্নার মাধ্যমে মা-বাবার প্রতি সম্মান বয়ে নিয়ে আসাটা-সবকিছু মিলিয়ে আমি সত্যিই খুবই গর্বিত। কিশোয়ার এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিবারের মূল্যগুলো তুলে ধরতে পেরেছে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অ্যাডভানটেইজ। ধন্যবাদ।

আমাদের রন্ধনশিল্পীদের অভিনন্দন

কিশোয়ার বাংলাদেশের রন্ধনশিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা

রাহিমা সুলতানা রীতা, রন্ধনশিল্পী

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী বিশ্ব দরবারে পুরস্কৃত হয়েছেন এটা অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের এবং গর্বের। বিশেষ করে পুরো প্রতিযোগিতায় কিশোয়ার যেভাবে বাংলাদেশি খাবার বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন তাতে দেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশের খাবার, কৃষ্টি, কালচারকে তিনি মূলত প্রমোট করেছেন। কিশোয়ার বাংলাদেশের রন্ধনশিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা।

বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিলেন বাঙালি খাবার কতটা সুস্বাদু

আঞ্জুমান্দ সেতু, রন্ধনশিল্পী

মাছে ভাতে প্রিয় বাঙালি যখন ফাস্টফুডের চাকচিক্যে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারকে ভুলতে বসেছে ঠিক তখনই অস্ট্রেলিয়ান মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতার ১৩তম আসরে বাঙালি খাবার দিয়ে বাজিমাত করলেন কিশোয়ার চৌধুরী। তিনি বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিলেন বাঙালি খাবার কতটা সুস্বাদু। অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা কিশোয়ার চৌধুরীর জন্য।

বাংলাদেশি খাবার নিয়ে এগিয়ে চলা কিশোয়ার

আফরোজা নাজনীন সুমি, রন্ধনশিল্পী

‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এ কথাটিই বিশ্ব দরবারের কাছে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়াবাসী নারী ‘কিশোয়ার চৌধুরী। পান্তা ভাত, শুকনো মরিচ, ভাজা বাঙালির চিরন্তন এক খাবার তিনি মাস্টার শেফের মতো এত বড় একটা প্লাটফরমে পরিবেশনে দারুণ সাহসিকতার পরিচয়ও দিয়েছেন। বাংলাদেশের ফুচকা, চটপটি, ভর্তা, ইলিশ, লাউ-পুঁটি, শাকপাতা, হাঁস, মাছ থেকে মিষ্টি দই, পান সব দিয়ে নানা পদ তৈরি করে নানা আঙ্গিকে পরিবেশন করেছেন মাস্টার শেফ কিচেনে। খুবই সাহসিকতার সঙ্গে নিপূণভাবে সেই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছেন এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশি খাবারকে এনে দিয়েছেন এক অন্য মাত্রা। আমরা গর্বিত কিশোয়ার এই সাফল্যে।

প্রতিযোগিতায় এমন রান্না করাটা সত্যিই চ্যালেঞ্জের

দিল আফরোজ সাইদা, রন্ধনশিল্পি ও শেফ

বাংলাদেশের গ্রামবাংলার মানুষের খাবার পান্তা ভাত আর আলু ভর্তা পরিবেশন করে মাস্টার শেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। যে কোনো প্রতিযোগিতায় এমন রান্না করাটা সত্যিই চ্যালেঞ্জের। এ রান্না দেখে বিচারকরা রীতিমতো অভিভূত। কিশোয়ার দেশের বাইরে থাকলেও নিজের দেশের ভাষা সংস্কৃতি চর্চা সবকিছুই বজায় রেখেছেন এবং সেটি নিজের সন্তানদের ধারণ করতে উৎসাহিত করেছেন। বাগানের হার্বস থেকে শুরু করে শাকসবজি, মরিচ, লাউ সবকিছুই তারা নিজেরা উৎপাদন করে।

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা কিশোয়ার চৌধুরীর। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। তিনি মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে কমার্সে স্নাতক করা। কিশোয়ার লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব আর্টস থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিজনেস ডেভেলপার হিসাবে কাজ করছেন। অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়া এবং সমাজসেবার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত মুখ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী ও লায়লা চৌধুরীর মেয়ে কিশোয়ার।

বিশ্বের রান্না বিষয়ক অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ত্রয়োদশ আসরের মূল পর্ব শুরু হয়েছিল ২০ এপ্রিল। বাছাই পর্ব পেরিয়ে ২৪ জন অংশ নিয়েছিল অনুষ্ঠানটির চূড়ান্ত পর্বে। সেখানেই ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। বাছাই পর্বে কিশোয়ার চৌধুরী রান্না করেছিলেন বাংলাদেশি পদ। সেই রান্নার ঝলক দেখানো হয়েছে প্রথম পর্বে। বাছাই পর্বে কিশোয়ার মাছ আর কাঁচা আমের টক তৈরি করেছিলেন। যা দেখে বিচারকরা কেবল মুগ্ধ হননি; বরং তার স্বাদও পছন্দ করেছেন অনেক।

চূড়ান্ত পর্বে অভূতপূর্ব স্বাদে এগিয়ে যায় কিশোয়ারের রান্না করা নেহারি। এটি তার বাবার শেখানো রেসিপি। নেহারি খেয়ে বিচারকরা মেকি রাগ প্রকাশ করেন, যেন বলতে চাইছিলেন, ‘এত মজা কেন খাবার’!

সবশেষে মিষ্টান্নের পালা। এখানে পান আইসক্রিমে আবারও বাজিমাত করেন কিশোয়ার। তার পান আইসক্রিম খেয়ে বিচারক মেলিসা বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য কিশোয়ারের প্রেমপত্র’।

কিশোয়ার জানান, গত বছর লকডাউনের সময় মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার জন্য আবেদন করেছি। আমার ছেলে মিকাইলের সবসময় বলত, মা তোমার এখানে যাওয়া উচিত। তুমি খুব ভালো রান্না কর। তুমি তো সবকিছু পার। তুমি চেষ্টা করলে মাস্টারশেফ হয়ে যাবা। আমি আমার আবেদনের হাত না দেওয়া পর্যন্ত আমার ছেলে আমার পিছনে ছিল এবং বাকিটি ইতিহাস!

তার বাবা বাংলাদেশের এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় একজন ছাত্র হিসাবে আসেন। কিশোয়ারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সবসময় ছিল।

আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা ধরনের খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কারণেই অন্যসব প্রতিযোগী থেকে আলাদা করেছে কিশোয়ারকে। তার রান্না দেখে ও খেয়ে বিচারকরা রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েন। তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া'র ফাইনাল রেজাল্টের আগেই লাখ লাখ বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

উৎসঃ   jugantor

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2