avertisements 2

বাংলাদেশ- অস্তিত্ত্বের সুবর্ণ জয়ন্তী

জালাল উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: ১২:৫২ এএম, ৮ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৪ পিএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

 


বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক

বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান

 

ঊনসত্তর দেখি নি। সত্তরের নির্বাচন দেখি নি। এমনকি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিতে পারিনি। তবে মুক্তিযুদ্ধের সহয়তাকারী হিসাবে গর্ব অনুভব করি। কপালের ফেরে তখন আমি ভিনদেশে ছিলাম। তবে সত্তর দশকের সূচনা লগ্ন থেকেই আমার পথ চলা শুরু হয় সদ্য মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে। সে সময় আকাশ প্রবাহের এত প্রসার ছিল না। ছিল টি এন্ড টির ল্যান্ড ফোন আর বিটিভির মত সরকার পরিচালিত ম্যাজিক বাক্স এবং  বাংলাদেশ বেতার নামক এক অত্যাবশ্যকীয় আকাশ তরঙ্গ। আর ছিল গুটিকয় দৈনিক সংবাদপত্র তাও আবার নিয়ন্ত্রনের বলয়ে আবদ্ধ। সেই অপ্রতুলতার যুগে মানুষ শুদ্ধ চিন্তায় সমাজ গঠনে তার পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। মনুষ্য মুল্যবোধের শিখরে থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র তার চাহিদার তুল্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। রাজনীতি ও গনতন্ত্র তার বিশুদ্ধ আচরনের মুলমন্ত্রে আরাধ্য আধার হয়ে মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্রকে স্বপ্নবাজ করে তুলেছে। নিয়মের সামান্য ত্রুটি হলেই সামাজিক হৈ চৈ এর ফেরে তা স্বাভাবিকে ফিরে এসেছে। মানুষের প্রতি ভালবাসা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার নৈতিকতায় সমাজবদ্ধ মানুষ রাজনীতির শেকড়ে সামিল হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। রাজনীতির স্বচ্ছ্বতা, সহমর্মিতা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূলুবোধের বিশুদ্ধ চর্চায়  সমাজ তথা রাষ্ট্রে শান্তি ও স্বস্তির বাতাবরন তৈরী হয়েছে। রাজনীতিবিদদের শুদ্ধাচারনের বাতায়নে ওই উঠানটি ছিল সাধারন মানুষের স্বস্তি ও শান্তির শেষ ঠিকানা। 

 

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বর্ষ পুর্তির দ্বারপ্রান্তে আমরা এখন অবস্থান করছি। পাশাপাশি আমাদের বাঙালী জাতীয়তাবাদের অস্ত্বিত্বের স্থপতির জন্ম শতবর্ষ পালনেও বর্ষভর উদযাপনের নৌকাতেই আমরা ভাসমান। কি সৌভাগ্য আমাদের। জাতীয় অস্ত্বিত্বের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের পাশাপাশি আমরা আমাদের জাতির স্থপতি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী পালন করছি। এই বিরল সম্মানের অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য অন্য কোনো জাতিস্বত্ত্বার ললাটে জুটেছে কিনা তা আমার জানা নেই। 

 

আপন অস্তিত্ত্বের ষোল কোটি এবং শেকড়ের খোঁজে ধাবমান আরো দশ কোটি বাঙালী আজ বিশ্বময় নিজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে গর্বিত এক জাতিস্বত্ত্বা। তবে যেটা বাস্তবতা তা হোল ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপ ভূখন্ডের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ বাঙালীর স্বপ্নের ঠিকানা। এই বাঙালী আজ তাদের জাতির প্রতিষ্ঠাতার জন্ম শতবর্ষ পালনে বর্ষব্যাপী বিভিন্ন আয়োজন ও উদযাপনে উৎসব মুখর দিনাতিপাত করছে। বাংলাদেশের বাঙালী আজ তার স্বাধীন স্বত্ত্বার সুবর্ণ  জয়ন্তী পালনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বাঙালী সেই সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রহর গুনছেন। রাজনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে বাঙালী আজ স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বিশ্ব দরবারে বাঙালী এখন স্বাধীন জাতিস্বত্ত্বার এক গর্বিত জাতি। 

