avertisements 2

ক্যান কুড়ানো সেই ছেলেটিই এখন সবার মধ্যমণি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৮ এএম, ৬ মার্চ, বুধবার,২০২৪

Text

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস। লন্ডনে বড় করে বিয়ে হচ্ছে ফ্র্যাঙ্ক খালিদের মেয়ের। হঠাৎ করে বিয়ের আসর থেকে উপস্থিত সবার নজর ঘুরে গেল অন্যদিকে। মেয়ের বাবা হঠাৎ করেই খুশিতে আটখানা! বিয়ে তখনো সম্পন্ন হয়নি, তাহলে কী হলো হঠাৎ? একটু পর বোঝা গেল, সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু আর কেউ নন, স্বয়ং এনগোলো কান্তে। ফ্র্যাঙ্ক খালিদ তেমন কোনো বড় নাম নন চেলসি ফুটবলে। কিন্তু এনগোলো কান্তের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নিজের মেয়ের বিয়েতে। কান্তে বিনয়ের সঙ্গে না করে দিয়েছিলেন, কারণ এই সময়টায় তাঁকে থাকতে হবে ফ্রান্স দলের সঙ্গে। কিন্তু তখনই হানা দিল হাঁটুর ইনজুরি। সময়টা খালি পেয়ে হুট করেই হাজির হয়ে গেলেন সমর্থক খালিদের মেয়ের বিয়েতে। পুরো সময়টা থেকেছেন, আনন্দ করেছেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই বিদায় নিয়েছেন সেখান থেকে।

লন্ডন থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার ট্রেন মিস করেছেন কান্তে। পরের ট্রেন আসতেও বেশ দেরি। তাই সময়টা সামনের একটা মসজিদেই কাটিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। মসজিদে থাকাকালে একজন আর্সেনাল সমর্থক চিনে ফেললেন তাঁকে। এরপর ঘটনা যেমনটা ভাবছ তেমনটা নয়। বরং তাঁর সঙ্গেই গল্পে মেতে উঠলেন কান্তে। কান্তেকে লাঞ্চ করাতে বাড়ি নিয়ে গেলেন সেই আর্সেনাল সমর্থক। সেখানে তাঁর সঙ্গে ফিফাও খেললেন। এরপর ট্রেনের সময় আসতেই কান্তেকে ট্রেন স্টেশনে লিফট দিলেন। বলতে গেলে পুরো একটা দিন কান্তে কাটিয়েছেন নিজের দলের চিরশত্রু দলের সমর্থকের সঙ্গে।

কান্তের এমন গল্প আছে আরও অনেক। এত বড় তারকা তিনি, তবু কত সহজ–সরল তাঁর জীবনযাপন। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে যা করেছেন, তা দেখে অবাক হননি কোনো ফুটবল সমর্থকই। পুরো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি অ্যারিয়াল ক্লিয়ার করেছেন কান্তে। ৬ ফুট ১ ইঞ্চির তুবেন ডিয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বল ক্লিয়ার করেছেন। বলতে গেলে একাই আটকে রেখেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডকে। শুধু ফাইনাল নয়, সেমিফাইনালেও জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদকে আটকে রেখেছিলেন তিনি তাঁর শক্তিমত্তা দিয়ে। নিজের শরীর আর মাথাকে দারুণভাবে কাজে লাগান কান্তে।

ফ্রান্স দলে সুযোগ পাবেন, এমন আশায় অনেক দিন মালি দলে ডাক পেয়েও সাড়া দেননি কান্তে। ডাক পড়ল একেবারে ইউরোতে। ২০১৬ ইউরো ছিল ফ্রান্সের পুনর্জাগরণের সময়। পুরো ইউরোতে মাত্র দুটো ম্যাচ খেলেন। একটা হলুদ কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হয়ে, আরেকটি পর্তুগালের সঙ্গে ফাইনালে, কোচের এক্সপেরিমেন্টের ফসল হিসেবে। প্রথম ম্যাচটা কষ্ট করে জিতলেও পরেরটা আর জেতা হয়নি ফ্রান্সের। ফ্রান্সের ইউরো–স্বপ্ন থামে পর্তুগালের সামনে এসে।