আমাদের জাতিস্বত্ত্বার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের ফালনামা খুললে যে কথাটি প্রথমেই আসে তা হোল রাষ্ট্র পরিচালনার ধাপগুলির পোষ্টমার্টেম করা। তবে প্রকৃত পোষ্টমর্টেম বলতে যা বুঝায় তার জন্য বিস্তর সময় ও জায়গার প্রয়োজন। সে অবকাশ এখানে নেই বললে ভুল হবে না। তাই সাদামাটা আলোচনায় যেটা বলা প্রয়োজন তা হোল – বাংলাদেশের এই পঞ্চাশ বছরের রাষ্ট্রব্যবস্থায় মোটা দাগে চারটি অধ্যায়ের শাসন ব্যবস্থায় দেশ পরিচালিত হয়েছে। ১। একাত্তর হতে পঁচাত্তর ২। পঁচাত্তর হতে একানব্বই ৩। একানব্বই হতে দু'হাজার আট ৪। দু'হাজার আট হতে অদ্যাবধি। মোটামুটি এই চারটি অধ্যায়ের শাসন কাঠামোয় আমাদের বাঙালী জাতির রাষ্ট্র কাঠামোর বিকাশ ঘটেছে। ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের ভিন্নতায় দেশ পরিচালিত হয়েছে। তবে এর মধ্যবর্তী সময়কালে স্বল্প মেয়াদী আরও দু চারটি শাসন ব্যবস্থায় দেশ পরিচালিত হয়েছে যাদেরকে নিয়ে বেশী কালি খরচ করার আবশ্যিকতা আছে বলে মনে হয় না। 


দেশ পরিচালনার প্রথম অধ্যায় অর্থাৎ ঊনিশ'শ একাত্তর হতে ঊনিশ'শ পঁচাত্তরে আমরা পেয়েছি দেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বিশুদ্ধ রাজনীতির শাসন ব্যবস্থা। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠনের ওই সামান্য কয়েকটি বছরে মহান নেতার কারিশ্ম্যাটিক নেতৃত্বে দেশ বিশ্বব্যাপী বিপুল সম্মান ও গৌরবের আসনে তার অবস্থানকে পোক্ত করার প্রয়াস পেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগা জাতি হিসাবে বাঙালী শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর ঊষালগ্নে তাদের জাতির মহান নেতাকে হারিয়ে এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করলো। জাতির পিতার ওই নির্মম প্রস্থানে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হোল। পঁচাত্তরের পনেরো আগষ্টের ওই নির্মম হত্যাকান্ডের পরের তিন-চারটি মাস বাঙালী জাতিকে ধোয়াশায় ভরা এক রাষ্ট্র কাঠামোয় অশান্তি ও অস্বস্তির মধ্যে কাটাতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর শাসন কালের ওই স্বল্প সময়ে প্রথমবারের মত স্বপ্নের কাংখিত গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার আপন উঠানে বাঙালী বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার স্বাদ গ্রহন করেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার আঙ্গিনায় বাঙালী তার আপন অস্তিত্ত্বের বলয়ে স্বচ্ছন্দ হয়েছে। জাতির জনককে রাষ্ট্রনেতার পাশাপাশি সরকার প্রধান হিসাবে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। প্রিয় নেতার বিশ্বব্যাপী সম্মানে জাতি হিসাবে বাঙালী সম্মানিত হয়েছে। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে সেই অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধুকে সাহায্যের ঝুলি নিয়ে দেশ হতে দেশান্তরে ছুটে বেড়াতে হয়েছে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শে বলীয়ান হয়ে দেশ যখন এগোনোর পথে পা বাড়াচ্ছিল ঠিক তখনই নেমে এল অনামিশার কাল অন্ধকার। লুকিয়ে থাকা পরাজিত শক্তির প্ররোচনায় বিপথগামী সামরিক বাহিনীর একদল অফিসার জাতির স্থপতিকে ঊনিশ'শ পঁচাত্তরের পনেরোয় আগষ্ট সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করলো। বাঙালী সে সময় হতচকিত হয়ে নির্বাক হয়ে গেল। দুর্ভাগা জাতি শুধু অসহায়ের মত সেদিন ক্ষমতাসীনদের নির্লজ্জ ক্ষমতা ভাগাভাগির মচ্ছব অবলোকন করলো।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের পনেরোটি বছর আমাদেরকে মিলিটারি অটোক্র‍্যাসি, ব্যুরাক্রাসি ও ডেমোক্রাসিতে কাটাতে হলেও এর প্রথম পর্বের ছয়টি বছর আমরা সেই মহান সেনাপতিকে পেয়েছিলাম যার অকুতোভয় নেতৃত্বের স্ফুরনে একাত্তরের দিশেহারা বাঙালী বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত স্বাধীনতা ঘোষনার ডাকটি প্রথম শুনেছিলেন। সেদিনের সেই পোষাকী সিপাহীর ঘোষনা পাঠের ডাক শুনে বাঙালী তাদের সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে একাট্টা হয়ে দেশ মাতৃকার মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেনা শাসনের এই ছয় বছরে বাঙালী তার আপন অস্তিত্বের শেকড়ের পথে এগোচ্ছিল ঠিকই কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বাঙালী তার পিতার আশীর্বাদপুষ্ট অকুতোভয় সৈনিককে হারালো নির্মম হত্যাকান্ডের তান্ডবে। যদিও পক্ষ বিপক্ষের বাহাসে ঘোষনা পাঠের সেই সেনাপতিকে আজ বিষবর্ষে বিদ্ধ করে হেয় করা হচ্ছে প্রতি নিয়ত। তবে সেনাপতির গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সেই পাঁচ ছয় বছরের সময়টুকুতে বাঙালী একটি মানসিক তৃপ্তির বাঙালীয়ার ক্ষেত্র তৈরীতে এগিয়ে যাচ্ছিল বলেই তখনকার চালচিত্র সাক্ষ্য দেয়। সেক্ষেত্রে বাঙালী একটি বিষয়ে গর্বিত ও তৃপ্ত ছিল এই কারনে যে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে দেশ শাসনের দন্ডটি রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় পর্বে যে বিতর্কিত সেনাপতির যাঁতাকলে বাঙালীকে নিষ্পেষিত হতে হয়েছে তা বড়ই মর্মান্তিক। পাকিস্থান ফেরত ও তাদের প্রেতাত্মার প্রতিভূ এই সেনা নায়কের শাসনকালে দেশ ততদিনে মোটামুটি মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা স্বাস্থ্য শিল্প ও দেশ পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে শৈর শাসনের যাঁতাকলে বাঙালীর বাঙালীয়ানা তখন এক জটিল অবস্থানে চলে গিয়েছিল। যে বাঙালী, ধর্মের বেড়াজাল ভেঙ্গে লক্ষ প্রানের বিনিময়ে সর্ব ধর্মের বাঙালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করলো সেই বাঙালীয়ানার শেকড় ধরে টান দিল এই জেনারেল। পাকিস্থানী প্রেস্ক্রিপশনে তিনি ইসলাম ধর্মকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র ধর্মের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা দিলেন। বাঙালী অবাক বিস্ময়ে তা হজম করলো। কিন্তু ঘোষনা পাঠের সেই অকুতোভয় সৈনিকের বিধবা জায়া ও মহান স্থপতির সুযোগ্য কন্যার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বে দেশের জনগন ও ছাত্র জনতার যৌথ আন্দোলনে রাজনীতির মূলধারায় ফিরে আসতে বাঙালী বেশী সময় নেয় নি। ফলে জেনারেলদের ইসলামী ভাবধারার আলোকে প্রতিস্থাপিত গনতন্ত্র হতে বাঙালী নিজ উঠানে ফেরত এসেছে তার আপন মহিমায়। 

দেশে গনতন্ত্রের পতাকা উত্তোলিত হোল ঠিকই কিন্তু জায়া ও আত্মজার নেতৃত্বের ফাঁক গলে এক তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটলো বাংলার রাজনীতির উঠানে। অনেকে বলেন জেনারেলদের অতি ইসলামী ভাবধারার কারনে এর উদ্ভব হয়েছে। ততদিনে পাকিস্থানী পরাজিত প্রেতাত্মার উত্তরাধিকারী 'জামাতে ইসলামী' রাজনৌতিক দলের মর্যাদা নিয়ে বাংলার রাজনীতির উঠানে একটি পক্ষ হয়ে নিজেদের পায়ের মাটি শক্ত করে ফেলেছে। তবে বিষয়টি অন্যভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাঙালী ধর্মভীরু জাতি এবং যে ধর্মীয় জোশে স্বাধীন স্বত্ত্বায় যাদের পথচলা শুরু সেই ধর্মীয় নেতারা তো ওৎ পেতে থাকতেই পারেন। কিন্তু তৎসময়ের সামরিক শাসক ও পরবর্তী ওই শাসনের উত্তরসুরীরাও কমবেশী দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিকভাবে তাদের অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছিলেন বলেই হয়তো ধর্মের উপর ভর করে রাজনীতির পুনঃ গোড়াপত্তনে এই জাতি ধর্ম্ নির্বিশেষের ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে তারা মাথা তুলতে পেরেছিল। যাহোক ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে প্রতিষ্ঠিত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরবর্তী পনের বছর অর্থাৎ ১৯৯১-২০০৬ পর্যন্ত দেশ একটি গনতান্ত্রিক ভাঙ্গাগড়ার উঠানে তার গনতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিরাজ করেছিল। তবে ততদিনে ধর্মীয় গোঁড়ামীর রাজনীতির মুখপেক্ষী হয়ে রাজনীতির দৈউলিয়াত্ব আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও চেতনা বিরোধী দুটি শ্লোগান বাংলার রাজনীতির আঙ্গিনায় তখন প্রতিষ্ঠিত সত্য হয়ে প্রতিষ্ঠা পায়। সন্দেহ ও অবিশ্বাস এবং পারস্পরিক ঘৃনাবোধের ফলে রাজনীতির উঠান জর্জরিত হয়ে উঠে। অর্থাৎ সে সময় পক্ষ বিপক্ষের ঠুনকো অজুহাতে রাজনীতির ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা বাংলার উঠানকে বিষাক্ত করে তুলে। পাশাপাশি গনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতারোহনের পর দুটি পক্ষের দুইজন উত্তরাধিকারী প্রচন্ড পরাক্রমশালী আচরনে বাংলা শাসনে ব্রতী হন। ফলে ভিন্নমত বিকাশের ও প্রকাশের রাজনৈতিক রাজপথ আস্তেধীরে গলিপথের সওয়ারী হয়ে ধুকতে থাকে। গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার এই পনের বছরে বাংলার রাজনৈতিক আচরনে মাসলম্যান দাদাগিরির সুত্রপাত ঘটে। রাজনীতির প্রথম পাঠের সহজ উচ্চারন থেকে রানীতিবিদরা যোজন যোজন দূরে অবস্থান ক'রে রাজনীতিক থেকে ব্যবসায়ী হওয়ার প্রতিযোগিতায় সামিল হন। 