ইউরো শেষ হতেই কান্তেকে কিনে নেয় চেলসি। কান্তে তাদের সঙ্গে উঁচিয়ে ধরেন টানা দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগ। পরের বছরের বিশ্বকাপে আর ভুল করেননি দিদিয়ের দেশম, পুরো টুর্নামেন্টে এক মিনিটের জন্যও তাঁকে মাঠ থেকে উঠতে দেননি তিনি। ফলাফল? ফ্রান্স বিশ্বকাপ শেষ করেছে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে।

বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে শ্যাম্পেন–স্নানে মেতেছে গোটা ফ্রান্স দল। একটু একটু করে ট্রফি নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই, অন্যদিকে দূরে একা দাঁড়িয়ে এনগোলো কান্তে। হঠাৎ করেই অলিভার জিরুর যেন মনে পড়ল তাঁকে। সামনে এগিয়ে এনে হাত ধরে ডায়াসে তুললেন কান্তেকে। বিশ্বজয়ের পর সামান্য একটা হাসি, সবাই মেতে উঠলেন তাঁকে নিয়ে, শিরোপাটা যে কান্তেরই।

মৌসুমের পর মৌসুম কেটেছে, কান্তের ছুটে চলা থামাতে পারেনি কেউ। প্রতিটি মৌসুমে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই কান্তের মতন খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে শুরু করেছে ফুটবল। ডিফেন্স আর মিডের মাঝখানে ডিফেন্ড করার নতুনত্ব ফুটবলে প্রথম এনেছিলেন ক্লদ ম্যাকেলেলে। রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টার্মটাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন বিশ্বের সামনে। তিনি সে সময়ে দাম পাননি রিয়ালে, কিন্তু আস্তে আস্তে যতই দিন গেছে, বিশ্ব বুঝতে শুরু করেছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের মর্ম।

কান্তে ঠিক এ জায়গাতেই অনন্য। ম্যাকেলেলে শুধু ডিফেন্সিভ মিড হয়েই থাকতেন, কিন্তু কান্তে পুরোদস্তুর বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। তাই তিনি শুধু খেলা থামানই না, খেলা তৈরিও করেন। এ জন্যই ক্লাবে যে পগবাকে খুঁজেই পাওয়া যায় না, সেই পগবাই ফ্রান্সের জার্সিতে কান্তের সঙ্গে নিজের সেরা খেলাটা দেখান। কান্তে এমনই, সহজ সরল, চুপচাপ নিভৃতচারী; কিন্তু মাঠে ঠিকই থাকেন তিনি। মৌসুমের প্রথম ভাগে তাঁকে বলা হয়েছিল ফুরিয়ে গিয়েছেন, সেরা খেলাটা ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর কাছ থেকে। অথচ মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ম্যাচে নিজের সেরা খেলাটা দেখিয়েছেন কান্তে।

সামনে ইউরো, মৌসুমজুড়ে যেমন খেলা দিয়েছেন, তাতে করে ফ্রান্স ভালো কিছু করে দেখাতে পারলে ব্যালন ডি’অর জেতাটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। আর কান্তে যদি ব্যালন ডি’অর উঁচিয়ে ধরতে পারেন, তাহলে ফুটবল বিশ্ব নতুন কিছুই দেখবে।

অথচ এই কান্তেকে উঠে আসতে হয়েছে ফ্রান্সের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জায়গা থেকে। মালি থেকে ফ্রান্সে শরণার্থী হিসেবে এসেছিলেন কান্তে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন ব্যস্ত নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ নিয়ে, তখন তিনি ব্যস্ত ছিলেন মাঠের বাইরে ক্যান কুড়োনোতে। বিশ্বকাপের সময় প্রচুর লোক আসেন, প্রচুর বিয়ার–কোকের ক্যান পড়ে থাকে রাস্তায়। সেগুলো নিয়ে জমা দিতে পারলেই লাভ। বিশ্বকাপের সময় বলে দামটাও যে দ্বিগুণ।

১৯৯৮ বিশ্বকাপ বদলে দিয়েছিল ফ্রান্সের চিত্র। প্রতিটি বাচ্চাকাচ্চার মনে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বুনে দিয়েছিলেন জিদানরা। বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে শরণার্থী হিসেবে আসা বাচ্চাদের মনে। জিনেদিন জিদান, থিয়েরি অঁরি, লিলিয়ান থুরাম, প্যাট্রিক ভিয়েরার ওপর ভর করে জেতা ফ্রান্স যে এক কথায় ভিনদেশিদের দিয়েই তৈরি। কান্তের মনেও সেই স্বপ্ন জেগে উঠেছিল। কিন্তু তাতে কী? তাঁকে তো ব্যস্ত থাকতে হতো মাঠের পাশে ছোটখাটো কোন কাজে। বেঁচে থাকার জন্য অর্থ বড্ড প্রয়োজন।

এর মধ্যেই কান্তে নজর কাড়লেন জেএস সুহেন ক্লাবের। ১০ বছর বয়সী ছোটখাটো ছেলেটাকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিল ক্লাবটি। কিন্তু এরপর থেকেই সবাইকে অবাক করতে লাগলেন কান্তে। দ্রুতই সবাই বুঝতে শুরু করল, ছোট্ট বাচ্চাটা জিততে এসেছে। নিজের খেলা দিয়ে চলে এলেন লাইমলাইটে। সুহেনও জিততে শুরু করল দ্রুতই। কিন্তু ফুটবল সব সময়ই গোলের খেলা, এখানে লাইমলাইটে আসে তারাই, যারা গোল করে, গোল বানিয়ে দেয়। কিন্তু কান্তে কোনোটাই নন। কান্তে গোল থামানও না। বল থামানো আর বানানোদের মধ্যে থাকেন। ফলে তাঁর গল্পটা আরও কম বলা হয়। যে কারণে দলের সেরা খেলোয়াড় হয়েও তাঁকে অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ২১ বছর পর্যন্ত।

কান্তে লাইমলাইটে আসেন ২০১৫-১৬ মৌসুমে। সে মৌসুমেই তাঁকে ফ্রেঞ্চ লিগের দ্বিতীয় বিভাগ থেকে তুলে আনে লেস্টার সিটি। সে জন্য ৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছিল ইংলিশ এই ক্লাবকে। কিন্তু ৮ মিলিয়নের ফলাফল মৌসুম শুরু হতে না হতেই দেওয়া শুরু করেন কান্তে। শুরু হয় কান্তে এবং লেস্টারের রূপকথার মৌসুম। কে হিরো হননি সেই মৌসুমে! রেলিগেশন লড়াইয়ে লড়া দলকে এক মৌসুমে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লিগের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন ক্লদিও রানেইরি। ক্যাসপার স্মাইকেল, হ্যারি ম্যাগুইয়ার থেকে শুরু করে জেমি ভার্ডি, ড্যানি ড্রিংকওয়াটার, রিয়াদ মাহরেজ—সবাই হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত। বাদ যাননি এনগোলো কান্তেও। লেস্টারের সব খেলোয়াড় পরিণত হয়েছিলেন জাতীয় নায়কে। মাঝমাঠের হাল ধরা শান্তশিষ্ট কান্তেও সেই তালিকাতে পড়ে গিয়েছিলেন, নজর কেড়েছিলেন হেভিওয়েটদের। সেই সঙ্গে ডাক পান ফ্রান্স দলে।