সুবর্ণ জয়ন্তীর স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামোর এই বাংলায় এখন আমরা চতুর্থ অধ্যায়ের সওয়ারী। অর্থৎ ২০০৮ হতে শুরু হওয়া একপক্ষীয় গণতান্ত্রিক (?) শাসনের দেশে এখন আমাদের বসবাস। মধ্যের ২০০৬-২০০৮ পর্যন্ত কেয়ার টেকার নামক মিলিটারি ও সিভিল ব্যুরাক্রাসির এক অদ্ভুতুড়ে সরকারের নিষ্পেষনে বাংলার উঠান ততদিনে তামাটে রঙ ধারন করেছে। তারই পরবর্তী সংস্করনে আমরা এখন একপক্ষীয় গনতান্ত্রিক (?) শাসন ব্যবস্থায় অসহায় পঁচা প্যাঁক ওয়ালা পুকুরের ভাসমান মাছের মত খাবি খাচ্ছি। গনতান্ত্রিক মুল্যবোধের ন্যুনতম অবস্থানে দেশ পরিচালিত হচ্ছে বলে ভাববার কোন অবকাশ আছে কি? দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নের সাত কাহনে বাঙালী এখন আত্ম তৃপ্তিতে গদগদ। চারিদিকে আকাশচুম্বি ইমারত। ইট পাথরের দালান কোঠায় সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ এখন নগরায়নের দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। বড় বড় প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার নয়ছয়ে দেশে তুলকালাম ঘটনা ঘটছে। এক তরফা শাসনের জবাবদিহি হীনতায় অর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড়বাবু ও বেনিয়া রাজনীতির হোমড়া চোমড়াদের যৌথ প্রযোজনায় দেশের টাকা ও সম্পদ বিদেশে পাচারের মচ্ছব প্রকাশ্যে শুরু হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি কোন্ পথে যাচ্ছে তার আঁচ জনগন আপাত টের না পেলেও যারা এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন তারা ঠিকই তা ঠাহর করতে পারছেন।

আমরা এখন আমাদের স্বাধীন স্বত্ত্বার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছি। এই অর্ধ শতাব্দীর সময়কালে বাংলার বুনিয়াদ বিনির্মানের যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা ধরে রাখার পবিত্র দায়িত্ব আমাদের সকলের। রাজনীতির আচার আচরন পরিশুদ্ধ করে আমাদের উঠান আমাদেরকেই পরিস্কার করতে হবে। বাঙালী তার পিতার আদর্শের সোনার বাংলা বিনির্মান কল্পে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুক এটাই সবার কামনা হওয়া উচিত। স্বপক্ষ বিপক্ষের ঠুনকো অজুহাতে বাংলার অর্জনকে ছোট করার প্রয়াসে যারা গলদঘর্ম হচ্ছেন তারাও জানেন এটা বাঙালীর এগিয়ে যাওয়ার সরল পথ নয়। তাছাড়া উত্তরাধিকারের আত্মতৃপ্তির বলয়ে বুঁদ না থেকে পিতার আদর্শে দেশ গড়ার শপথে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই হোক সুবর্ন জয়ন্তী উদযাপনের প্রথম উচ্চারন। 

আমরা আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি পাকিস্থানী একনায়কতন্ত্রের চাকচিক্য ভাবধারার সেই সময়কার দুর্দমনীয় শাসন ব্যবস্থার আদল। সেই শাসনের উপরি চাকচিক্যের জৌলুষে সাধারন মানুষকে বুঁদ রেখে পাকিস্থান শাসিত হয়েছিল যা দেশের তৃনমূল পুনর্গঠনে কোন অবদান রাখেনি। ফলশ্রতিতে আজকের দিনে আমরা এক অসহায় ও দারিদ্রের দিকে ধাবমান পাকিস্থানকে দেখতে পাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে সেই শংকায় শংকিত নয় তো? 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2