ফ্রান্স দলে সুযোগ পাবেন, এমন আশায় অনেক দিন মালি দলে ডাক পেয়েও সাড়া দেননি কান্তে। ডাক পড়ল একেবারে ইউরোতে। ২০১৬ ইউরো ছিল ফ্রান্সের পুনর্জাগরণের সময়। পুরো ইউরোতে মাত্র দুটো ম্যাচ খেলেন। একটা হলুদ কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হয়ে, আরেকটি পর্তুগালের সঙ্গে ফাইনালে, কোচের এক্সপেরিমেন্টের ফসল হিসেবে। প্রথম ম্যাচটা কষ্ট করে জিতলেও পরেরটা আর জেতা হয়নি ফ্রান্সের। ফ্রান্সের ইউরো–স্বপ্ন থামে পর্তুগালের সামনে এসে।

ইউরো শেষ হতেই কান্তেকে কিনে নেয় চেলসি। কান্তে তাদের সঙ্গে উঁচিয়ে ধরেন টানা দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগ। পরের বছরের বিশ্বকাপে আর ভুল করেননি দিদিয়ের দেশম, পুরো টুর্নামেন্টে এক মিনিটের জন্যও তাঁকে মাঠ থেকে উঠতে দেননি তিনি। ফলাফল? ফ্রান্স বিশ্বকাপ শেষ করেছে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে।

বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে শ্যাম্পেন–স্নানে মেতেছে গোটা ফ্রান্স দল। একটু একটু করে ট্রফি নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই, অন্যদিকে দূরে একা দাঁড়িয়ে এনগোলো কান্তে। হঠাৎ করেই অলিভার জিরুর যেন মনে পড়ল তাঁকে। সামনে এগিয়ে এনে হাত ধরে ডায়াসে তুললেন কান্তেকে। বিশ্বজয়ের পর সামান্য একটা হাসি, সবাই মেতে উঠলেন তাঁকে নিয়ে, শিরোপাটা যে কান্তেরই।

মৌসুমের পর মৌসুম কেটেছে, কান্তের ছুটে চলা থামাতে পারেনি কেউ। প্রতিটি মৌসুমে ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই কান্তের মতন খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে শুরু করেছে ফুটবল। ডিফেন্স আর মিডের মাঝখানে ডিফেন্ড করার নতুনত্ব ফুটবলে প্রথম এনেছিলেন ক্লদ ম্যাকেলেলে। রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টার্মটাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন বিশ্বের সামনে। তিনি সে সময়ে দাম পাননি রিয়ালে, কিন্তু আস্তে আস্তে যতই দিন গেছে, বিশ্ব বুঝতে শুরু করেছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের মর্ম।

কান্তে ঠিক এ জায়গাতেই অনন্য। ম্যাকেলেলে শুধু ডিফেন্সিভ মিড হয়েই থাকতেন, কিন্তু কান্তে পুরোদস্তুর বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। তাই তিনি শুধু খেলা থামানই না, খেলা তৈরিও করেন। এ জন্যই ক্লাবে যে পগবাকে খুঁজেই পাওয়া যায় না, সেই পগবাই ফ্রান্সের জার্সিতে কান্তের সঙ্গে নিজের সেরা খেলাটা দেখান। কান্তে এমনই, সহজ সরল, চুপচাপ নিভৃতচারী; কিন্তু মাঠে ঠিকই থাকেন তিনি। মৌসুমের প্রথম ভাগে তাঁকে বলা হয়েছিল ফুরিয়ে গিয়েছেন, সেরা খেলাটা ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না তাঁর কাছ থেকে। অথচ মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ম্যাচে নিজের সেরা খেলাটা দেখিয়েছেন কান্তে।

সামনে ইউরো, মৌসুমজুড়ে যেমন খেলা দিয়েছেন, তাতে করে ফ্রান্স ভালো কিছু করে দেখাতে পারলে ব্যালন ডি’অর জেতাটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। আর কান্তে যদি

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2